শিশুপুত্র এরিককে নিয়ে হঠাত্ আলোচনায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাত বছর রাজধানীর একটি স্কুলে এরিককে পড়িয়ে ওই স্কুলের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তিনি।
শুধু অভিযোগ নয়, লিগ্যাল নোটিস দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিচারের মুখোমুখি করার হুমকিও দিয়েছেন। দীর্ঘ সাতবছর পড়াশোনা না করানোর অভিযোগ এনে নিজ ছেলেকে এই বছর স্কুলটি থেকে ছাড়িয়ে অন্য একটি স্কুলে ভর্তি করান সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে চুপিসারে কয়েক সাংবাদিককে ডেকে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি নিউজটি ভালোভাবে গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ জানান; কিন্তু দীর্ঘ সাতবছর পর হঠাৎ করে কী কারণে এরশাদ স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন অভিভাবক হিসেবে যেখানে প্রতিদিন, অন্তত প্রতি মাসে খোঁজ রাখার কথা সেখানে তিনি সাত বছর পর ছেলের খবর নিলেন।
এরশাদের এই অভিযোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট দাবি করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারা পাল্টা জবাব দিয়ে এরশাদের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন। জানা গেছে, আলোচিত বিদ্যালয়টির নাম অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এটি রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত। গুলশানে তাদের একাধিক শাখা রয়েছে। সাত বছর আগে এইচএম এরশাদ তার শিশুপুত্র এরিককে গুলশান-২ শাখায় ভর্তি করেন। শিশু প্রতিবন্ধী হিসেবে সাত বছর আগ থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ পাঠদানসহ তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেন।
এইভাবে সে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পার করে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে এরিক অস্টম শ্রেণিতে ওঠে। এরিকের জন্য এক বছরের আগাম ফির টাকাও জমা দেন এরশাদ; কিন্তু হঠাত্ করে গত মাসে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। তার ছেলেকে সেখান থেকে নিয়ে এসে প্রয়াস নামের অন্য একটি স্কুলে এনে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করেন।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার তিনি অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘এরিককে নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। রাজধানীর গুলশানে অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল-ঢাকায় এরিক সাত বছর ধরে পড়াশোনা করছে। চলতি বছর সে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে; কিন্তু বাংলা বর্ণমালা অ, আ কিংবা ক, খ কিছুই লিখতে পারে না এরিক। তাছাড়া কম্পিউটার, বিজ্ঞান, গান কিংবা অঙ্ক কোনো বিষয়ে পাঠদান করানো হয়নি তাকে। এ কারণে তাকে এই স্কুল থেকে এনে প্রয়াস স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়েছি।
স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এরশাদের অভিযোগ— রাজনীতির কারণে তিনি ছেলের খবর নিতে পারেননি। ছেলের এ অবস্থার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে তিনি দায়ী করে বলেন, তারা সাত বছরে এরিককে শুধু ইংরেজি ও অঙ্ক শিখিয়েছে। তাও সংক্ষিপ্ত আকারে, যা শেখানো হয়েছে তা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সমপর্যায়ের। তার হোম ওয়ার্কের খাতা বাসায় পাঠানো হতো না। এমনকি এ বিষয়ে কোনো তথ্যও অভিভাবককে জানানো হয়নি। বরং সাত বছরে এরিকের শিক্ষাদানের নামে স্কুল কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকা তার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এরশাদ। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিনি লিগ্যাল নোটিস পাঠাবেন বলে জানান তার উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত আবু খায়ের মোহাম্মদ দৈনিক বর্তমানকে বলেন, ‘এইচএম এরশাদের ছেলে এরিক প্রতিবন্ধী। তার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নেয়া হয়। এভাবেই এরিক সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত একনাগাড়ে এই স্কুলে পড়াশোনা করেছে; কিন্তু কোনো সময় তিনি পড়াশোনার ব্যাপারে অভিযোগ দেননি। দীর্ঘ সাতবছর পর হঠাত্ করে তিনি কেন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেন বোধগম্য নয়। ছেলের পড়াশোনার বিষয়ে সাত বছর পর খবর নিচ্ছেন, তিনি কেমন অভিভাবক— এই প্রশ্নও করেন স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান।
মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়সহ অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাখাওয়াত বলেন, এরশাদের অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। স্কুলের নিয়ম বহির্ভূত কোনো টাকা তার কাছ থেকে নেয়া হয়নি। এরিককে পড়াবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তার আগাম একবছরের টাকাও দিয়ে দিয়েছি। ছেলের অসামর্থ্যের বিষয়টি ঢাকতে এরশাদ স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
খুব শিগগিরই এরশাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ। এরশাদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।