DMCA.com Protection Status
title="৭

মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁঃ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আবারও বৃদ্ধি চূড়ান্ত

1413604663বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আরেক দফা বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরইমধ্যে দুটি সংস্থাই দাম বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।

 

এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গত সপ্তাহে বিইআরসির কাছে জমা দিয়েছে পিডিবি। সংস্থাটি আগামী জানুয়ারি থেকে প্রস্তাবিত মূল্য কার্যকর করার আবেদন করেছে। গত মঙ্গলবার পিডিবির এ প্রস্তাব কমিশনে জমা হয়েছে বলে বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে। শীঘ্রই কমিশন বৈঠক করে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করবে। পিডিবির বিদ্যুতের ও পেট্রোবাংলার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই গণশুনানির মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বলে বিইআরসি সূত্র বলছে।



পেট্রোবাংলা আগামী সপ্তাহেই এ প্রস্তাব জমা দেবে। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি বিভিন্ন গ্রাহক পর্যায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে এই প্রস্তাব করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ইতিমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় তা পেট্রোবাংলার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। 



এ বিষয়ে বিইআরসির  চেয়ারম্যান এআর খান বলেন, পিডিবি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা দিয়েছে। তবে আমি এখনও বিস্তারিতভাবে দেখিনি। এটা বিচার-বিশ্লেষণ করে পরে জানানো হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কোনো প্রস্তাব বিইআরসি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য এখনও কেউ কোনো প্রস্তাব করেনি। 



গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।



পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যদি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা না হয়, তবে চলতি বছরে পিডিবির ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আর যদি প্রস্তাব অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়, তবে ভর্তুকির পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে বলে সংস্থাটি আশা করছে। পিডিবির প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বৃদ্ধি হলে ইউনিটপ্রতি ৪ দশমিক ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৫১ টাকা হবে।

বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উত্পাদন খরচ পড়ছে ৬ টাকা ৫৪ পয়সা। আর পাইকারি বিক্রি হচ্ছে, ৪ দশকি ৭০ টাকায়। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ১ দশমিক ৮৪ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেছে পিডিবি। অতীতে দেখা গেছে, পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গেই গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কমিশন বিতরণ কোম্পানিগুলোর পৃথক প্রস্তাব নিতে থাকেন। অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে একই সঙ্গে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর অনেক নজির রয়েছে।



প্রসঙ্গত, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ মার্চ গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিট প্রতি ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে বিইআরসি। বর্তমান সরকার (২০০৯ থেকে) গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার আর পাইকারি দাম ৬ দফায় বৃদ্ধি করে।

অন্যদিকে সব ধরনের গ্যাসের দাম আবারও বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে আবাসিক খাতের গ্যাসের দাম। আবাসিক খাতে দুই চুলার ক্ষেত্রে দাম বাড়বে সর্বোচ্চ ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও  পেট্রোবাংলার সূত্র এই তথ্য জানায়।  সূত্র জানায়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম রেগুলেটরি কমিশন বাড়ানোর ঘোষণা দেবে না। এটা সরকার নির্বাহী আদেশে বাড়াবে। এ জন্য কেবল কমিশনের মতামত নেবে। তবে তা আগে জানানো হবে না।



সূত্র জানায়, প্রস্তাব অনুযায়ী, আবাসিক খাতে দুই চুলার গ্যাসের জন্য বর্তমান দাম ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হচ্ছে। বৃদ্ধির হার ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর এক চুলার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ার হার ১১২ দশমিক ৫০ শূন্য শতাংশ।



আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যারা মিটার ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম বর্তমানে ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে এটা ২৩৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আবাসিক খাতের পরেই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে ক্যাপটিভ বিদ্যুত্  (বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য মালিকদের নিজস্ব উত্পাদিত) উত্পাদনে। বর্তমানে এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে তা ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।



শিল্পে বর্তমানে প্রতি এক হাজার ঘনফুটের দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা  বেড়ে হচ্ছে ২২০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ২৬৮ টাকা ৯ পয়সা, এটা হচ্ছে ৩৫০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩০ দশমিক ১৬ শতাংশ।



সিএনজি খাতে গ্যাসের দাম এখন ৬৫১ টাকা ২৯ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ৯০৫ টাকা ৯২ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ। চা-বাগানে ব্যবহূত গ্যাসের বর্তমান দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা করা হচ্ছে ২০০ টাকা। বৃদ্ধির হার ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিদ্যুত্ উত্পাদনে যে গ্যাস দেয়া হয় বর্তমানে সে রকম প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা। এটা হচ্ছে ৮৪ টাকা, বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। সার উত্পাদনে বর্তমানে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭২ দশমিক ৯২ টাকা। এটা বৃদ্ধি পেয়ে  হবে ৮০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।



জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, এবারই প্রথম দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্পদ হিসেবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা ধার্য করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছেন। এর ফলে বাপেক্সসহ বিভিন্ন গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি যে গ্যাস উত্তোলন করে, তার ওপর এই দাম ধার্য হবে। এখন পর্যন্ত উত্তোলনকারী কোম্পানিকে উত্তোলিত গ্যাসের জন্য  কোনো দাম দিতে হয় না। এই অর্থ রাষ্ট্র পাবে।



উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে সরকার সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল। আর গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের ১ আগস্ট। সরকার গত মেয়াদে সিএনজির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম দুদফা বাড়িয়েছিল। ওই সময়ে সিএনজির (সঙ্কুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) দাম দ্বিগুণ করে সরকার। ২০১০ সালের ৪ মে প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসে ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে। এরপর একই সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আবার ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করে গ্যাসের দাম। বাসাবাড়িতে দুই চুলা সাড়ে ৪০০ টাকা এবং এক চুলা ৪০০ টাকা অনেক আগেই নির্ধারণ করা ছিল।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!