দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ অপেক্ষমান একাধিক মামলার রায় ঘোষণা, প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করে বিচারাধীন ও তদন্তাধীন মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করা, ট্রাইব্যুনালে নতুন নতুন মামলা পাঠানো, আইন সংশোধন করে দলবদ্ধভাবে জামায়াত ও সহযোগীদেরকে বিচারের মুখোমুখি করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ছাড়া পাওয়া ১১ হাজার দালালের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ এগিয়ে রাখতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। অন্য মামলার তদন্তের সময় পাওয়া যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা প্রমাণপত্রও। সেগুলোও সংরক্ষণ করছেন তদন্ত সংস্থা। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
ফলে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচাঞ্চল্য বাড়ছে তিন-চার দিনের মধ্যেই। সব মিলিয়ে চলতি সপ্তাহ থেকে সকলের দৃষ্টি ফের ট্রাইব্যুনালের দিকে নিবদ্ধ হতে যাচ্ছে।চলতি সপ্তাহ থেকেই এসব কর্মতৎপরতা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মামলার সংখ্যা বাড়ানোসহ ট্রাইব্যুনালকে পুরোপুরি সচল রাখার অঙ্গীকার করে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাও বলছেন, তারা এজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
গঠনের পর গত চার বছর আট মাসে দুই ট্রাইব্যুনাল ৯ মামলায় ১০ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন। দুই ট্রাইব্যুনালে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয় আরও ৬ অভিযুক্তের মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি)। একজন অভিযুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে তার মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বিচার চলছে আরও দু’জনের। গ্রেফতারকৃত ও পলাতক চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়ে বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা ৫ জনসহ আরও ৪৮ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে ১৮ মামলার তদন্ত চলছে।
সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করেছেন তদন্ত সংস্থা। প্রসিকিউশন এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দেবেন।
সব মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন অথবা হতে যাচ্ছেন মোট ৭১ থেকে ৭৩ জন ব্যক্তি এবং দলগতভাবে জামায়াত।
ট্রাইব্যুনাল-আপিল বিভাগের রায়
আইন অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারেন আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ। এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত ৯টি রায়ের মধ্যে ৭টির বিষয়ে আপিল হয়েছিল আপিল বিভাগে। এর মধ্যে ৩টির আপিল শুনানি শেষ হলেও দু’টির চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে, একটির রায় অপেক্ষমান। একজন যুদ্ধাপরাধী দণ্ডভোগরত অবস্থায় মারা যাওয়ায় তার আপিল অকার্যকর হয়ে গেছে। অন্য তিনটির শুনানি শুরুর অপেক্ষায়।
আপিল বিভাগ ঘোষিত দু’টি চূড়ান্ত রায়েই ট্রাইব্যুনালের রায়ের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে। পরে আপিল বিভাগের রায়ে সাজা বেড়ে আব্দুল কাদের মোল্লা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তা কার্যকর হয়েছে। পক্ষান্তরে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলেও আপিল বিভাগ তা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায় অপেক্ষমান রেখেছেন আপিল বিভাগ।
সাবেক মন্ত্রী বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে। তিনি আপিল করলেও আপিল শুনানি শুরুর আগেই দণ্ড ভোগরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় তার আপিল অকার্যকর ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়ায় তারা তিনজনও খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে গোলাম আযমের ফাঁসির আরজির পাশাপাশি জামায়াত নিষিদ্ধেরও আবেদন করেছেন। সাকা-মুজাহিদের সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার প্রেক্ষিতে আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।
বাকি দুই মামলায় ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ জন হচ্ছেন দুই জামায়াত নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার। তারা তিনজনই পলাতক থাকায় আপিল করেননি।
অন্যদিকে বিচার চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে অভিযুক্ত জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলমান জামায়াতের এক নেতা ও জাতীয় পার্টির সাবেক এক নেতার। তাদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহানের বিচার একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২ নভেম্বর থেকে মামলার সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরুর দিন ধার্য থাকায় আগামী মাসেই বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রসিকিউশন।
অন্যদিকে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের মামলার। এ মামলা শেষ হতে দু’এক মাস লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একাধিক মামলার রায় শিগগিরই
দুই ট্রাইব্যুনালে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়ে ৬ অভিযুক্তের মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রয়েছে। অভিযুক্তরা হচ্ছেন- জামায়াতের আমির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া মতিউর রহমান নিজামী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ও কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলী, জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা জামায়াতের সাবেক রোকন মোবারক হোসেন এবং ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার।
এর মধ্যে মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা করা হতে পারে। আরও দু’একটি মামলার রায়ও এ মাসের মধ্যে পাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, এ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আগামী মাসের মধ্যে অপেক্ষমান থাকা রায়গুলো পাওয়ার আশা করছি। চলমান এবং আগামীতে আসা মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রমে প্রসিকিউশন আরও শক্তভাবে আইনি লড়াই করবেন বলেও জানান তিনি।
নতুন নতুন মামলা আসছে
গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আরও চারজনের বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের বিচার হবে ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি ও অপরজনের বিরুদ্ধে একটিসহ দুই মামলায়। কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলীর মামলা এবং একটি মামলার আসামি বাগেরহাটের সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ ও আকরাম হোসেন খাঁনের মামলার অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানি চলছে বর্তমানে।
এ দুই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া আগামী মাসে শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও ১৮ মামলায় ৪৮ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এর মধ্যে ৯ মামলার একজন করে ৯ আসামি রয়েছেন। তারা হচ্ছেন চট্টগ্রামের রাউজানের বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের গিকা চৌধুরী, যশোরের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, খুলনার মোঃ আমজাদ মিনা, রাজশাহীর মোঃ লাহার আলী শাহ, পটুয়াখালীর রুস্তম আলী সিকদার, মো. ফোরকান মল্লিক, কিশোরগঞ্জের মোঃ নাসির, আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা জামালপুরের আশরাফ হোসেন, নীলফামারীর ইজাহার। নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটু- এ চারজন একটি করে মোট দুই মামলার আসামি।
কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালীতে রয়েছে একটি করে আরও তিন মামলা। চকরিয়ার মামলার ১৯ জন আসামি হচ্ছেন- মুক্তিযুদ্ধকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি এনামুল হক মঞ্জু, জামায়াত নেতা চকরিয়ায় বদর বাহিনীর প্রধান আবু ওমর বদরুল আলম, মাস্টার মোহাম্মদ মুছা, সুজা আকবর, অ্যাডভোকেট শাহ আলম, মৌলভী মাসুক আহমদ, আনোয়ার হোছেন, মাস্টার আজিজুর রহমান, মাস্টার আজিজুল হক ওরফে শামসুল হুদা, আবু ছৈয়দ সওদাগর, মৌলভী সাকের, রফিক আহমদ ওরফে দালাল রফিক, মোহাম্মদ মুছা, নজির আহমদ ওরফে গফ্ফু নজিরা, আকবর আহমদ, শামশু আলম ওরফে লম্বা শামশু, মৌলভী আক্তার কামাল ও আবু বক্কর ওরফে আবু খলিফা। পেকুয়া উপজেলার মামলাটির দুই আসামি হলেন মহসীন হায়দার চৌধুরী ও অধ্যক্ষ তাহের শওকত। মহেশখালী উপজেলার মামলাটির চার আসামির মধ্যে রয়েছেন আসামি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের এক অংশের সাবেক সভাপতি সালামত উল্লাহ খান, মৌলভী জাকারিয়া এবং আরও দু’জন।
আরও চারটি মামলার ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে উল্লেখ করে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বাংলানিউজকে জানান, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে এসব মামলার তদন্ত চলছে। তবে আসামি পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তদন্তের বিষয়গুলো গোপন রাখার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
তদন্তাধীন এসব মামলার মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা তিন মামলার ৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত বা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে একটি মামলার আসামি সাবেক দুই মুসলিম লীগ নেতা নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের আছেন ঢাকার কারাগারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন অন্য একটি মামলায়। ট্রাইব্যুনাল অবশ্য তাদেরকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখানোর আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি পটুয়াখালীর মো. ফোরকান মল্লিক গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনাল দু’টিকে সচল ও গতিশীল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। তদন্তাধীন ৩ মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। ছোটখাটো সংযোজন-বিয়োজন শেষে চলতি মাসের মধ্যেই মামলা তিনটির তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে পাঠাবো। আশা করছি, তদন্ত শেষ হয়ে আগামী দু’মাসের মধ্যে আরও ডজনখানেক নতুন মামলা ট্রাইব্যুনালে দিতে পারবো।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, সুবহানের মামলার মধ্য দিয়ে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের প্রথম পর্যায়ের বিচারিক কার্যক্রম শেষ হতে যাচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের কয়েকটি মামলার বিচারও শুরু হয়েছে। তৃণমূলে নতুন নতুন মামলার তদন্ত চলছে। সেগুলোর বিচারিক কার্যক্রমও শুরু হবে শিগগিরই।
সব মিলিয়ে ট্রাইব্যুনাল আগামী দিনে আরও গতিশীল ও কর্মচঞ্চল থাকবে উল্লেখ করে জেয়াদ আল মালুম বলেন, প্রসিকিউশনও নতুন উদ্যমে আইনি লড়াইয়ে নামবে।
জামায়াতের বিচার শুরু আইন সংশোধন হলেই
রাজনৈতিক দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াত এবং তার সকল সহযোগী সংগঠন ও মুখপত্রের বিচারের আইনি অস্পষ্টাও দূর হচ্ছে শিগগিরই। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের (আইসিটি)’ ১৯৭৩ সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার। যুদ্ধাপরাধে জড়িত সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান করে সংশোধনীর খসড়াটি চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
আগামী ৩ নভেম্বরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশোধনীটি উত্থাপন করা হবে বলে রোববার (১৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি। মন্ত্রিপরিষদ চূড়ান্ত করার পরে সংসদের আগামী অধিবেশনেই এটি পাসের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পর পরই জামায়াতের বিচারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালে মামলার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবেন প্রসিকিউশন।
খসড়া সংশোধনীতে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন ও বিচার করার পর রায় ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে দায়ী করার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিধান রেখে দলবদ্ধ যুদ্ধাপরাধের শাস্তি সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। কোনো সংগঠনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল তা নিষিদ্ধ করে নিজস্ব নাম বা অন্য কোনো নামে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ রকম অন্য কোনো শাস্তির রায় দিতে পারবেন বলে বিধান করায় জামায়াতের বিচার করে অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে নিষিদ্ধ করা হবে বলে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও জামায়াত এবং তাদের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির (সে সময়কার ইসলামী ছাত্রসংঘ) ও ইসলামী ছাত্রীসংস্থা, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর, আলশামসের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর আলোকে তৈরি এ তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াত ও তার সব অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ ও অবলুপ্ত করার আরজি জানানো হয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ করা হয়েছে, জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফালাহ আম ট্রাস্ট, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শতাব্দী প্রেস, ইসলামিক ইকনোমিকস্ ব্যুরো, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, বিপরীত উচ্চারণ, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, ফুলকুঁড়ি, ইসলামিক ইন্সটিটিউট, জামায়াতের প্রকাশনা সংস্থা আধুনিক প্রকাশনী প্রেস, ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি, দারুল ইসলাম ট্রাস্ট, সোনার বাংলা পত্রিকা, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, রাবেতা-ই ইসলাম, ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদসহ আরো নানা সহযোগী প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের বিরুদ্ধেও। ভবিষ্যতেও যেন কেউ এ ধরনের রাজনীতির আলোকে রাজনৈতিক দল গঠন বা রাজনীতি করতে না পারেন সে রায়ও চাওয়া হয়েছে।
একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র এবং এসব অপরাধ ঠেকাতে ব্যর্থতাসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে জামায়াত ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। জামায়াতের নীতিনির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং কেন্দ্র থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এসব অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামায়াত, তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর বাহিনী ও আলশামস বাহিনীর নানা নৃশংস অপরাধ এবং জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের যাবতীয় অপরাধের অভিযোগ তুলে আনা হয়েছে এ তদন্ত প্রতিবেদনে।
অনেক আগেই তদন্তের এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন তদন্ত সংস্থা। এ প্রতিবেদনের আলোকেই আইসিটি আইন সংশোধনের পর পরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বাংলানিউজকে বলেন, আইনটি সংশোধিত হওয়ার পর ফরমাল চার্জ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।
পুনর্গঠন হবে প্রসিকিউশন-তদন্ত সংস্থা
তদন্ত শুরু না হওয়া মামলার সংখ্যা এখনও পাঁচ শতাধিক। দেশের সাতটি বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত মামলা এসেছে পাঁচশ’ ৮৪টি। এসব মামলার আসামির সংখ্যা তিন হাজার দুইশ’ ৩০ জন।
এতো বিরাট সংখ্যক মামলা যাচাই-বাছাই, তদন্ত ও মামলা পরিচালনা এবং দুই ট্রাইব্যুনালকে আরও সক্রিয় ও সচল করতে শিগগিরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আগামী মাসেই এসব পরিবর্তন আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
পদত্যাগ ও অপসারণের পর বর্তমানে প্রসিকিউশনে মাত্র ১৯ জন প্রসিকিউটর এবং তদন্ত সংস্থায় দু’জন সমন্বয়কসহ ১৭ জন তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের পক্ষে এতো অধিক সংখ্যক মামলা পরিচালনা করা অসম্ভব ও কষ্টকর হয়ে পড়ায় পুনর্গঠনের খবরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন উভয় সংস্থাই।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালে অপেক্ষমান মামলাগুলোর রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউশন পুনর্গঠন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অযোগ্য, অদক্ষ ও কর্মহীন দশজন প্রসিকিউটরকে বাদ দিয়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও দায়বদ্ধ নতুন কয়েকজন প্রসিকিউটর নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আরো ৪৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম প্রসিকিউশন পুনর্গঠন আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় বলে উল্লেখ করে নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ পেলে যুদ্ধাপরাধের বিচার আরও গতিশীল হবে বলে মন্তব্য করেছেন।
তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বাংলানিউজকে জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো ৪৯ জন তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেবে। এ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ৪৯ জন কর্মকর্তাকে প্রেষণে নিয়োগের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ৪৯ জন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ১৫ জন ইন্সপেক্টর, ২৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ও ৭ জন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর (এএসআই)। আমরা গত সপ্তাহে আইজিপির সঙ্গে বৈঠক করেছি। আশা করছি, এ মাসেই নতুন তদন্ত কর্মকর্তারা কাজে যোগ দেবেন।
বর্তমানে যারা তদন্ত সংস্থায় আছেন তাদের সঙ্গে এ সমস্ত কর্মকর্তা যোগ দিলে আর তদন্ত কর্মকর্তার ঘাটতি থাকবে না বলে মনে করেন সানাউল হক।
তিনি আরো বলেন, নতুন কর্মকর্তা আসার পর আমরা নতুনভাবে কাজ শুরু করবো। সারাদেশ থেকে যে প্রায় ৬শ’ অভিযোগ এসেছে, তা যাচাই-বাছাই শুরু হবে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক বিবাদী, আসামি মারা গেছেন। কোন অভিযোগগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে অথবা কোন কোন অভিযোগে মামলা হতে পারে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা একটি সঠিক তালিকা তৈরি করবো। তালিকা তৈরির পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন মামলার তদন্ত শুরু হবে।
প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থায় জনবল অপ্রতুলতার বিষয়ে ক্ষোভ ও হতাশার কথা ব্যক্ত করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
ট্রাইব্যুনালে আরো সৎ, দক্ষ, কর্মক্ষম, সক্ষম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধ প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়োগের দাবি জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বাংলানিউজকে বলেন, অদক্ষ, অযোগ্য, অসৎ এবং জামায়াতের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, পুনর্গঠনের খবরে আমরা আশাবাদী। তবে আমরা ২৪ ঘণ্টা ট্রাইব্যুনালের কাজে সময় দেবেন এমন আইনজীবী ও তদন্ত কর্মকর্তাকে দেখতে চাই। বিশেষ এই আইনে বিশেষ আদালতে চলমান যুদ্ধাপরাধের এসব মামলা পরিচালনা, দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তাদেরকে আইনও বুঝতে হবে। সে ধরনের ব্যক্তিরা নিয়োগ পেলে আশা করা যায়, ট্রাইব্যুনালও সচল ও কর্মচঞ্চল হবে।
কাগজপত্র জমছে ১১ হাজার দালাল-১৯৫ পাকিস্তানির বিরুদ্ধে
তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বাংলানিউজকে জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছাড়া পাওয়া ১১ হাজার দালাল এবং পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নতুন করে তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। দু’টি বিষয়ই নির্ভর করছে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপরে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তারা অবশ্যই এগোবেন।
তিনি জানান, অন্য মামলার তদন্তের সময় পাওয়া যাচ্ছে ১১ হাজার দালালের বিরুদ্ধে কাগজপত্র। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো খতিয়ে দেখে রিভিউ করতে হবে। কে কে জীবিত আছেন, কে কে মারা গেছেন- এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিয়ে পুনর্তদন্ত করতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন তারা।
তিনি জানান, পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা প্রমাণপত্রও। সেগুলোও সংরক্ষণ করছেন তদন্ত সংস্থা।
সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে দালাল আইনে দালালদের বিচার হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ জারি করেন। এ আদেশ ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, ১ জুন ও ২৯ আগস্ট তিন দফা সংশোধনের পর চূড়ান্ত হয়। দালাল আইনের অধীনে ৩৭ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারের জন্য সারাদেশে ৭৩টি ট্র্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিভিন্ন আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে ৩০ নভেম্বর দালাল আইনে আটক যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই তাদের জন্য সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সাধারণ ক্ষমায় ৩৭ হাজারের মধ্যে ২৬ হাজার ছাড়া পেয়েছিলেন। ১১ হাজারের বেশি ব্যক্তি আটক ছিলেন। তাদের অনেকে নানা মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্তও হয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এরপর ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি সায়েম ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার দালাল আইন বাতিল করেন। ফলে ওই ১১ হাজার ব্যক্তির পক্ষে আপিল করে জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক আরও বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে অবশ্যই ১১ হাজার দালালের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে।
সানাউল হক আরও জানিয়েছেন, অন্যান্য মামলার তদন্তের সময় পাকিস্তানের ১৯৫ জনের বিরুদ্ধেও প্রমাণপত্র চলে আসছে। সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করছি। ভবিষ্যতে সুযোগ হলে এগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারবো। তারা অন্য দেশের নাগরিক। পূর্ণ রাজনৈতিক সমর্থন ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত লাগবে। আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে রাখছি, যখন প্রয়োজন তখন সেটা লাগানো যাবে। মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার পর এদেশ বাংলাদেশ হয়ে যায়। যে কারণে যিনিই অপরাধ করুন না কেন, তিনি বাংলাদেশের মাটিতেই অপরাধ করেছেন। যে কেউ অপরাধ করুন না কেন, তার বিচার করা যাবে।