DMCA.com Protection Status
title=""

লতীফ সিদ্দিকীঃ যে গল্পের শেষ নেই

1412344171মন্ত্রিসভার সদস্য, দলের সিনিয়র ও জুনিয়র সহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের থোড়াই কেয়ার করতেন সদ্য বহিষ্কার হওয়া বিতর্কিত টিঅ্যান্ডটিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। কথা বলতেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। নানা ধরনের বেফাঁস মন্তব্য করতে তার জুড়ি ছিল না। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিনিয়র সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতেন যখন তখন।

সরকারি কর্মকর্তাদের মারধর ও গালিগালাজ ছিল তার রোজকার অভ্যাস। মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরে টাকার নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অর্থ আর বিত্তের লোভে সব অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। যথেচ্ছ ক্ষমতা খাটিয়ে যখন যা ইচ্ছা তা-ই করেছেন। সরকারি সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে নিজে বিত্তবান হয়েছেন। কিন্তু এত কিছু করেও তিনি ছিলেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে। এই দম্ভ আর বিত্তের কারণেই রাজনীতির ময়দান থেকে পতন ঘটেছে টাঙ্গাইলের ‘সিদ্দিকী’ পরিবারের বড় সন্তান আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর। দম্ভ আর অথের্র দাপট তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকেও। আর তাই দল এবং সরকারে পদ হারানোর পর কাউকে পাশে পাননি এ নেতা। দলের কেউ তার পক্ষে ‘টু’ শব্দটিও করছেন না। সহানুভূতি জানিয়ে কেউ কথাও বলছেন না তার সঙ্গে। নিজে দেশে আসার কথা বললেও প্রতিবেশী দেশে বসে তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। জানিয়েছেন, দেশে ফিরতে না পারলে ভারতেই থাকতে চান তিনি।


গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে একজন ডাকসাইটে সহকর্মীর অপসারণ নিয়ে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ‘টু’ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কথা বলা তো দূরে থাক, নিজেরাও কিছু বলাবলি করেননি। বরং দুজন সিনিয়র মন্ত্রী গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, দম্ভ দেখাতে পছন্দ করতেন লতিফ ভাই। আর বিত্তের অহঙ্কার তাকে পতনের চরম সীমানায় নিয়ে গেছে।

লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে একজন সহকর্মী মন্ত্রী হিসেবে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বলেন, তার মতো মন্ত্রীর বিদায়ে পুরো জাতির পাশাপাশি আমরাও বেজায় খুশি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে নানা বিষয়ে অযাচিত বক্তব্য আর উঠবে না। ও দিকে মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে দায়িত্ব পালনকালে মাঝেমধ্যেই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর কাছে তদবির নিয়ে সিনিয়র নেতারা যেতেন।

এ সময় সিনিয়র নেতারা লতিফ সিদ্দিকীর কথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই জোর গলায় বলে উঠতেন, আমি নেত্রীকে (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ছাড়া কাউকে পরোয়া করি না। আপনি আমাকে কি শেখাতে চান? এ কারণে মন্ত্রিসভা ও দলে তার কেউ বন্ধু নেই। সবাই তাকে এড়িয়ে চলতেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান লতিফ সিদ্দিকী। দায়িত্ব পেয়ে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করতে থাকেন। একের পর এক অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি মিলকারখানা পানির দরে বিক্রি করেন। বিনিময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হন তিনি।

তাই লতিফ সিদ্দিকীর দম্ভোক্তি শুধু বিরোধী মতের লোকদের ক্ষুব্ধ করেছে তা-ই নয়, নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও বিব্রত করেছে। মন্ত্রিসভার এক সিনিয়র সদস্য জানালেন, নানা দোষের পরও লতিফ সিদ্দিকীর একটি গুণ ছিল। তিনি ছিলেন বেজায় ভোজনরসিক।

তার দেয়া টাঙ্গাইলের চমচম বা মিষ্টি খাননি মন্ত্রিসভার এমন সদস্য কমই পাওয়া যাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মিষ্টি, দই ও চিড়া খাইয়ে বেশ কয়েকবার আপ্যায়িত করেছেন। এছাড়া ঈদের আগে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে গলদা চিংড়িসহ নানা স্বাদের খাবার খাইয়েছেন।


লতিফ সিদ্দিকীর দম্ভের কয়েকটি চিত্র:

দম্ভোক্তি দেখানো ছিল লতিফ সিদ্দিকীর ফ্যাশন। বেফাঁস মন্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তার জুড়ি ছিল না। বরাবরই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তীর্যক মন্তব্য ও অশোভন আচরণের মাধ্যমে উঠে এসেছেন আলোচনায়। নিজ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তাদেরও নানা অজুহাতে নাস্তানাবুদ করে বিতকের্র জন্ম দিয়েছেন।

গত মহাজোট সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৩ সালের ১১ই জুন সংসদের বাজেট অধিবেশনে বলেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনী রাজনীতিতে আর অংশ নেবো না। ওই বক্তব্যেই তিনি সবার কাছ থেকে বিদায় নেন। আর কখনও নির্বাচন না করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তার কথা আর কাজে মিল পাওয়া যায়নি। ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি বিনা প্রতিদ্বনি্দ্বতায় এমপি নির্বাচিত এবং সরকারের ডাক, তার, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

২০০৯ সালের ১২ই অক্টোবর সংসদে দাঁড়িয়ে সাবেক স্পিকার ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সমালোচনা করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, স্পিকার হচ্ছেন সংসদের সেবক। তিনি প্রভু নন। আবদুল হামিদকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, প্রতিভা ও প্রগলভতা এক নয়।

২০১২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পাট নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আয়োজকদের কঠোর সমালোচনা করেন তখনকার বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘পাট ও বাংলাদেশের অর্থনীতি: বেশি উত্পাদনের জন্য পাটকলের যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মন্ত্রী এ কাণ্ড ঘটান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে লতিফ সিদ্দিকী তাকে আক্রমণ করে বলেন, উনার দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাংকীয়। আমার অবশ্য অন্যরকম।

তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আদরের পুত্র ইউনূসের আবদার রক্ষা করতে না পারায় পৃথিবীজুড়ে ঝগড়া বাধাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা। আর আমি কি উড়ে এসেছি?

এর কিছু দিন পরই খামারবাড়িতে এক অনুষ্ঠানে কোরআন ও আজানের সমালোচনা করে বিতর্কিত সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আজানের সময় মাইক বন্ধ রাখতে হবে কেন? আর কোন অনুষ্ঠান কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু করতে হবে কেন? কোরআন তিলাওয়াতের সঙ্গে গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটকও পাঠ করতে হবে।

২০১৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ধানাইদহ ও লালপুর উপজেলার দাঁইড়পাড়া এলাকায় নাটোর-পাবনা মহাসড়কে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এক হাতে পিস্তল উঁচিয়ে ও অন্য হাতে দা নিয়ে সড়কে অবরোধকারীদের ফেলে রাখা গাছের ডালপালা কেটে রাস্তা থেকে সরান। তার এই কর্মকাণ্ডটিও ওই সময় ব্যাপক আলোচনায় উঠে আসে।

গত বছর আগস্টে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে মন্তব্য করেছেন তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। আমি যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতাম, তাহলে এত দিনে ড. ইউনূসকে কারাগারে থাকতে হতো। একই বছর ১৬ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শোক দিবসের আলোচনায় লতিফ সিদ্দিকী বিএনপি-জামায়াতের হরতালে দলীয় নেতাকর্মীদের তত্পর না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আর বসে থাকার সময় নেই। আর কেউ হরতাল করলে তাদের বাড়িতে ঢুকে হত্যা করতে হবে। হরতালের সময় রাস্তায় শুধু পুলিশ থাকে। আমাদের নেতাকর্মীরা নেতার হুকুমের অপেক্ষায় বসে থাকে। তিনি বলেন, সব কিছুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ লাগবে কেন? যখন বাড়ি-গাড়ি করেন তখন কোথায় থাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ? আমি বলছি, এটিই আমার শেষ বক্তৃতা।

চলতি বছরের ২৮শে মার্চ টাঙ্গাইলে নিজ বাড়িতে পিডিবির উপ-সহকারী প্রকৌশলী পুনয় চন্দ্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এ ঘটনায় বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় ওঠে।

গত ১৯শে এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে বক্তৃতাকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমার স্বভাব খারাপ, এ জন্য মাঝেমধ্যে একটু লাঠিপেটা করি। সাপকে যদি মারতে হয়, তাহলে লাঠিপেটা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। সাংবাদিকরা আমার বিরুদ্ধে লাগে। এ দেশের ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, ব্যবসায়ী, কথিত সুশীল সমাজের সদস্যরা বেতনভুক ক্রীতদাস।

গত ২৯শে মে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে যুবলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে আমরা কি করবো? নবম জাতীয় সংসদে মোট সাতটি দল ছিল। দশম সংসদেও সাতটি দল আছে। দল তো কমেনি। ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়নি। প্রার্থীবিহীন নির্বাচন হয়েছে।

গত ৩১শে আগস্ট সমপ্রচার নীতিমালা নিয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, সমপ্রচার নীতিমালা নিয়ে যে কথাবার্তা হচ্ছে, তা শুনলে আমি হাসি। আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তিনি পড়েছেন কিনা। তিনি কিন্তু পড়েননি। কেবল নীতিমালা পড়লেই হবে না, টেলিভিশনগুলো যেসব শর্তে লাইসেন্স পেয়েছে, সেগুলোও জানা থাকতে হবে। ওরা কি কি শর্তে দস্তখত করে লাইসেন্স নিয়েছে, সেই শর্তটা একবার বের করে দেখুন। ওই কাবিননামায় দস্তখত করেই কিন্তু লাইসেন্স পেয়েছে।

৪ঠা সেপ্টেম্বর গাজীপুরের হাইটেক পাকের্র উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে পানিতে ভিজিয়ে শাস্তি দেন বারবার বিতর্কিত লতিফ সিদ্দিকী। ওই দিন আইসিটি মন্ত্রী হিসেবে হাইটেক পার্কে প্রবেশের সময় ফোয়ারা অপরিষ্কার দেখে ওই প্রকৌশলীকে ফোয়ারাতে নামিয়ে পানিতে ভিজিয়ে শাস্তি দেন।

গত ২০শে সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কয়েকজন প্রবীণ নেতা সংগঠনকে গতিশীল ও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন। তাদের থামিয়ে দিয়ে সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, সংগঠন-টংগঠন দিয়ে কিছু হবে না নেত্রী। আপনি বেঁচে থাকলে সব ঠিক থাকবে। দল দিয়ে কিছু হয় না। আপনিই আমাদের সব।

এ সময় তিনি উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তারা বিভিন্ন সময় দলের নেতাদের চ্যালেঞ্জ করে বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ান। এটি মেনে নেয়া যায় না। কারণ, তারা এত দিন সাইড লাইনে ছিলেন। নেত্রী পাঁচ বছর পর আবার তাদের মূলস্রোতে নিয়ে এসে মন্ত্রী বানিয়েছেন। তাদের সেটি মনে রাখা উচিত। একই সঙ্গে এ থেকে আমাদের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নেতাদেরও শিক্ষা নিতে হবে।

এর আগে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থার প্রধান তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গেলে লতিফ সিদ্দিকী ওই কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে ‘মালাউন’ ও ‘চাড়াল’ বলে গালি দেন। বলেন, খাও এদেশে আর টাকা পাঠাও ভারতে? সর্বশেষ গত মাসে নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে হজ, তাবলিগ জামাত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে ফেঁসে গেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

সরকার ও দলের সব পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওদিকে সর্বশেষ বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘চিনতে না পারলেও’ গত ১১ই মার্চ ঢাকায় জয়ের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন লতিফ সিদ্দিকী। এ সময় জয়কে নিজের মাস্টার হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে জয় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তা পথপ্রদর্শক হবে। কারণ তিনি যার (শেখ হাসিনা) উপদেষ্টা, তার সৃষ্টি মননশীল।


মন্ত্রিত্বকে পুঁজি করে যত বিত্তের মালিক:

২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী থাকার সময়ে সব ধরনের আইনকানুন, নিয়মনীতি ভঙ্গ করে তিনি সরকারি সম্পত্তি হস্তান্তর করেছেন। আইন বা নীতিমালা মানার ক্ষেত্রে তার বক্তব্য ছিল ‘নীতিমালা বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করো।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি বলেছে, পাঁচ বছরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৪৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে হস্তান্তর বা বিক্রি করেছে। এ সময় দু’টি ছাড়া বাকি সব প্রতিষ্ঠান বিনা দরপত্রে, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, বিনা মূল্যে বা কম মূল্যে বেসরকারিকরণ বা বিক্রি করা হয়। সেই সময়ের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রণীত লতিফ সিদ্দিকীর দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে (২০০৯-১৩) বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিটিএমসি, তাঁত বোর্ড, বিলুপ্ত জুট করপোরেশন (বিজেসি) এবং বিজেএমসির মোট ৪৮টি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ ও হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ঈগল স্টার টেক্সটাইল মিলের ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়। ৩০টি প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ হস্তান্তর করা হয়েছে, ১৭টি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে বিনা দরপত্রে দেয়া হয়েছে ১২টি। এভাবে সম্পত্তি হস্তান্তরের কারণে জনস্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। এছাড়া, এ ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ কমিশন আইন ও নীতিমালাও মানা হয়নি।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৬টি প্রতিষ্ঠান বা ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে করা অনিয়মগুলো হচ্ছে: যথাযথ মূল্য নির্ধারণ না করা, বিনা দরপত্রে হস্তান্তর, কেবল মন্ত্রীর সিদ্ধান্তে বিনা মূল্যে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া, বিক্রির আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন না নেয়া, বিক্রির শর্ত না মানা, আইনি জটিলতা নিরসন না করেই হস্তান্তর ইত্যাদি। এছাড়া ঢাকার চট্টগ্রাম সমিতিকে মতিঝিলে একটি সম্পত্তি দিতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের নোট শিটে তিনি লেখেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে আমি চট্টলা কন্যার পাণি গ্রহণ করেছি। মানবতার সেবায় তাদের সহযোগিতা করার নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে এটা করছি।’ ওই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী। ওদিকে চট্টগ্রামের ঈগল স্টার টেক্সটাইলের কাছে সরকারের পাওনা বিপুল অঙ্কের সুদ একক সিদ্ধান্তে মওকুফ করেন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। এছাড়া কুষ্টিয়ার মোহিনী মিলস লিমিটেড বিক্রি নিয়ে নানা কাহিনীর জন্ম দেন।

গাজীপুরের কালীগঞ্জের মসলিন কটন মিলটি বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের কাছে (বিজিএমসি) ন্যস্ত করা আছে। এরপরও মিলটি বেআইনিভাবে বিক্রি করে দিয়ে গেছেন সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। এছাড়া নেত্রকোনার সাবেক জুট বোর্ড ও বগুড়ার সুরজমহল আগরওয়ালা মিলটি দরপত্র ছাড়াই বিক্রি করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁত বোডের্র নিয়ন্ত্রণাধীন নোয়াখালীর টেক্সটাইল ফ্যাসিলিটিজ সেন্টারের জমি দরপত্র মূল্য অনুযায়ী না নিয়ে অনেক কম মূল্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের ফ্যারিলিন সিল্ক মিলস নীতিমালা ভেঙে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে অবস্থিত নিউ লক্ষ্মী কটন মিলটিও চুক্তি ও নীতিমালাবহির্ভূতভাবে তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এভাবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি টিঅ্যান্ডটি মন্ত্রণালয়েও নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। মালিক হয়েছেন অঢেল বিত্তের। কিন্তু অঢেল বিত্তের মালিক হওয়ার মেশিন অর্থাত্ মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েছেন তিনি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!