DMCA.com Protection Status
title=""

নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩৭

46668_f1নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় যাত্রীবাহী দুটি বাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অন্তত ৩৭ জন। এতে আহত হয়েছে আরো অন্তত ৩৫ জন।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের রেজির মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নাটোর থেকে বড়াইগ্রামগামী অথৈ পরিবহন নামের যাত্রীবাহী বাসের সামনের চাকা ফেটে যাওয়ার পর ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী কেয়া পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

তাৎক্ষণিক পরিচয় পাওয়া নিহতের কয়েকজন হলেন- বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আওয়ামী লীগ নেতা জামাল হোসেন (৪০), তার মেয়ে জান্নাতী (৫), একই উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের আলাল উদ্দিন (৪০), সংগ্রাম পুরের আব্দুর রহমানের স্ত্রী আতিকা বেগম, খোকসা গ্রামের কৃষ্ণ পদ সরকার (৫৫), ইন্দ্রাপাড়া গ্রামের জান মোহাম্মদ (৪৮), গুরুদাসপুর উপজেলার সিধুলী গ্রামের এবাদ আলী (৪৫), শরীফ উদ্দিন (৩০) লাবু, (৩৫), আলাল(৫৫), সোহরাব হোসেন, আয়নাল হক (৩৫), সতের আলী প্রামনিকের দুই ছেলে রব্বেল আলী (৪৫) ও আতাহার আলী (৫০), বৃচাপিলা গ্রামের বাবুল (৪০), আব্দুল আওয়াল (৩০), তেলটুপি গ্রামের আবু সাইদের মেয়ে মোহনা খাতুন (৫) এবং অথৈ পরিবহনের চালক আলম হোসেন (৪০)।

দুর্ঘটনার খবর পেয়েই হাইওয়ে ও বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়।

নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সি শাহাবুদ্দিন দুর্ঘটনা ও হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বনপাড়া মহাসড়ক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফুয়াদ হাসান বাংলামেইলকে জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের রেজির মোড়ে কেয়া পরিবহনের বাসের সঙ্গে অপর অথৈ পরিবহনের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ২০ জনের মতো। পরে আরো ১২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মনিরুজ্জামান বাংলামেইলকে জানান, দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছলে অথৈ পরিবহনের গাড়িটির সামনের চাকা ফেটে যায়। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা কেয়া পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বড়াইগ্রাম এলাকার ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বাংলামেইলকে জানান, ওই পথ দিয়ে তিনি দাওয়াত খেতে যাচ্ছিলেন। ঘটনা দেখার পর সেখানে ছুটে যান। একটি একটি করে ৩৭টি মৃতদেহ ট্রাকে তোলা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, জীবনে এতবড় ভয়াবহ দুর্ঘটনা দেখা হয়নি।

কেয়া গাড়ির পেছনে প্রাইভেটকারে করে আসা বড়াইগ্রামের ব্যবসায়ী মাজেদুল ইসলাম নয়ন বলেন, বিকট শব্দে বাস দুটির সংঘর্ষের পর মহাসড়কের দুই পাশে ছিটকে পড়ে। অপর বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এসময় মহাসড়ক ও আশপাশে হতাহতরা ছিটকে পড়ে। আহতদের আর্তচিৎকারে ও শব্দে শত শত এলাকাবাসী সেখানে ছুটে আসে।

খবর পেয়ে নাটোর, লালপুর ও দয়ারামপুর ফায়ার সার্ভিস ও থানা এবং হাইওয়ে পুলিশ এলাকাবাসীর সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা ৩৭টি লাশের কথা জানালেও বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মনিরুজ্জামান এ পর্যন্ত ২৬টি মৃতদেহ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে ২২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়ার পথে আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পরে।

এদিকে, নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের ওপর একই দিন সকালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে থাকা চিকিৎসকরা প্রশাসনের অনুরোধে তাৎক্ষণিক আহতদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসেন।

ঘটনার পরপরই নাটোর জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান, পুলিশ সুপার বাসদেব বনিক ও বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একরামুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এদিকে, দুর্ঘটনার পর পরই ঢাকা-নাটোর মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশ এলাকা থেকে শত শত লোকজন ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। নিহত ও আহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে বাতাস।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!