বায়তুল মোকাররমের সামনে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিবাদ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ইসলামী আন্দোলনের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সোমবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। পরে তারা কোনো ঘোষণা ছাড়াই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের ভেতরে এসে জড়ো হয়ে মিছিল করে। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। তারা পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক হাফেজ মওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ আহত হয়েছেন।
এদিকে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাক দিয়েছে চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম। এ ছাড়া একই দাবিতে ২২ অক্টোবর সারাদেশে বিক্ষোভ, ১৪ অক্টোবর খুলনায় এবং ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বিভাগীয় মহাসমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে দলটি। সোমবার বিকালে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা যেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণসমাবেশে না যেতে পারে সেজন্য সকাল থেকেই পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এ সময় ইসলামী আন্দোলনের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীমসহ নেতাদের নোয়াখালী টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশের বাধা পেয়ে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করে।
এক পর্যায়ে দুপুরে জোহরের নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট থেকে মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। শুরুতে মিছিলে বাধা না দিলেও এক পর্যায়ে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পুরানা পল্টনে আসতে চাইলে মিছিলে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে বায়তুল মোকাররম এলাকায় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে জোহরের নামাজ আদায় করতে প্রবেশ করা মুসলি্লরা বায়তুল মোকাররম মসজিদে আটকা পড়েন। এ অবস্থা চলতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তবে এর মধ্যে আসরের নামাজ পড়তে তেমন কোনো মুসলি্ল বায়তুল মোকাররম মসজিদে যাননি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আশরাফউজ্জামান বলেন, পূর্ব অনুমতি ছাড়াই ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কে জড়ো হয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এদিকে সমাবেশ করতে না দেয়া ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম। এ সময় তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়া আওয়ামী লীগের আইওয়াশ মাত্র। কারণ ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে বাধা দেয়াই তার প্রমাণ। লতিফ সিদ্দিকী বাংলার জমিনে পা রাখতে পারবে না। তার মৃত্যুদ- দেয়া হবে কিনা সেজন্য গণভোটের আয়োজন করা হোক। তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে কটূক্তিকারীদের মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে আইন পাস করা হোক। সোমবারের সমাবেশে পুলিশি বাধায় তার দলের দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।