একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
গোলাম আযমের পিএস আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাদের জানানো হয়েছে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে গোলাম আযম মারা গেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি চিকিৎসকরা। হাসপাতালে উপস্থিত গোলাম আজমের মসজিদের খাদেম রেজাউল করিমও বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছেন।
তবে কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী বলছেন,‘উনি এখনো মারা যাননি। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা যেহেতু তা কে এখনও মৃত ঘোষণা করেননি সুতরাং তাকে মৃত বলার কোনো সুযোগ নেই।’
এদিকে গোলাম আযমের ভাতিজি জামাই আবু আহমেদ মারুফ বলেন, গোলাম আযম মারা গেছেন। তার ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আজমি তার বেডের পাশে রয়েছেন।
তাহলে চিকিৎসকরা তাকে কেন মৃত ঘোষণা করছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে মারুফ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।’
তিনি নিজে লাশ দেখে এসেছেন বলেও জানিয়েছেন।
এর আগে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সিসিইউতে নেয়া হয় গোলাম আযমকে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
জানা গেছে, পরিবারের লোকজন গোলাম আযমের লাইফ সাপোর্ট খুলে দিতে বলেছেন। তবে হাসপাতালের কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাইফ সাপোর্ট খুলে মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন চিকিৎসকরা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন। ট্রাইবুনালে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের ৬১টি অভিযোগ আনা হয়। যার সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
৬১টি অভিযোগের মধ্যে- মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মোট ৬টি, মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনার অভিযোগ ৩টি, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উসকানি দেয়ার অভিযোগ ২৮টি, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ২৩টি এবং হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে একটি।
প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগে ১০ বছর করে ২০ বছর, তৃতীয় অভিযোগে ২০ বছর, চতুর্থ অভিযোগে ২০ বছর, পঞ্চম অভিযোগে ৩০ বছর কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘তিনি (গোলাম আযম) যে অপরাধ করেছেন, তা মৃত্যুদণ্ডতুল্য। কিন্তু তার বয়স বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।’