নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ৩৬ জনের মৃত্যু এবং ৪৪ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় তিনটি বাসের মালিক, চালক ও তার সহকারীকে দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। প্রদিবেদনে বলা হয়েছে— অথৈ ও কেয়া পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর রাস্তায় পড়ে থাকা আহতদের চাপা দিয়ে যায় হানিফ পরিবহনের একটি বাস। আর এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ে। প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
গত সোমবার বড়াইগ্রামে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী কেয়া পরিবহনের বাসটির সঙ্গে নাটোর শহর থেকে গুরুদাসপুরমুখি অথৈ পরিবহনের বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার দিনই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নাটোর জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগেই তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে।
প্রতিবেদন দেখে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই ঘটনায় প্রকৃত দোষী অথৈ পরিবহন, কেয়া পরিবহন, হানিফ পরিবহনের মালিক, চালক ও হেলপার। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বাসের সংঘর্ষের পর আহত যাত্রীরা যখন রাস্তায় পড়ে ছিলেন, তাদের চাপা দিয়েই হানিফ পরিবহনের একটি বাস দ্রুত গতিতে চলে যায়। এতে হতাহতের সংখ্যা আরো বেড়ে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কেয়া পরিবহনের চালক বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন। সড়কের পরিস্থিতি ও যানবাহনের গতিবিধি না বুঝেই তিনি একটি ট্রাককে ‘ওভারটেক’ করতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে।
১৭ দফা সুপারিশ: ১৭ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে।
যথাযথ কাগজপত্রবিহীন গাড়ি সড়কে চলাচলের বিষয়ে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
গাড়ির মালিককে ড্রাইভার নিয়োগের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। প্রকৃত লাইসেন্সধারী চালকদের নিয়োগ দেয়া (যার দায়িত্ব মালিক সমিতির)।
যোগ্য ও দক্ষ চালক তৈরির জন্য প্রতি জেলায় ড্রাইভিং স্কুল থাকা প্রয়োজন। লাইসেন্সধারী ড্রাইভারদের অধিকতর দক্ষ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে রিফ্রেসার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা।
মহাসড়কের দুই পাশে ও মাঝে রোড মার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা (দায়িত্ব: সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর)। সড়ক-মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, বাঁক, স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন স্থাপনা, বাজার ইত্যাদি স্থানের আগে রিফ্লেক্টিভ ট্রাফিক সঙ্কেত স্থাপন।
দুর্ঘটনার স্থানে যানজট নিরসনে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দ্রুত সরানোর জন্য প্রতিটি জেলায় রেকারের ব্যবস্থা।
পাঠ্যসূচিতে মোটরযান আইন ও নিয়মকানুন বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করা। ড্রাইভারদের গাড়ি চালানোর দৈনিক সময়সীমা নির্ধারণ করা (যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব মালিক সমিতির)।
দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত সেবা প্রদানে জেলা পুলিশ/হাইওয়ে পুলিশকে অ্যাম্বুলেন্স প্রদান, ইত্যাদি।