দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ শনিবার বাদ জোহর সদ্য প্রয়াত জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, শনিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে তার বাবা গোলাম আযমের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
আযমী নিজেই ওই জানাজায় ইমামতি করবেন বলেও জানান।
আব্দুল্লাহিল আমান আল আযমী বলেন, ‘বাবার ওসিয়ত ছিল যে, তার বড় ছেলে আবদুল্লাহিল মামুন আল আযমী যেন তার জানাজায় ইমামতি করেন। সেটি সম্ভব না হলে তার জানাজায় ইমামতি করবেন হয় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী অথবা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। বাবার মরদেহ বাড়িতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে থাকবে, কোনো হাসপাতালে রাখা হবে না। বাসা থেকেই তার মরদেহ জানাজার জন্য বায়তুল মোকাররম মসজিদে নেয়া হবে। জানাজা শেষে যত দ্রুত সম্ভব মগবাজারের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।’
গোলাম আযমের পাবিবারিক সূত্র জানায়, বড় ছেলে আবদুল্লাহিল মামুন আল আযমী জেদ্দায় ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) বড় কর্মকর্তা, সেখানেই তিনি থাকেন। তবে তিনি ব্যাংকের কাজে তুরস্কে আছেন, সেখান থেকে বাংলাদেশে আসা এই মুহূর্তে সম্ভব না।
এর আগে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গোলাম আযমের দাফন ও জানাজার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পারছিলেন না তার পরিবারের সদস্যরা। মূলত, দেশের বাইরে থাকা গোলাম আযমের পাঁচ ছেলের দেশে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে, না কি তারা ফেরার আগেই বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হবে এই বিষয়টাতেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তার স্বজনেররা।
শুক্রবার বিকেলেও আজমি বলেন, এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। দেশে ফেরার বিষয়ে আমার ভাইদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আমরা এখন কী করবো। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেব, আমরা কালকে বাবার দাফন করবো না কি দু’একদিন পর।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে আব্দুল্লাহিল আমান আল আযমী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা মোট ৬ ভাই। এছাড়া আমাদের সন্তান রয়েছে ২০ জন। আমি ছাড়া বাকি ৫ ভাই সপরিবারে বিদেশে থাকেন। তাদের বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ টিকিট কেটে ফেলেছেন এবং বাকিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবাই আসলে পারিবারিকভাবে আলোচনা করেই বাবার দাফনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে এর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এরপর মরদেহ ময়না তদন্ত না করার আবেদন জানিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আযমের পরিবার। তবে তাদের ওই আবেদন ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরে ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার সকালে গোলাম আযমের পরিবারের কাছে তার মরদেহ বুঝিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গোলাম আযমকে গতবছর ৯০ বছরের সাজা দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অবশ্য ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেছিলেন, গোলাম আযমের অপরাধ ছিল মৃত্যুদণ্ডযোগ্য। কিন্তু বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে এই সাজা দেয়া হয়।
বর্তমানে গোলাম আযমের মরদেহ রাজধানীর মগবাজারে তার বাসার গ্যারেজে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি লাশবাহী গাড়িতে রাখা হয়েছে।