DMCA.com Protection Status
title="৭

নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব-দৃষ্টান্ত

images4CAQN18Qবাংলাদেশের ব্যর্থতার নানান দিক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এর উন্নয়ন কিংবা উন্নয়ন সম্ভাবনার পথগুলো আলোচনায় খুব একটা উঠে আসে না। অনেকটা আড়ালে চাপা পড়ে যায় এমন কিছু বিষয় যেগুলোর দিকে নজর দিলে হয়ত তা সত্যিকারভাবেই বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারত বিশ্ববাসীও। এমনই একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের নীরব বিপ্লব।

সারাদেশ জুড়ে এই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের বিপ্লব ঘটে চলেছেও। তবুও এই নিয়ে লেখালেখি হয় না তেমন একটা। এর কারণ সম্ভবত অন্যান্য দেশের সামর্থ্যের তুলনায় বাংলাদেশের দৃষ্টান্তটি খুব একটা ‘উদ্দীপনাকর’ নয়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের বাজার ছোট। বরং সাফল্যের হিসেব করতে গেলেই এই প্রকল্পের সম্ভাবনার বিষয়টি টের পাওয়া যাবে।

জুলাইয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার ঘরে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে ৭৮.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেয় এবং এটা নিয়ে লেখাও হয়। গড়ে প্রতি ঘরে ৫ থেকে ৬ জনকে সদস্য ধরে ২.৬৮৮ মিলিয়ন মানুষের জন্য সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে এই অর্থায়ন করা হয়। কিন্তু এটা আদৌ বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার বিপ্লবের শুরু নয়।

বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াও কিছু প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে সামাজিক সেবার ভিত্তিতে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে চালু করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রামীণ শক্তি। ২০১০ এর শেষ পর্যন্ত গ্রামীণ শক্তি ৫০০,০০০ হোম সোলার পাওয়ার সিস্টেম সৌরবিদ্যুতে সংস্থাপন করেছে। এই বিদ্যুৎ ছিল ২.৯ মিলিয়ন মানুষের জন্য। কিন্তু সে তো এক বছর আগের কথা।

বর্তমানে গ্রামীণ শক্তি, বাংলাদেশভিত্তিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ১.৫ মিলিয়ন ঘরে বা ৮.৪ মিলিয়ন মানুষের জন্য সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে।

১৯৬৬ সালে সৃষ্টির পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু সৌরবিদ্যুতই নয়, এছাড়াও বায়োমাস ও অন্যান্য ক্লিন প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে এই সংস্থা। প্রায় ৩,৬০,০০০ পরিবার বর্তমানে এর জন্য অর্থ দিয়ে এ সেবা কিনছে। এবং গ্রামীণ শক্তির এই সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় উপকৃতদের সংখ্যা ১৫ মিলিয়নেরও বেশি।

শুধু ব্যবহারকারীদের মধ্যেই এই প্রযুক্তি আর সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণের আওতায় রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। তারা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ব্যবসার কাজেও ব্যবহার করতে পারছে এই প্রযুক্তিকে।

প্রতিষ্ঠানটি ঘরে ঘরে সৌরশক্তি পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও, এই সৌরবিদ্যুৎয়ের প্রকল্প বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এবং এর জন্য ৪৫ টি গ্রামীণ প্রযুক্তি কেন্দ্র খুলেছে। এই কেন্দ্রগুলোর কাজ হচ্ছে স্থানীয়ভাবে কিভাবে এই সোলার হোম সিস্টেম(এসএইচএস) তৈরি করা যায় তা শেখানো। সেই সাথে এই কারিগররাও যেন ভবিষ্যতে এক একজন উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠতে পারে সে ব্যবস্থা করা।

সারা বাংলাদেশে প্রতি বছর ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরের প্রয়োজন এবং ব্যবসায়ের কাজে এই হোম সোলার সিস্টেমকে কাজে লাগাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ নিজেই নিজেদের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের সাথে সাথে ব্যবসায়িক মুনাফাও অর্জন করছে।

এই প্রযুক্তি এখন শিশুদের মাঝেও ছড়িয়ে গেছে। গ্রামীণ শক্তি গ্রামের স্কুলের শিশুদের জন্য পুননবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার প্রকল্প চালু করেছে। এর আওতায় কমপক্ষে ৫০০০ স্কুলের শিশুরা এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে।

এছাড়াও গ্রামীণ শক্তি ২৮,৭৬২ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ও ৮১৪,৫৬২ ক্লিন কুকিং স্টোভ বসানোর ব্যবস্থা করেছে। সারা বাংলাদেশে এর ১২৬৮ টি শাখা রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানিও ঘরে ব্যবহার ও ব্যবসায়ের জন্য এই সৌরবিদ্যুৎ বাংলাদেশিদের জন্য এনে দিয়েছে। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় কত সফলভাবে নীরব বিপ্লব চলছে বাংলাদেশে। এর পরও আড়ালেই থেকে যাচ্ছে এই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রটি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!