দেশের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো হুমকি নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার গালফ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। জামায়াত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৬০ বছর বা তারও বেশি সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে উল্লেখ করার মতো রাজনৈতিক জায়গা করে নিতে পারেনি জামায়াত। আমি মনে করি না যে, এখানে তারা কোনোদিন শক্ত অবস্থান করে নিতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ। বর্তমানে উদার শক্তিগুলো দেশ শাসন করছে। বাংলাদেশের অবস্থান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমার সরকার ধর্মভিত্তিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল অবস্থান নিয়েছে। তাদেরকে সমূলে উৎখাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমার সরকার। গত সাড়ে পাঁচ বছরে এ লক্ষ্যে আমরা উল্লেখ করার মতো অর্জন করেছি। তিনি বলেন, দেশে বিবেচ্য মাত্রায় কমেছে জঙ্গিবাদ। এখন বাংলাদেশের সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে উদার শক্তিগুলো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসকে যথেষ্ট ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ এখন প্রায় সন্ত্রাসমুক্ত। পাকিস্তানের তালিবান হুমকি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সে দেশের আভ্যন্তরীণ কোনো ইস্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। ভারতীয় উপমহাদেশের যুবকদের ‘আইএস’-এ যোগ দেয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এখনো কাউকে আইএস-এ যোগ দেয়ার কথা শুনিনি, এ জন্য আমরা গর্বিত।’ তিনি বলেন, আমি মনে করি না যে, আইসিস কারো জন্য বড় কোনো হুমকি। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সম্পদ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর। এ বিষয়টি শেষ হয়ে যেতে সময় প্রয়োজন। আমার দেশ এসব শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আরব দেশগুলোর পাশে রয়েছে। যখনই প্রয়োজন হবে আমরা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবো।
দেশের সুনাম রক্ষায় প্রবাসীদের কাজ করার আহ্বান:
ইরাক ও সিরিয়া ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ইরাক ও সিরিয়ার অখ-তা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। ওই সব দেশে শান্তিপূর্ণ একটি সমাধান দেখতে চায় বাংলাদেশ। সিরিয়া ও ইরাক সংকটে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহায়তা কর্মসূচিতেই শুধু অংশ নেবে তার দেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্য সরবরাহ, আশ্রয়, স্বাস্থ্য সেবা, পয়ঃনিষ্কাশন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনগণকে ক্ষমতায়ন করার মতো মৌলিক বিষয়গুলোতে যদি দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা এক থাকেন তাহলে অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের কোনো শক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। সূত্র: ওয়েবসাইট
আরব আমিরাত থেকে ছালাহউদ্দিন জানান, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বলে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ করে শ্রমিকদের যে সুনাম ছিল তা কিছু লোকের কারণে ম্লান হয়ে গেছে। যার ফলে অন্য সকল প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন ভুক্তভোগী হচ্ছে। তা পুনরুদ্ধারে এবং নিজ দেশের সুনাম রক্ষায় প্রবাসে দেশটির আইন-কানুন-রুল-রেজ্যুলেশন মেনে চলারও আহ্বান জানান তিনি। আরব আমিরাতের আবুধাবীস্থ সেইন্ট রেজিস হোটেলের হলরুমে রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় আবুধাবীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যের কাছে হাত পেতে চলতে হবে না। আজকে বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারবে না। সে আত্মবিশ্বাস নিয়েই এ সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সেবা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪,৫২৬টি ইউনিয়নে আমাদের সরকার তথ্যসেবা কেন্দ্র করে দিয়েছে। আপনারা যারা প্রবাসে আছেন আপনাদের পরিবার-পরিজন গ্রামে রয়েছে। এখনতো মোবাইলের যুগ। অনলাইন ও স্কাইপের মাধ্যমেও তথ্য বিনিময় করতে পারেন। সে সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং আমরা আরো সুযোগ করার ব্যবস্থা করবো। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় সম্পর্ক এনে বলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় একজন কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে ডিজিটাল সম্পর্কে তার ধারণা ছিল না। তার ছেলের কাছ থেকে এ ডিজিটাল শব্দটা পেয়েছেন। তার আইডিয়া থেকে আজ বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ তথ্য প্রবাহে সমৃদ্ধ হচ্ছে। তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে আমাদের অর্জন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে প্রবাসী ভাইদের জন্য মানি এক্সচেঞ্জের সুযোগ করে দেয়া হয়। তথ্য সেবা থেকে এখন আমরা ২শ’ প্রকারের সেবা পাচ্ছি। ১৫ হাজার স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। দেশে জমির পরিমাণ কমে গেছে সত্য, তবে প্রচুর পরিমাণে ধান, গম ও সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। গরিবদের মাঝে বিনা পয়সায় খাদ্য দেয়া হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার পর এবার পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং সে লক্ষ্যে এগিয়েও যাচ্ছি। তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষ যেন দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারে সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে আমাদের সরকার। শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে সরকার। কারণ শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা ব্যাচেলর ডিগ্রী পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। ৭৮ লাখ ৭০ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রী বৃত্তি পাচ্ছে। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। ৩ কোটি ৭৮ লাখ ১২ হাজার ৯শ’ ৬৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে পহেলা জানুয়ারি বই-পুস্তক পৌঁছে দিচ্ছি। শিক্ষা নীতিমালা করেছি। ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ১১ হাজার ৬শ’ ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অর্জন করেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদা পূরণের জন্য ভারত থেকে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনেছি। আরো ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার পথে। তাছাড়া সারাদেশে ৩০ লাখ সোলার তৈরি করা হয়েছে। তাতে আগামী বছরের মধ্যে প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতা দরিদ্র ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা দিয়ে আসছি। আমাদের সামাজিক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও আমরা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। নি¤œবিত্ত থেকে মানুষ এখন মধ্যম আয়ে উঠে আসছে। আজ দেশে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১শ’ ৯০ মার্কিন ডলার। তাছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে রিজার্ভের পরিমাণ ২২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। ব্যবসার সুযোগ করে দিতে এসেছি। তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে প্রবাসীদের নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এখন প্রবাসীদের সিআইপি হিসাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাই প্রবাসীদের দেশে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ ইমরানের সভাপতিত্বে ও দুবাই-বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সিলর ড. তানবীর সিদ্দিকীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন আবুধাবী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আলহাজ ইফতেখার হোসেন বাবুল, দুবাই বাংলাদেশ বিজনেস কউন্সিলের সভাপতি ও হারামাইন পারফিউম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান নাসির ও শেখ জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ খন্দকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এজন্য সউদী সরকার থেকে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি স্বরূপ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা বার বার ভোটাধিকার বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছে। সেটি যদি অর্জিত হতো তাহলে আমিই বেশি সুফল পেতাম। তবে সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, জাতীয় সংসদের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীসহ আবুধাবী বাংলাদেশ দূতাবাস, দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কর্মকর্তা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের বাধা দূর করুন আরব-আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব-আমিরাতে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর করতে সে দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে দুবাইয়ে জাবেল প্যালেসে ইউএই’র প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুমের সঙ্গে বৈঠকে এই অনুরোধ জানান। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বৈঠক শেষে দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনসুলেট অফিসে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেস সেক্রেটারি একেএম শামীম চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব হক বলেন, অত্যন্ত উষ্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। হক আরো বলেন, বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও চট্টগ্রামে টেকনাফ থেকে মিরেরসরাই পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার ম্যারিন ড্রাইভওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স্থান পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দ্রুত উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, দেশটির উন্নয়নে বাংলাদেশের শ্রমিকরা শুরু থেকেই কাজ করে আসছে। জবাবে মাকতুম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নেরও প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশি শ্রমিকরা খুবই আন্তরিক ও কর্মঠ উল্লেখ করে সংযুক্ত আরব-আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু জটিলতা রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এসব জটিলতা নিরসন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিষয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর সম্পদে ভরপুর সামুদ্রিক এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গও সংযুক্ত আরব-আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যবসায় বাণিজ্য করার মতো অনুকূল পরিবেশে রয়েছে বলে একমত ব্যক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আরব-আমিরাত এয়ারলাইন্সের ভাল ব্যবসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। শহীদুল হক বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ করার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করেছে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং আরব-আমিরাতের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ এবং আমিরাতের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজ করলেও দু’দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক ছিল না।
শহীদুল হক বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শ্রম বাজারে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের একটি ভিত্তি সৃষ্টি হয়েছে। সংযুক্ত আরব-আমিরাত এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ‘নিরাপত্তা সহযোগিতা’ এবং ‘বন্দি বিনিময় চুক্তি’ গতকাল স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই দু’টি চুক্তি দু’দেশের মধ্যে আস্থার পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য এবং মানব পাচার বন্ধে সহযোগিতার লক্ষ্যে এই দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসকের সঙ্গে আলোচনার পর শেখ হাসিনা রাস আর-খাইমাহ পরিদর্শন এবং সেখানকার শাসক সউদ বিন সকর আল কাসিমি আয়োজিত ভোজসভায় যোগদান করেন।
বাংলাদেশ-আমিরাত ৩ চুক্তি স্বাক্ষর
বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করতে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-এর (ইউএই) মধ্যে ৩টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ইউএই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের প্রশাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুমের মধ্যে বৈঠক শেষে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিগুলো হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা, দ-িত বন্দি বিনিময় এবং ঢাকায় ইউএই দূতাবাসে নির্মাণে জমি হস্তান্তর। প্রথম দুই চুক্তি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ইউএই’র অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী সাইফ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং অপর চুক্তিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও ইউএই’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেক আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।