মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছর সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির সদ্য প্রয়াত গোলাম আযমের চতুর্থ ছেলে সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী পিতার শূন্যতা পূরণের জন্য রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। দলের একাধিক সূত্র জানায়, মৃত্যুর আগে পিতার অসিয়ত অনুযায়ী তার ব্যবহৃত টুপি পরে আমান আযমী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাবেন। মৃত্যুর আগে গোলাম আযম তার এই ছেলেকে নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরি, পাঞ্জাবি ও কলম দিয়ে গেছেন।উল্লেখ্য অত্যন্ত মেধাবী এবং ভদ্র আচরনের অধিকারী জনাব আজমী সেনাবাহিনীর একজন অতি চৌকশ অফিসার হিসাবে পরিচিত ছিলেন এবং অন্যায় ভাবে শেখ হাসিনার সরকার(১৯৯৬-২০০১)তাকে সেনাবাহিনী থেকে চাকুরী চ্যুত করে।
এদিকে গোলাম আযমের মৃত্যুর পর পিতার উত্তরসূরি হিসেবে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা আমান আযমীকে সংগঠনের নিয়মানুযায়ী জামায়াতের হাল ধরতে গ্রিন সিগন্যাল দেন। তবে সহসাই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলছেন না তার ঘনিষ্ঠজনরা।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক সদস্য জানান, সাবেক আমিরের রাজনৈতিক জীবনের সব আদর্শকে লালিত করতে জামায়াতের রাজনীতিতে ডাক পেতে পারেন আযমী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নেতা বলেন, মৃত্যুর আগে গোলাম আযম তাকে অসিয়ত করে গেছেন তার ব্যবহৃত টুপি, পাঞ্জাবি ও কলমের স্মৃতি ধরে রাখতে। সেই নির্দেশে পিতার ব্যবহৃত টুপি পরে গোলাম আযমের জানাজা নামাজের ইমামতি করেন আযমী। যুদ্ধপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আযমের অপূর্ণাঙ্গ রেখে যাওয়া সব স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্যও নির্দেশ দেয়া হয় এ ছেলেকে।সূত্র জানায়, গোলাম আযমের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন আযমী। পিতার রেখে যাওয়া সব স্মৃতিকে ধারণ করে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক কাজে যুক্ত হতে যাচ্ছেন। পাশাপাশি পিতার কাছাকাছি থেকে দুঃখ-সুখের সঙ্গী ছিলেন এ ছেলে। নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবেন তিনি।
সূত্র আরো জানায়, পিতার লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে শিগগিরই দলে সক্রিয় হতে পারেন আযমী। গত ২৩ অক্টোবর রাত ১০টা ১০ মিনিটে প্রিজন সেলের কয়েদি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে মারা যান গোলাম আযম। মৃত্যুর পর থেকে জামায়াতের রাজনীতিতে আযমীকে সক্রিয় করা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক গুঞ্জন শোনা যায়। আর সেই গুঞ্জনের ইঙ্গিতও দেন তিনি। গত ২৫ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজা নামাজের আগে আযমী বলেন, আমার পিতাকে মিথ্যা মামলায় এক হাজার ১৬ দিন তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে। এর প্রতিটি দিন আমার পিতা ও পরিবারের সদস্যদের জন্য ছিল বেদনার। শুধু তা-ই নয়, আমার পিতা সারা জীবন আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দিন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। এটাই ছিল তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
আযমী বলেন, আপনারা গোলাম আযমকে ভালোবাসেন না। আপনারা ভালোবাসেন দীন প্রতিষ্ঠার জন্য একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত একজন কর্মী গোলাম আযমকে। তার বিদায় মানে ইসলামী আন্দোলনের বিদায় নয়। একদিন এদেশের মাটিতে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়বে, ইসলামকে বিজয়ী করবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তার মৃত্যু মানে ইসলামী আন্দোলনের মৃত্যু নয়। গোলাম আযমের সঠিক মূল্যায়ন সেদিন হবে, যেদিন এদেশে দীন বিজয়ী হবে। একদিন এদেশে দীন বিজয়ী হবে। জান্নাতে যেন পিতার সঙ্গে আমার দেখা হয়, সেই দোয়া আপনারা করেন।
তার এমন বক্তব্যের সূত্র ধরে জামায়াতের এক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন তিনি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নাম গোপন রাখার শর্তে এ নেতা বলেন, দলের নেতারা তাকে নিয়ে ভাবছেন। এ কথা সত্য যে, মরহুম গোলাম আযমের সব আদর্শ আযমীর মধ্যে বিদ্যমান। যা তার অন্য ছেলেদের মধ্যে নেই।
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, আযমী যতদিন বাঁচবেন, ততদিন এই টুপি ব্যবহার করে রাজনীতিতে পিতার স্মৃতিটুকু ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। বাস্তবায়নে মনোযোগ দেবেন পিতার অসিয়ত করা স্বপ্নগুলোর। এর আগে জানাজায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, গোলাম আযম আজীবন ইসলামী সমাজ কায়েমের জন্য আন্দোলন করে গেছেন। তিনি সবসময় স্বপ্ন দেখতেন ইসলামী সমাজের। যেখানে সামাজিকভাবে নামাজ কায়েম হবে। মানুষকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভালো কাজের জন্য বলা হবে। সেই সমাজ এখনো হয়নি। আমরা তার কাজ অব্যাহত রাখব। গোলাম আযমের ছেলের বক্তব্য ও জামায়াতের এ নায়েবে আমিরের বক্তব্যের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। পিতার রাজনীতির শূন্যতা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন আযমী।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা বলেন, দলের নায়েবে আমিরের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে বোঝা গেছে, আযমী জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সহসাই জড়িত হচ্ছেন। এতে দল বহুগুণে গুণান্বিত একজন ব্যক্তিকে পাবে।
এ ব্যাপারে আমান আযমীর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।