DMCA.com Protection Status
title="৭

নির্বাচন সময়মতোই হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

1414676462সময়মতোই একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যখন দেশে গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা থাকে, তখন যে কোনো সময় একটা নির্বাচন দেয়ার অধিকার সরকারের থাকে। একটা নির্বাচন যখন করা হয়েছে আরেকটা নির্বাচন তো আসবেই। সময়মতোই নির্বাচন হবে। 



বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে গত বুধবার একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। 



শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জানা উচিত, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী এ বিচার চলছে। এ আইনটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত। আন্তর্জাতিক আইন মেনেই এ আইনটা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক পরে এখনও তাদের দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। তাদের বেলায় বিচার হবে আমার দেশের মানুষ কি মানুষ না?

ইউরোপীয় এ অর্থনৈতিক জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ উদ্বেগ কোথায় ছিল— যখন ফিলিস্তিনে শত শত নারী-শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করা হলো। গর্ভবতী নারীকে হত্যা করা হলো। তখন তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো উদ্বেগ দেখিনি। এটাতে কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী তাদের বেলায়ই শুধু উদ্বেগ। আপনারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলবেন আবার উদ্বেগ প্রকাশ করবেন, তা হলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস বন্ধ হবে কীভাবে। দৃঢ়তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশের আইন অনুযায়ী এ বিচার চলবে। অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসবে।

শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আগাম নির্বাচন বিষয়ে বলেন, ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ৫ জানুয়ারির এ নির্বাচনটা আমাদের করতে হয়েছে। বিএনপি যাতে নির্বাচনে আসে সেজন্য সব রকম পদক্ষেপ আমরা নিয়েছিলাম। সব চেষ্টা করার পরও তারা নির্বাচনে আসেনি, নির্বাচন মানেনি এমনকি নির্বাচনে আসবে তো না, আবার নির্বাচন হতেও দেবে না এটাই ছিল তাদের চেষ্টা।’

এ সময় সাংবাদিকদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন না হলে কী হতো? একবার তো ১/১১ ধাক্কা সবাইকে সামাল দিতে হয়েছে। কাজেই সেই ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা (বিএনপি) আনতে চেয়েছিল। একটা নির্বাচন হলে তার পরবর্তীতে আরেকটা নির্বাচন তো আসবেই। এটা খুব সাধারণ কথা। এটা অন্যভাবে বোঝার কিছু নেই। যে যার মতো করে বুঝে নিন।

শেখ হাসিনা বলেন, যখন গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা থাকে, সেখানে কিন্তু একটা নির্বাচন দেয়ার অধিকার সরকারের থাকে। এটা দিতে পারে। অনেকেই হয়তো এটা আগাম দেন, আবার অনেকেই হয়তো সময় পূর্ণ করে দেন। জনগণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করে এটা ঠিক। ৫ বছর একটা সরকার রাষ্ট্রপরিচালনা করবে, বাংলাদেশে একমাত্র দৃষ্টান্ত আওয়ামী লীগ সরকার স্থাপন করেছিল, সেটা ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত সময় পূর্ণ করা। এর পূর্বে কোনো সরকার ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। সাংবিধানিকভাবে আমাদের সরকারের মেয়াদ ৫ বছর। নির্বাচন সময়মতোই হবে। 



আরব আমিরাত সফর ব্যর্থ হয়েছে— বিএনপির এমন দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ব্যর্থতা দেখে তারা নিজেরাই আসলে ব্যর্থ। নির্বাচনে এলো না এটা তাদের ব্যর্থতা, নির্বাচন বানচাল করার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। যারা পদে পদে ব্যর্থ তারা সারাক্ষণ শুধু ব্যর্থতাই দেখবে। তারা তাদের দেখা দেখুক, আমি আমার মতো দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাব।



ভারতের পত্রপত্রিকায় খবর আসছে, জেএমবি সংগঠিত হচ্ছে, কিছুই যদি না থাকে তা হলে তালিকা কেন করছে? তারা আপনাকেও হত্যার পরিকল্পনা করছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের তত্পরতা নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে জঙ্গি তত্পরতা আমরা কমিয়ে এনেছি। ভারতে কিছু কিছু জঙ্গি ধরা পড়েছে, সেখানে আমরা তথ্য নিচ্ছি। আমাদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে।  জঙ্গি তত্পরতা রোধে ভারত ও বাংলাদেশ এক সঙ্গে কাজ করবে। 



শেখ হাসিনা বলেন, আমার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। আমি এক্সটেনশন লাইফে আছি। ১৯৭১ সালেও হামলা হয়েছে। বন্দি অবস্থায় আমার প্রথম সন্তান হয়। ১৯৭৫ সালে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার কারণে বেঁচে গেছি। আবার ৮১ সালে যখন দেশে আসি তখন থেকে বারবার আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। চট্টগ্রাম, ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে, পান্থপথে বহুবার হামলা হয়েছে। বোমা মারা হয়েছে। সর্বশেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাও করা হয়েছে। তাতেও মরিনি। এসব মোকাবিলা করেই আমি রাজনীতি করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে যখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব তখন আমি ছুটি নেব। তার আগে নয়। আগামী ২০২১ সালের আগেই দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, আগামীতে যদি কোনো সরকার ক্ষমতায় আসে তা হলে তারা বর্তমান সংবিধানের আইনুযায়ী রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমার ফলে খালাস পাবে— এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা করা যাবে না। কারণ আমরা একটি রাষ্ট্র চালাই, রাষ্ট্রপতির কাছে দেশের জনগণের একটি অধিকার থাকে। কাজেই নাগরিকের অধিকার মহামান্য রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমতা খর্ব করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কিছু মৌলিক বিষয় আছে যেখানে হাত দেয়া যায় না। এ অধিকার মহামান্য রাষ্ট্রপতির থাকে। এটা রাখতেই হবে।



বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষকে যেন ঘর-বাড়ি বিক্রি করে এখন আর বিদেশে যেতে না হয় সে জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। আমি আহ্বান জানাব, অনেকেই অনেক রকম প্রলোভন দেখাবে। খোঁজখবর না নিয়ে কেউ যেন বিদেশে না যায়।



গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনা ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের প্রশাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে আমিরাত সফর করেন।

তিনদিনের এ সফরকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, তার আরব আমিরাত সফরের ফলে সেদেশে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার নতুন করে উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তিনি তার সফরকালে নিরাপত্তা সহযোগিতা, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের স্থানান্তর, ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাস ভবন স্থাপনের জন্য প্লট হস্তান্তর চুক্তির কথা উল্লেখ করেন।



প্রধানমন্ত্রী জানান, আরব আমিরাতের উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসকের সঙ্গে অত্যন্ত হূদ্যতা ও আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ এবং টেকনাফ থেকে মিরসরাই পর্যন্ত ড্রাইভওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সরকারের মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!