DMCA.com Protection Status
title=""

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো শখ আমার নাই,মানুষকে মুক্ত করে যেতে চাই: দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া

1414857700সরকার একঘরে হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। বলেছেন, গোটা বিশ্ব থেকে বর্তমান অবৈধ সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক নেই। তারা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানি হবে না। সরকার চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না। খালেদা জিয়া বলেন, এদেরকে বিদায় করেই ঘরে ফিরব। তিনি বলেন, বিএনপি জোট ক্ষমতায় গেলে মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধ শ্রমবাজার খুলে যাবে। শনিবার নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।



বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়ার সমাবেশ কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকেই নাটোরের প্রতিটি উপজেলা ছাড়াও রাজশাহী জেলা ও মহানগর, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও নেতাকর্মীরা এই জনসভায় যোগ দেন। তাদের অনেকের হাতে ধানের শীষ প্রতীক, দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি ছিল। 



জনসভা উপলক্ষে শতাধিক মাইক স্থাপন ও নানা রঙে তোরণ নির্মাণ করা হয়। নাটোরের প্রবেশ পথ গুরুদাসপুরের কাফিকাটা টোলপ্লাজা থেকে জনসভাস্থল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের পথে পথে ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। জনসভা উপলক্ষে মঞ্চসহ চারপাশে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, হবে না। তারা ভোটের আগে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে। উপজেলা নির্বাচনে দেখেছেন, কীভাবে ভোটের আগেই ভোটের বাক্স ভরা হয়েছে। এ জন্যই আমরা দাবি করছি, নির্দলীয় সরকার প্রয়োজন। 



বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আমরা আন্দোলন করতে রাস্তায় নামলে পুলিশ কথায় কথায় গুলি চালায়। সরকারকে বলতে চাই— পুলিশ দিয়ে অন্যায়ভাবে সরাসরি গুলি করা বন্ধ করুন; আন্দোলন কাকে বলে দেখিয়ে দেব। আপনারা বলেন, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না।

আরে এরশাদকে তো আমরাই নামিয়েছিলাম। তখন তো আপনারা আঁতাত করে জাতীয় বেইমান হয়েছিলেন। আপনার বলেন, বিএনপির পায়ের তলায় মাটি নেই। আমাদের পায়ের তলায় শক্ত মাটি আছে। নীলফামারীতে সেদিন দেখিয়ে দেয়া হয়েছে, আজ নাটোরে দেখেন। পুলিশের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের সঙ্গে তো আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আর আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। 



নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল সরকার, র্যাব ও নারায়ণগঞ্জের কয়েক হর্তাকর্তা। এ ঘটনায় র্যাবের কয়েকজনকে লোক দেখানো আটক করা হয়েছে। তাদের এখন কারাগারে জামাই আদরে রাখা হয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে— সে ঘটনার বিচার হবে কি না। তিনি বলেন, মানুষ হত্যা করার জন্য র্যাব গঠন করা হয়নি। র্যাব বাতিল করতে হবে।

  

বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবুকে প্রকাশ্যে খুন করার প্রসঙ্গ টেনে নাটোরের জনসভায় বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। 



খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আমার কোনো শখ নেই। আগামী দিনে তরুণরাই নেতৃত্ব দেবে। আমাদের আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়। দেশ রক্ষা, মানুষ রক্ষা, গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। জীবনের শেষ সময়ে এসে বলতে চাই— আসুন দেশরক্ষায় আরেকবার আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে আন্দোলন করি।



খালেদা জিয়া বলেন, জেলখানা আজ বিরোধী নেতাকর্মীতে ভরে গেছে। সারাদেশ এখন কারাগারে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, আমিসহ সবার নামে মামলা হয়েছে। 

খালেদা জিয়া বলেন, বিরোধী দলের মত প্রকাশের সুযোগ নেই। দেশে গণতন্ত্র নেই। এই আওয়ামী লীগই আন্দোলনের নামে এক সময় গাড়ি জ্বালিয়েছে। লগি-বৈঠা দিয়ে, গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। 

 

দল ও মুখ দেখে নয়, বিবেকের বিচারে রায় দেয়ার জন্য বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আজকে ন্যায় বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আদালতকে সরকার দলীয়করণ করেছে। এখন আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না। আজ এক দেশে দুই আইন, দুই বিচার। আওয়ামী লীগ মানুষ খুন করুক, গুম করুক, দুর্নীতি করুক, বিচার হয় না। আমরা কিছু না করলেও মিথ্যা মামলা ও বিচার হয়। বিচারকরা যাতে সাহস করে ন্যায় বিচার করতে না পারেন তাই তাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া জন্য অভিশংসন আইন করা হয়েছে। সরকার এভাবে নতুন নতুন কৌশল করছে। 



খালেদা জিয়া এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘দুর্নীতি কমিশন’ আখ্যায়িত করে তাদের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই কমিশন এখন সরকারের আজ্ঞাবহ। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনেরও সমালোচনা করেন।   

খালেদা জিয়া বলেন, আজ নাটোরে বিদ্যুত্ আছে? নেই। এখানেও নেই, ঢাকাতেও নেই, দেশের কোথাও নেই। বিদ্যুত্ আসে-যায়। এই হলো দেশের অবস্থা। তিনি বলেন, আবাসন খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। আবাসন ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট তৈরি করে এখন গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের অভাবে বিক্রি করতে পারছে না। গার্মেন্ট খাত এখন ২ নম্বর থেকে চার নম্বরে নেমে গেছে। 



বিএনপি চেয়ারপাসরন খালেদা জিয়া শেয়ারবাজার ও সরকারি ব্যাংকে লুটপাটের ঘটনায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী স্বীকার করে বলেছেন— আমরা ব্যর্থ হয়েছি। 



খালেদা জিয়া বলেন, দেশ লুটপাট ও দুর্নীতিতে ভরে গেছে। কেউ যাতে তাদের দুর্নীতির খবর ছাপতে না পারে সে জন্য সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে। দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বছরের পর বছর কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। পত্রিকাটি আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল, তারা কেবল অনলাইন সংস্করণ চালু রেখেছিল। কাল সেটাও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। 



নাটোরের জনসভায় ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা খাতে বেশি পাসের প্রসঙ্গে টেনে বলেন, এখন বেশি নাম্বার না দিলে শিক্ষকদের শাস্তি দেয়া হয়। এতে প্রকৃত মেধাবীদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এ সময় ভবিষ্যতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ক্ষমতায় গেলে কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন তার একটি সারসংক্ষেপও তুলে ধরে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারও খুলে যাবে। 



এদিকে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় বন্ধ না হলে হরতাল চলছে হরতাল চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। 



জেলা সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সভাপতিত্বে জনসভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান পটল, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক মীর শরফত আলী সপু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, জোট নেতাদের মধ্য জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ডা. রেদওয়ান উল¬াহ শাহিদী, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ন্যাপের ব্যারিস্টার গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুর রহমান, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ বক্তব্য দেন। জনসভা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন কিছুক্ষণ সার্কিট হাউসে অবস্থান করে ঢাকায় ফেরেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!