সম্প্রতি স্মরনকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতারা সংবাদ মাধ্যমকে নানা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
গত শনিবার সারাদেশে প্রায় ১০ ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিদ্যুত্হীন ছিল দেশ। এতে অনেক শিল্পকারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
এই ঘটনায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। বাংলাদেশের মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রার ওপর ভিত্তি করে তিনি এ কথা জানান।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুত্ বিপর্যয়ে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা বলা মুশকিল। এর নির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি নেই। তবে কী পরিমাণ উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়েছে, তা বলা সম্ভব। আমাদের মোট জিডিপিকে ৩৬৫ দিয়ে ভাগ করে যা হয়, তা থেকে অর্ধেক পরিমাণ উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে।’ ২০১২-১৩ অর্থবছরে জিডিপি ছিল ১০ হাজার ৩৪০ বিলিয়ন ডলার। এ হিসেবে এক দিনে উত্পাদন ছিল ২৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
সে হিসাবে এক দিনের অর্ধেক উত্পাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা)।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আনিসুল হক জানান, ‘বিদ্যুত্ বিপর্যয়ে এক বছরের জিডিপি শূন্যের কোটায় নেমে আসতে পারে। একমাত্র আল্লাহই এ বিপর্যয় থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারেন।’
এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ মনে করে, ‘বিদ্যুত্ বিপর্যয়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা বলা মুশকিল। তবে এক বছরে আমাদের যে পরিমাণ রপ্তানি হয় তার ৩০০ ভাগের একভাগ ক্ষতি হয়েছে— এটা নিশ্চিত।
তার এ হিসাবে জাতীয় গ্রিডে এই বিদ্যুত্ বিপর্যয়ের ফলে একদিনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১ দশমিক শূন্য ৬ কোটি ডলার (৮৮৫ কোটি টাকা)। কারণ চলতি বছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ২০০ মিলিয়ন ডলার (৩ হাজার ৩২০ কোটি ডলার)।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক জানান, বিদ্যুত্ বিপর্যয়ে তৈরি পোশাকশিল্পে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা বলা কষ্টকর। কারণ বিদ্যুত্ যাওয়ার পরেও অনেকেই জেনারেটর দিয়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা কারখানা চালু রেখেছিল। তবে বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এ হিসাবে দিনে উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা (৬ কোটি ৫৭ লাখ ডলার)।