মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অযাচিত বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ হুসেইন জায়োকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান তাকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠিয়ে বলা হয়— ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানো উচিত নয়।’ এ বিষয়ে একটি চিঠি আহমেদ হুসেইন জায়োর কাছে হস্তান্তর করা হয়, যা পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকার্য চলার মধ্যেই পাকিস্তানের নেতাদের বক্তব্যের জন্য এ নিয়ে দ্বিতীয়বার পাক রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হলো। হাইকমিশনার মিয়া আফরাসিয়াব মেহেদী হাশমি কুরেশির ঢাকায় মেয়াদ শেষে চলে যাওয়ার কারণে আহমেদ হুসেইন ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেয়ার সমালোচনা করেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতেই বাংলাদেশে পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করা হয়। মিজানুর রহমান তার কাছে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সংঘটিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানো উচিত নয়। বাংলাদেশ আশা করে, আগামীদিনে পাকিস্তান এ ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে না। নিসারের বক্তব্যকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করে পাকিস্তানের দূতকে বাংলাদেশের অসন্তোষের কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর এ বিষয়ে নিসার আলীর প্রতিক্রিয়া পাকিস্তান জামায়াতের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে তা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও পাকিস্তান ১৯৭১ সাল ও পরবর্তী পর্যায়ের ঘটনাবলি নিয়ে চুপ থাকতে পারে না। ওই মন্ত্রী এতে বলেন, ‘আমি এটা বুঝতে পারছি না, কেন বাংলাদেশ সরকার অতীতের কবর খুঁড়ে অশান্তি বাড়াচ্ছে এবং পুরনো ক্ষতগুলো আবার খুঁচিয়ে আলগা করছে।’ পাক মন্ত্রীর ওই বক্তব্যে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া গণজাগরণ মঞ্চ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতসহ কূটনীতিকদের বহিষ্কারেরও দাবি জানায়।
একাত্তরে সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশের। ওই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসর হয়ে যারা মানবতারোধী অপরাধ চালিয়েছিল, তাদের বিচার হচ্ছে দীর্ঘ চার দশক পর। ওই বিচারের রায়ে জামায়াত আমির নিজামীর প্রাণদণ্ড হয়েছে। দলটির শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন নেতারও যুদ্ধাপরাধের জন্য সাজা হয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার মিয়া আফরাসিয়াব মেহেদী হাশমি কুরেশিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। তখন যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিবৃতির জের ধরে তাকে তলব করা হয়।