DMCA.com Protection Status
title="৭

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরের কম্বল কারখানায় ভয়াবহ আগুনঃব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখনও দূর্ঘটনার কারন জানা যায়নি।

Belalঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সীমানার ভেতরে থাকা কম্বল কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি। শুক্রবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর পরই কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

কারাভ্যন্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি সীমানা দেয়াল ঘেঁষে টহল দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাঁচ প্লাটুন সদস্য। এ ছাড়া কারাগার সীমানায় জনসাধারণের চলাচল সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।


কারাগার সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে কম্বল কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারাগারের ওই পাশের চারটি সেলের বন্দিদের নিরাপত্তার জন্য অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এ ঘটনায় কারাগারের ভেতরে কোনো ধরনের আতংক ছড়িয়ে পড়েনি বলে দাবি করেছে প্রশাসন।আগুনের ঘটনায় অন্তত ২২ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কারখানাটির মালিক ও নেত্রকোণা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। কারখানার মেশিন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা অনেকে দাবি করলেও ঘটনা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আগুনের ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত তা জানা যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল হালিম ও সিনিয়র স্টেশন অফিসার (লালবাগ) কাজী নাজিমুজ্জামানকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।



 

কারখানার মালিক ও নেত্রকোণা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বলেন, কারখানার মধ্যে ত্রাণ ও কারাগারে সরবরাহের জন্য কম্বল মজুদ ছিল। যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে সরকারের সাহায্য ছাড়া হবে না।

কারখানাটিতে ১০০ কোটি টাকার সম্পদ ছিল, এর মধ্যে ২২ কোটি টাকার সম্পত্তি অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়েছে এবং ৭০০ শ্রমিক এখানে কাজ করত বলে দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কম্বল কারখানাটি প্রথমে জেল কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করত। তখন কয়েদিদের জন্য এ কারখানায় কম্বল বানানো হত। কিন্তু একটা সময় অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে শুরু করলে সরকারের পক্ষ থেকে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৮৩ সালে ওয়ারেসাত হোসেন ৫৫ বছরের জন্য কারখানাটি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেন। সামনে শীত আসন্ন হওয়ায় ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ও কারাগারে কম্বল সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু সরবরাহের পরিমাণ অনুযায়ী হাতে সময় ছিল কম।

প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিক বিলকিস আক্তার বলেন, এখানে ১৫০ থেকে ২০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। কাজ করার সময় কাটিং মেশিনের ব্লেডের ঘর্ষণে আগুনের উৎপত্তি হয়। আশেপাশে পানি না থাকায় আগুন কম্বলে লাগলেও তা নেভাতে পারিনি। পরে যতক্ষণে পানি এনেছি, ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

‘ওয়ার্মি কম্বল’ নামে ওই কারখানার তত্ত্বাবধায়ক দেলোয়ার হোসেন  বলেন, কারখানায় দুই লাখ  ২১ হাজার ৫০০ কম্বল মজুদ ছিল। যার আনুমানিক মূল্য ২২ কোটি টাকা। কারখানার মেশিন বেশি উত্তপ্ত হওয়ার ফলেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে কারখানার পাশে থাকা পদ্মা, মেঘনা, মেডিকেল ও মনিহার সেলের বন্দিদের নিরাপত্তার জন্য অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কারাগারের আশপাশে সাধারণের চলাচলের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

আগুন লাগার খবর পেয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মোজাম্মেল খানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং কারাগারের ভেতরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারাগারে কোনো প্রভাব পড়েনি। পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আজিজ  জানান, অগ্নিকাণ্ডকে পুঁজি করে কারাগারে যাতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে সে জন্য কারারক্ষীরা ভেতরে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি বাইরের এলাকাতেও পুলিশের কড়া নিরাপত্তা রয়েছে।

এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক বিশেষ বার্তায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পাবলিক ম্যানেজমেন্ট অর্ডার (পিএমও) এবং ঢাকার অধিকাংশ থানা থেকে কর্তব্যরত পুলিশের একটি অংশকে এনে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত এ নিরাপত্তা বহাল ছিল।

উল্লেখ্য, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সীমানার ভেতরে থাকা ওয়ার্মি কম্বল কারখানায় শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট এবং পরে আরও দুটি ইউনিট একযোগে কাজ করে। রাত ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!