রাজধানী ঢাকাকে ঘিরেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটির পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। সে লক্ষ্যে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।এছাড়াও দ্রুত দলের কাউন্সিল করার চিন্তা ভাবনাও আছে বিএনপির।
গত সোমবার রাতে গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়া তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে উপদেষ্টারা ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে ডিসেম্বরে সরকারকে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান না হলে জানুয়ারিতে ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলন কৌশলের ছক আঁকছেন তিনি। দেশব্যাপী চলমান গণসংযোগ শেষে আগামী মাসের শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির।
ওই সমাবেশ থেকে সরকারকে সংলাপের জন্য চূড়ান্ত আলটিমেটাম দেবেন খালেদা জিয়া। এ মহাসমাবেশে বাধা দিলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি প্রধান সরকারবিরোধী আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার কলঙ্ক মুছে ফেলতে চায় ঢাকা মহানগর বিএনপি। ঢাকাকে ঘিরে সরকারবিরোধী নতুন আন্দোলনের এ ছক তৈরি করছেন কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারা দেশের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাতেও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী। ঢাকার আন্দোলনের ব্যাপারে তার কাক্সিক্ষত চাহিদার কথা দায়িত্বপ্রাপ্ত মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি জোটের নেতাদেরও অবহিত করেছেন।
বিগত সময়ের মতো যেন ঢাকার আন্দোলন ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয় না হয় সে ব্যাপারেও তিনি নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।দলীয় সূত্র জানায়, সরকার সময়সীমা না মানলে ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন ২০-দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়ে পথযাত্রা, গণকারফিউ, স্বেচ্ছায়
আগামী ২৯ নভেম্বর কুমিল্লায় সমাবেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়া তার দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি শেষ করবেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম বিভাগসহ আরও দুটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এবার বিএনপি দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিবর্তে ১০ থেকে ১৫ দিনের শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলে ইতিবাচক ফল আনার চেষ্টা করবে। এ আন্দোলন হবে মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, তাদের লক্ষ্য থাকবে সারা দেশ থেকে দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনে বলিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে তোলা।
এজন্য আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে সোমবার রাতে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ধারাবাহিকভাবে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার রাতে একই স্থানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম-মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। একই দিন তিনি দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।
সূত্র মতে, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া অতীত আন্দোলনে ঢাকার ব্যর্থতাকে এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি এবার আন্দোলনে ঢাকা আর ব্যর্থ হবে না বলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করছেন। ২৩ অক্টোবর নীলফামারীতে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় খালেদা জিয়া প্রথম প্রকাশ্যে ঢাকার ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন। সেদিন তিনি বলেন, আপনারা বিগত আন্দোলনে আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। প্রতিরোধ ও অবরোধের মধ্য দিয়ে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। দেশকে অচল করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি স্বীকার করে নিচ্ছি সেদিন ঢাকা ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু কথা দিচ্ছি, ঢাকাও এবার সফল হবে। ব্যর্থ হবে না। ঢাকা এবার সফল হবেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, আন্দোলন এখন প্রাথমিক পর্যায়ে। বর্তমানে তাদের দেশব্যাপী গণসংযোগ চলছে। গণসংযোগ শেষে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে। তিনি জানান, ১৩ নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করার কথা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। দলের এই নেতা আরও বলেন, জনগণ অধীর আগ্রহে আন্দোলনের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও জনগণের দুর্ভোগ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ঢাকায় আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি প্রায় পুরোপুরি পুনর্গঠিত করা হয়েছে। আমাদের নেত্রী বলেছেন নির্দিষ্ট সময়ে তিনি (খালেদা জিয়া) আন্দোলনের ডাক দেবেন। শিগগির আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন দেশনেত্রী।