প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০ দলীয় জোট এখন দেশের জন্য বিষফোঁড়ার মতো। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
যুবলীগের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শমসের মোবিন চৌধুরির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে যারা হত্যা করেছে, পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান সেই হত্যকারীদের ভোটের এবং রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। মোবিনের সহায়তায় খুনিরা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগের ৭ খুনের মূল আসামি শফিউল আলম প্রধান এখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনীতি করে। এতে বোঝা যায় ২০ দলের নেতা এদেশের জন্য বিষ ফোঁড়া।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান শুধু খুনিদের আশ্রয় ও তাদের বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসনই করেননি তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও স্বামীর পথ অনুসরণ করে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছেন। তার সমাবেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারদের মুক্তির দাবি করা হয়। এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের নাকি রাজাকারদের পক্ষে আছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের জনগণ বুঝতে পারে একটি সরকারই কেবল দেশের জনগণের জন্য। তাই তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল জনগণের জন্য ছিল স্বর্ণযুগ।’
‘২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে আমরা দেশের ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিভিন্ন বেসরকারি খাতের অনুমতি দিয়েছি যাতে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। যুবকেরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হইনি, বরং খাদ্য রপ্তানিও করছি। আন্তর্জাতিক খাদ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ এতে কোনো সন্দেহ নেই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি সমৃদ্ধ দেশ।’
শনিবার দুপুর ২টায় যুবলীগের এ সমাবেশ শুরু হয়। বিকেলের দিকে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর দোসরদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। আমরা ওয়াদা করেছিলাম তাদের বিচার করবো, বিচার করছি। আর বিএনপি কী করছে? আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, গাছ কেটেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে। এর জবাব তাকে একদিন দেশের মানুষের কাছে দিতে হবে ‘
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, বিচার চলবে। একে কেউ বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না। যারা স্বজন হারিয়েছে তাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে, খুনিদের নয়। যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ চলে তখন মাবাধিকার সংগঠন তেঁতে
ওঠে। বাংলাদেশ স্বাধীন, কারো কাছে মাথা নত করবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীতে প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বালাবো, কোনো মানুষ অন্ধকারে থাকবে না।’
যুবসমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য জামানত ছাড়া কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নেয়া যাবে। যা ১৯৯৬ সালে ১ লাখ টাকা ছিল।’
এরআগে জাহাঙ্গীর কবির নানক তার বক্তব্যে খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্য বলেন, ‘ক্ষমতা কি মামার হাতের মোয়া? যুব সমাজ ভুলে যায়নি। আপনার ছেলেকে দিয়ে হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে দেশের সম্পদ নষ্ট করেছেন। আবার ক্ষমতায় এসে শাপলা চত্বর শাপলা চত্বর খেলবেন? আবার আব্দুল আলীম,
নিজামী-মুজাহিদদের মতো রাজাকারদের মন্ত্রী বানাবেন? বাংলাদেশের যুব সমাজ আর কোনদিন তা হতে দেবে না।
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ।