DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

সরকার বিরোধী আন্দোলনে আরও কঠোর হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া

98869_1সারাদেশের পাশাপাশি রাজধানীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ছক তৈরি ও তা বাস্তবায়নের চাপ বাড়ছে বিএনপিতে।

দলের চাহিদা বিবেচনায় হাইকমান্ডও আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে নানামুখী পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু ঢাকা মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন বিলম্ব হওয়ার কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। তাই এবার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছাতে আরো কঠোর হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলকে জোরদার করতে গত ঈদের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের কৌশল ঠিক করেছে বিএনপি হাইকমান্ড। গণসংযোগের পাশাপাশি দাবি মানতে সরকারকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়ারও চিন্তা করা হয়েছিল। এছাড়া ডিসেম্বর থেকে ২০ দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়ে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও অসহযোগের মতো কর্মসূচি দেয়ার কথাও ভাবা হয়েছিল। এসব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকও করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। যথারীতি গত ১০, ১১ ও ১৩ নভেম্বরে উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তার পরিকল্পনার বিষয়গুলো এসব বৈঠকে আলোচনাও হয়। কিন্তু নেতাদের যুক্তি পাল্টাযুক্তিতে কোনো কৌশলই চূড়ান্ড করা সম্ভব হয়নি। 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে ঢাকা মহানগরে দলের কমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে না পারা, ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠন করতে না পারায় কৌশল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে ঘাটতিও বিএনপিকে ব্যাপকভাবে ভোগাচ্ছে। 

উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। মহানগর কমিটির নেতাদের গত ১০ অক্টোবর সর্বশেষ টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়েছিলেন কমিটি গঠন করতে। কিন্তু ওই সময়ে তো হয়নি বরং এখনো কবে নাগাদ কমিটি 

গঠন হতে পারে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এছাড়া কমিটি গঠনের পদ্ধতি নিয়েও উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠকে নেতারা আপত্তি করেছেন। বলেছেন কাউন্সিল দূরে থাকা কর্মী ছাড়াই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া হচ্ছে। কমিটি হলেও এই কমিটি আন্দোলন সফলে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। এছাড়া ঢাকার বাইরের নেতারা কমিটি গঠনের কাজে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছেন। যা হিতে আরো বিপরীত হতে পারে। মহানগর ছাড়াও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়েও আপত্তি করেছেন সিনিয়র নেতারা। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে কেন ৫ জানুয়ারির পর আন্দোলন বন্ধ করা হলো? কারা এই আত্মঘাতী পরামর্শ দিয়েছিলেন। দলের মধ্যে কারা সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন_ সব কিছু ভেবে দেখার সময় এসেছে। এছাড়া অনেকেরই অভিযোগ ছিল, যার যে দায়িত্ব তিনি তা পালন না করে করছেন অন্যটা। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা তা মনিটরিং থাকা দরকার বলেও অনেকে মত দিয়েছেন। সবাইকে সক্রিয় না করে আন্দোলন সফল হওয়া যাবে না বলেও বেশির ভাগ নেতা মত দেন। 

সূত্রমতে, নেতাদের এসব বক্তব্য শুনে সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তা নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া। অনেক নেতার কাছেই তাদের যেসব দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার অগ্রগতির বিষয়ে জানতেও চান। কিন্তু সদুত্তর না পেয়ে তিনি হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন। 

চেয়ারপারসনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, নেতাদের কথা শুনে এবং সাংগঠনিক অবস্থা দেখে এখনই পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এছাড়া দায়িত্ব দিয়ে বসে থেকে নয়, নিজেই সবকিছু তদারকি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি নিজেই আন্দোলনের মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছেন। এখন উচ্চ পর্যায় থেকে দলের সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী করতে আরো কঠোর হবেন খালেদা জিয়া। তবে এই কাজে বেশি সময় নিতে চান না তিনি। নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর আন্দোলনের পরিবল্পনা বাস্তবায়নের পথ থেকে কিছুটা সরে এসেছেন বিএনপিপ্রধান। এখন নতুন করে পরিকল্পনা করে সুযোগ্যদের বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেবেন। আর এসব বিষয় নিজেই তদারকি করবেন। তবে তৃণমূলের ঐক্য ধরে রাখতে জনসংযোগের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। আগামী ২৯ নভেম্বর কুমিল্লায় জনসভার পর চট্টগ্রাম বিভাগসহ আরো দুটি সমাবেশে করার কথা ভাবছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। 

বিএনপির আন্দোলনের পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়ে চেয়ারপাসনের এক উপদেষ্টা জানান, বৈঠকে নানামুখী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক মতামত থাকায় আন্দোলনের জন্য নতুন কৌশল ঠিক করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একই রকম কথা বলেন এক যুগ্ম মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির এক সিনিয়র সদস্যও। 

আন্দোলন পরিকল্পনার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে চেয়ারপারসন বৈঠক করছেন। মতামতের উপর ভিত্তি করেই আন্দোলনের কৌশল ঠিক করা হবে। আগের আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার রাজধানী ঢাকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকার জনগণ আন্দোলনে শরিক হবেন এমনই আশা করছেন তিনি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!