সততার সনদ পাচ্ছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. নূরুল হুদা। অথচ তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও প্লট বরাদ্দসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ জুন প্রাক্তন রাজউক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনেকটা ঘটা করে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দীর্ঘ্ চার মাসের অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি খুঁজে পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। গত সপ্তাহে বিষয়টি নথিভুক্তির (অব্যাহতি) সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকৃত অর্থে এমন একজন ভিআইপি’র দুর্নীতি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কমিশনের ইচ্ছার ওপর অনেকটা নির্ভর করতে হয়। একা কোন কর্মকর্তার পক্ষে বিষয়টির সুরাহা করা সম্ভব নয়। তার ক্ষেত্রে ওটাই হয়েছে, যা কমিশন চেয়েছে।এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও সদ্য অবসরে যাওয়া পরিচালক যতন কুমার রায় জানান, অনুসন্ধানে নূরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সেই অনুযায়ী কমিশনে প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। বাকিটা কমিশন দেখবে।
নূরুল হুদার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: নূরুল হুদা নামে-বেনামে একাধিক প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, পূর্বাচল ৯ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা আয়তনের ১৯ নম্বর প্লট। এটি নেওয়ার পর তার স্ত্রীর নামেও আরেকটি প্লট নিয়েছেন। প্লট কোড নম্বর – ৫৪২১৬। নিয়ম অনুযায়ী, স্বামীর নামে সরকারি প্লট থাকার পর আবার স্ত্রীর নামে প্লট নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে নূরুল হুদা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে প্রভাব বিস্তার করে এ কাজটি করেছেন বলে দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে।
আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিকীকরণ : গুলশান ৯৩ নম্বর রোডের সিইএন (এ) ১৫/বি প্লটটি রাজউকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নূরুল হুদা নিয়মনীতি না মেনে নিজের একক ক্ষমতা খাটিয়ে আবাসিক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেন। নিজেকে সরকারের প্রভাবশালীদের আস্থাভাজন ব্যক্তি উল্লেখ করে নূরুল হুদা রাজউকে অনেকটা একক প্রভাব খাটিয়ে বড় বড় প্রকল্প পছন্দের ব্যবসায়ীদের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শেষ সময়ে বরাদ্দের হিড়িক : ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ ৩ নম্বর বোর্ড সভাটি ছিল নূরুল হুদার দায়িত্বের সর্বশেষ বোর্ড সভা। সে সভার সভাপতি হিসেবে তিনি গুলশান ও পূর্বাচল প্রকল্পে একাধিক প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। বোর্ড সভায় বেশ কয়েকটি প্লট ও খণ্ড জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে গুলশান আবাসিক এলাকার ৭১ নম্বর রাস্তা ও ১৫ নম্বর প্লটটির পূর্বপাশে ওয়াকওয়ে সংলগ্ন ১ বিঘা ৩ কাঠা ৩ ছটাক পতিত জমি কন্টিনেন্টাল হাসপাতাল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া। উত্তরা আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৫ কাঠা আয়তনের ১৮ নম্বর প্লটের অতিরিক্ত আরো ২ কাঠা ৬ ছটাক খণ্ড জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফেরদৌস আরা নামের এক নারীর অনুকূলে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প আবাসিক এলাকার ১৬/এইচ নম্বর সেক্টর ১/বি ৩ কাঠার পরিবর্তে ৫ কাঠা জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, মিসেস রেহেনা নামের একজনের উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের ১৭/এফ সেক্টর ৪/এ তিন কাঠার পরিবর্তে বসবাসযোগ্য উত্তরা ১ম/২য় নিকুঞ্জে (দক্ষিণ) বিকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। উত্তরা আবাসিক এলাকার ৯ নম্বর সেক্টরে ৫ ও ৬ নম্বর রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গায় ৪ কাঠার প্লট সৃজন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া গুলশান আবাসিক এলাকার গুলশান এভিনিউ সি ডব্লিউ এস (এ) ১০ এর ২৪ নম্বর রাস্তাসংলগ্ন সি ডব্লিউ এস (এ) ২০ নম্বর প্লটটি একত্রীকরণ করা হয়েছে। শুধু একটি বোর্ডসভায় এসব প্লট ও খণ্ড জমি বরাদ্দ দিয়ে নূরুল হুদা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ২০১০ সালে স্বাবলম্বী কর্মজীবী নারীদের মধ্যে নির্ধারিত মূল্যে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ ছিল প্রধানমন্ত্রীর। ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি চিঠিও পাঠানো হয় রাজউকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদার কাছে। নারীদের প্লট পেতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে রাজউকের নীতিমালা সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নূরুল হুদা নীতিমালা না মেনে চিঠি গোপন করেন এবং কর্মজীবী যেসব নারী প্লট পেয়েছিলেন (১৯৯৯-২০০৫) তাদের বরাদ্দ বাতিল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৯ সালের ৩০ মার্চ অতিরিক্ত সচিবের পদমর্যাদায় দুই বছরের জন্য রাজউকের চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান মো. নূরুল হুদা। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর কয়েক দফা তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ২০ এপ্রিল পূর্ণ সচিবের পদমর্যাদায় রাজউক চেয়ারম্যান হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়।