চীনের উন্নতির ইতিহাস এখনও বিস্ময়কর। দেশটির শিল্পকারখানাগুলো কমপক্ষে ৫০০ মিলিয়ন মানুষকে দরিদ্র থেকে মুক্তি দিয়েছে। দরিদ্র-মুক্তির এই পরিসংখ্যান পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম।
বিগত দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে চীন শ্রমঘন পণ্য যেমন তৈরী পোশাক উৎপাদনেই বেশি মনযোগী ছিল। কিন্তু চীন বর্তমানে তাদের শিল্পের ধরণের পরিবর্তন আনছে। এই পরিবর্তনের ফলে শ্রমঘন শিল্পগুলো এশিয়ার অন্যান্য দেশ- যেমন ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ইন্ডিয়ায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। ফলে, এই দেশগুলো হতে পারে আগামী দশকের নতুন চীন।
বাংলাদেশ, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের বর্তমান অর্থনীতি নব্বইয়ের দশকের চীনের মতোই। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চীনের অভ্যন্তরীন অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীনের শ্রমিকদের মজুরি কাঠামর পরিবর্তন। কিন্তু বাংলাদেশ, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো শ্রমমূল্য রয়েছে দুই দশক আগের চীনের মতো। একারণেই, এই দেশগুলো হয়ে উঠতে আগামী দশকের নতুন চীন।
কিন্তু এই পরিবর্তনের পথে বাংলাদেশসহ বাকী সবগুলো দেশেরই নিজস্ব সমস্যা রয়েছে। জাতিগত দাঙ্গা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় কাটছে বার্মার। পুরোবিশ্বেই আমলাতন্ত্রের জন্য কুখ্যাতি রয়েছে ইন্ডিয়ার। মাইক্রোসফটের মোবাইল তৈরীর প্ল্যান্টটি ইন্ডিয়া থেকে ভিয়েতনামে স্থানান্তর এরই একটি দৃষ্টান্ত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্ভাবনাময় আরেকটি দেশ হচ্ছে থাইল্যান্ড। কিন্তু ২০১১ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যা এবং তার পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকটাই থমকে গেছে। তবুও প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে থাইল্যান্ড এখনও দৃষ্টান্ত। ফোর্ড ও এসটিএক্সের মতো কোম্পানি এখনও তাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে থাইল্যান্ডে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা,জ্বালানী নিরাপত্তার অভাব, সময়োপযোগী শিক্ষানীতি ও প্রশাসনিক তৎপরতার অভাব বাংলাদেশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি ইন্ডিয়া নির্ভর ছিল। কিন্তু তৈরী পোশাক শিল্পের কারণে বাংলাদেশ বাকী বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হচ্ছে। রানা প্লাজা ধ্বসের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনার দুর্নাম কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। জেসি পেনি, টার্গেট, গ্যাপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যে নতুন করে আগ্রহী হতে শুরু করেছে।
এ বছর বাংলাদেশের স্টক মার্কেটে ব্যবসায়ের পরিমাণ ২৭ ভাগ বেড়ে গেছে। এই প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বৃহত্তম পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এনভয় টেক্সটাইল।
এএফসি এশিয়া ফ্রন্টেয়ার হেজ ফান্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা থমাস হুগার মনে করছেন, তৈরী পোশাক, পাদুকা ও খেলনা শিল্প চীন থেকে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর ফলে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছর এই দেশগুলো ব্যাপক লাভবান হবে। এই সময়ে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ফলে ভোগের পরিমাণ বেড়ে যাবে। মানুষের মাসিক আয় হবে নিয়মিতভাবে। যার বিশাল একটা অংশ ব্যয় হয় ভোগ্যপণ্য ক্রয়ে। ফলে, পুরো অর্থনীতিতেই ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। একারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে শিল্পে বিনিয়োগের পাশাপাশি ভোগ্যপণ্য উৎপাদনেও বিদেশী বিনিয়োগ বেড়ে যাচ্ছে।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের মতো এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতির নতুন ইতিহাস তৈরী করতে পারে।