কথিত মতে মিথ্যা বলে আলোচিত এইচ টি ইমাম গত ১২ই নভেম্বর দেয়া তার বিতর্কিত ভাষণে বিএনপিকে হিটলারের মন্ত্রী গোয়েবলসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। বলেছিলেন, তারা গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাচার করছে।
কিন্তু গতকাল ইংরেজি দৈনিক স্টার ব্যানার শিরোনাম করেছে, এইচ টি ইমাম মিথ্যা বলেছেন।
পদ্মা সেতু বিতর্কে ড. মসিউর রহমান বিরাট আলোচনায় এসেছিলেন। এরপর তাকে আর মিডিয়ার সামনে কোন বিতর্কে জড়াতে দেখা যায়নি। জনাব ইমাম একটি অসতর্ক মন্তব্য করেছেন। সেটা ঢাকতে ইমাম দু’টো ঢাল ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দেয়া। দ্বিতীয়ত, সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর আরও দুজন ঘনিষ্ঠকে নিয়ে বসা। অথচ মূল কথা হলো তিনি একটি মন্তব্য করেছেন কি করেননি। সেখানে কেন প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনতে হলো সেই প্রশ্ন সরকারি মহলের অনেকেই তুলেছেন।
কঠিন প্রশ্ন, তারা কেন এলেন? দু’জনের মধ্যে একটি মিল আছে। দু’জনেই সাবেক আমলা। আমলার বিপদে আমলার পাশে দাঁড়ানো। তবে গতকাল চায়ের টেবিলে আরো দু’টো নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। তারা হলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান।
প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে ইমামের অনেকেই সমালোচনা করেছেন। তবে একটি লক্ষণ পরিষ্কার। ক্ষমতাসীন দল থেকে একমাত্র সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাড়া সরাসরি নাম প্রকাশ করে কেউ তার সমালোচনা করেননি। মন্ত্রীদের অনেকে যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারাও কেউ নাম প্রকাশ করেননি। অনেকে বলেন, সুরঞ্জিত যা বলেছেন তা তিনি মন্ত্রী থাকলে বলতেন না। এই বিষয়টি নির্দেশ করে রাজনীতিক না হয়েও ইমাম কতটা শক্তি রাখেন।
ইমাম যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যথাযথভাবে মিডিয়ায় আসুক কিংবা না আসুক এমনকি সেটা যদি তার দাবিমতে খণ্ডিতভাবে এসেও থাকে তাহলেও প্রশ্ন দাঁড়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে টানলেন কেন? এটা করে দ্বিমুখী অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দু’রকম মিথ্যা বলেছেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। ১. মিডিয়া সম্পর্কে তিনি মিথ্যা বলেছেন। ২. প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা না হলেও তিনি তেমনটা দাবি করেছেন।
অবশ্য এটাও বিশেষভাবে লক্ষণীয় জনাব ইমামের দাবি যে সত্য নয়, সেটা মিডিয়া অজ্ঞাত সূত্রে প্রকাশ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কোন বিবৃতি জারি করা হয়নি। মসিউর রহমান কোন মন্তব্য না করলেও তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ইমামের বক্তব্য তিনি নৈতিকভাবে সমর্থন করেন। সুতরাং অনেকের মতে মিথ্যার দায় বহুমাত্রিক।
এইচ টি ইমাম নিজে বিবিসিকে প্রথম দিনই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘‘নির্দেশে’’ তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। আবদুস সোবহান নিজেও ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোন নির্দেশনা ছিল কিনা জানতে চাইলে সরাসরি তার উত্তর না দিয়ে আবদুস সোবহান বলেন, ‘এইচ টি ইমাম আমাকে ফোন করে ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান নীরব ছিলেন। কেন তিনি সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় সংবাদ সম্মেলন তাই সেখানে গিয়েছি। তাছাড়া তিনি আমার পুরানো সহকর্মী।
ইমাম বললেন তিনি কি বলেছেন তার ব্যাখ্যা দেবেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি তার বক্তব্য বিশদভাবে তুলে ধরবেন।’’ ১২ই নভেম্বরেও তিনি অহেতুক প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, আমাদের জননেত্রী সবসময়ই জিজ্ঞেস করেন। আমি যখনই কারও বায়োডাটা নিয়ে যাই, তখনই তিনি প্রশ্ন করেন ইনি কি ছাত্রলীগ করেছে? কোথায় ছিল? কি পর্যায়ে ছিল? …নেত্রী তো বলেছেন যেভাবেই হোক একটা ব্যবস্থা…’ একথার পরে অডিওতে করতালির শব্দ শোনা যায়। এর আগে তিনি বলেন, বায়ান্ন থেকে ছাত্ররাই চালিকাশক্তি। গত নির্বাচনেও ছাত্ররা চালিকাশক্তি ছিল।
পত্রিকায় এসেছে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এইচ টি ইমামের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (ইমাম) সঙ্গে কোন যোগাযোগই হয়নি। অথচ এই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী তার নাম প্রকাশে আগ্রহী নন।
ইমাম বলেন, ‘সাক্ষাতের সুযোগ না পেলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে। তবে কি ধরনের যোগাযোগ, তা তিনি বলেননি।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রসঙ্গে সমপ্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক সভায় যেসব মন্তব্য তিনি করেছেন, তার ‘অপব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে। কোন কোন মহল এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং তার বিরুদ্ধে ‘‘ষড়যন্ত্র’’ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু তিনি কি বলেছিলেন আর কি ছাপা হয়েছে সে বিষয়ে নির্দেশ করেননি। অডিও ক্লিপ পুরো ইন্টারনেট ফেসবুক ছেয়ে গেছে। অডিওগুলো জাল কিনা তা তিনি বলেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে গত ১২ই নভেম্বর এক আলোচনা সভায় এইচ টি ইমাম ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মন্তব্য করেন। কিন্তু ছাত্রলীগ কোন মন্তব্য করেনি। তারা বলেনি, ইমামের বক্তব্যে তারা বিব্রত হয়েছে।
এইচ টি ইমাম জোর দিয়ে বলছেন, তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এইচ টি ইমাম ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা; নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদেরকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।’ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের লিখিত পরীক্ষায় ভাল করতে হবে। তার পরে আমরা দেখবো।’