প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের অরাজনৈতিক বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনভাবেই মানতে পারছেন না। নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন দলীয় সভানেত্রীর মুখের দিকে।
দল ও সরকারকে বিব্রতকর ও সমালোচনার মুখে ফেলা উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ নেতাকর্মীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন বর্তমানে জনপ্রশাসন উপদেষ্টার দায়িত্বে থেকে নিয়োগ-পদোন্নতি ও পদায়ন বাণিজ্যেরও এন্তার অভিযোগ।
তাকে এখন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলে আরো অনেক অভিযোগের সমালোচনা প্রকাশ্যে চলে আসবে। এদিকে দল ও সরকারের বিভিন্নস্থানে কথা বলে জানা গেছে, এইচটি ইমামের সাথে প্রধানমন্ত্রীর আরেক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ছাড়া দল ও সরকারের কেউ এখন এইচটি ইমামের সাথে নেই। সবাই পর্যবেক্ষণ করছেন। পানি কোনদিকে গড়ায়।
ড. মশিউরের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠলে তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন এইচটি ইমাম। তাই এবার এইচটি ইমামের বিপদের সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মশিউর রহমান।
২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় তারা দু’জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। এবং নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু সুবিধা হাতছাড়া করেননি তারা। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তারা তার পুরস্কারও পান। এবার সুবিধার ঘাটতি হওয়ায় এইচটি ইমাম এখন অনেক কথাই বলছেন বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন।
গত সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়ে এইচটি ইমাম নিয়োগ-পদোন্নতি ও পদায়নের যতগুলো সুপারিশ ও ডিও লেটার ইস্যু করেছিলেন তার মধ্যে ভয়ঙ্কর ছিল নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের অন্যতম প্রধান আসামি নূর হোসেনকে নারায়ণগঞ্জেরর নবগঠিত সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে এইচটি ইমামের পক্ষ থেকে ওইসময়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বরাবর লেখা একটি চিঠিতে নূর হোসেনকে নবগঠিত সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার জন্য “বিশেষ অনুরোধ” জানিয়ে “অতি জরুরি” চিঠিটি লেখেন এইচটি ইমাম। ২০০৯ সালের ৮ জুন লেখা ওই চিঠিতে তিনি ওইসময়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বরাবর সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত নূর হোসেনকে নবগঠিত সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার জন্য “বিশেষ অনুরোধ” জানিয়ে “অতি জরুরি” চিঠিটি (স্মারক নং : সম/উপদেষ্টা/০১/২০০৯-১৯) পাঠিয়েছিলেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আলোচিত সেই চিঠির পর থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জের একক অধিপতি হয়ে উঠতে থাকেন নূর হোসেন। যদিও তৎকালীন স্থানীয় এমপি কায়সার হাসনাতের প্রচ- বিরোধিতার কারণে নূর হোসেনকে পৌর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়নি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
এইচটি ইমাম বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চিঠিটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা তার চিঠিতে নূর হোসেনকে তিনটি জায়গায় ‘আওয়ামী লীগ’ নেতা লিখেছেন। একটি জায়গায় এইচটি ইমাম তাকে (নূর হোসেনকে) ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নিয়োগটির সাথে বিশাল অংকের অর্থ আদান-প্রদানের বিষয়টি জড়িত ছিল।
বিষয়টি নিয়ে এইচটি ইমামের কাছে মন্তব্য জানার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের প্যাডে পাঠানো ওই চিঠিটির অনুলিপি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবকেও পাঠানো হয়েছিল। ওই সময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়। সরকারও সমালোচনা থেকে কিছুটা রক্ষা পায়। কিন্তু এবার এইচটি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার পদটি পেয়ে অরাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে সরকারকে সমালোচনায় ফেলেছেন। তার বক্তব্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তিনি এমন বক্তব্য দিলেন? দলের একাধিক সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রীরা মনে করেন প্রশাসনিক ক্ষমতা না পাওয়ার ক্ষোভ থেকেই অতি কৌশলে তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। দল ও সরকারকে সমালোচনায় ফেলেছেন। তার এ ধরনের বক্তব্য দলের নেতাকর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার পদ থেকে তাকে সরিয়ে না দেয়ায় দলের নেতাকর্মীরা হতাশাই প্রকাশ করছেন। অভিযোগ আছে এইচটি ইমাম সরকার ও দলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষুব্ধ।
সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার আশংকা ক্ষমতাসীন দলের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তার এ বক্তব্যের কারণে যে কোন সময় তাকে হেনস্থাও করতে পারে। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এইচটি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদেরকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। তার পরে আমরা দেখব।
এইচটি ইমামের এমন বক্তব্যের পরে গত কয়েকদিনে দলের ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু অব্যাহত আছে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্য ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।