বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হতে পারেন’-এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং দলের শীর্ষ নেতারাও এ নিয়ে কিছুটা শংকিত। এই শংকা থেকেই বেগম জিয়া গত কয়েকদিন থেকে নিয়মিত তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে দলের নীতি নির্ধারণী মহলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করছেন বলে দলীয় একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগকে ঘিরে এই গ্রেফতারের আশংকা চলছিল দলের অভ্যন্তরে। এরমধ্যে সোমবার এই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার করা তিনটি লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মধ্যে দুটি খারিজ করেন আদালত। আদালতের এই ঘোষণার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গ্রেফতারের গুজব দলের নেতাকর্মী এবং অন্যান্য মহলে ছড়িয়ে পড়ে।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আইনের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি- সরকার বেগম জিয়ার মামলাগুলোকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। বিএনপি যেন কোনো কঠোর কর্মসূচি না দেয় সে জন্যই বার বার মামলার বিষয়টি উঠে আসছে। তিনি বলেন, চেয়ারপারসন গত কয়েকটি বৈঠকে গ্রেফতার এবং আটকের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। দলকে চাঙ্গা করে দ্রুত তীব্র আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি গ্রেফতার হলেও আন্দোলন চাঙ্গা রাখতে হবে।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এর আগেও সরকার বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছে। ম্যাডাম নিজেও বলেছেন, তিনি গ্রেফতার হলেও দল থেকে সরকার পতনের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। সরকার বিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে আন্দোলনকে বেগবান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দল থেকে।
বেগম জিয়ার গ্রেফতারের গুজব প্রসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মামলা হামলা দিয়ে সরকার বিএনপিকে দমন করতে চায়। যখনই আমরা কোনো কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেই তখনই শুরু হয় গণহারে গ্রেফতার। সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। তিনি বলেন, বেগম জিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের মামলা দিয়ে আটকানোর প্রক্রিয়া এই সরকার শুরু থেকেই করছে। তবে সরকারকে বলতে চাই, কোনো মামলা হামলা দিয়ে বিএনপিকে প্রতিহত করা যাবেনা। জনগণই আপনাদের চায় না।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। সরকার বিএনপিকে দুর্বল করতে মামলা জেল গ্রেফতার এই কৌশল নিয়েছে। বেগম জিয়া গ্রেফতার হলেও আন্দোলন চলবে। সরকারের এই কৌশল খুব বেশিদিন কাজে আসবেনা। এছাড়া সোমবার বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গিয়ে ও উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বেগম জিয়ার গ্রেফতারের গুজব এবং নেতাকর্মীদের উদ্বেগ উঠে এসেছে।
বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে একটাই প্রশ্ন, দুটি আপিল আবেদন খারিজ হয়েছে। আরেকটিরও শুনানী শেষ। এরপর তাহলে কি হবে? বেগম জিয়া কি গ্রেফতার হবেন? জেল খাটবেন? উল্লেখ্য, জিয় অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার করা দুটি লিভ টু আপিল খারিজ হয়েছে। এই মামলায় অভিযোগ আমলে নেয়া ও অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আবেদন হাইকোর্টে খারিজ হয়। এর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে একটি এবং চলতি বছর অপর লিভ টু আপিল করেন তিনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে আজ আদেশের দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।