ফেনী শহরের শাহীন একাডেমি সড়কে ভাইয়ের ‘কারাগারে’ ৫ বছর বন্দি অবস্থা থেকে জাহানারা বেগম রোজী (৪৫) ও তার ছেলে মেহেদী ইসলাম জীমুনকে উদ্ধার করে পুলিশ। বুধবার একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের চিকিত্সার জন্য ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি কারা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাত্ করতেই বোন-ভাগিনাকে মানসিক প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ২০০৯ সালে একটি কক্ষে আটকে রাখে রোজীর বড় ভাই শেরশাহ। ২ ভাই ৬ বোনের মধ্যে অপর ভাই শাহেনশাহ মানসিক ভারসাম্যহীন। এক বোন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। বড় ভাইয়ের ভয়ে অন্য চার বোনের কেউই রোজীর খোঁজ নিতে আসে না। শহরের বিশাল বাড়িতে দুটি পাকা ঘরের একটিতে দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলে থাকত। এই ঘরে শেরশাহ মাঝে মধ্যে আসতেন বলে স্থানীয়রা জানান।
অন্য ঘরের দুটি কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়। ভাড়ার ৪ হাজার টাকা দিয়ে চলে রোজী ও তার সন্তানের ভরণপোষণ। ভাড়াটিয়ারা জানায়, তালাবদ্ধ ওই কক্ষের জানালা দিয়ে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য দেয়া হয়ে থাকে। এতে মা-ছেলের অর্ধাহারে-অনাহারে কোনোরকম দিন কাটে। ভাড়াটিয়ারা না থাকলে ওদের মাঝে মাঝে না খেয়েই থাকতে হয়। ভুতুড়ে ওই কক্ষের ভিতরে একটি লাইট থাকলেও পাখাটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কক্ষে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না থাকায় উত্কট গন্ধ বের হয়।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে জাহান আরা বেগম রোজী ভিকারুননিসা নূন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। স্বামী আবুল কালাম আজাদ ভূঞা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হিসেবে সিলেট সদর উপজেলায় কর্মরত। তাদের একমাত্র ছেলে মেহেদী ইসলাম জীমুনের জন্মের কিছুদিন পর আজাদ-রোজীর সংসার ভেঙে যায়। এরপর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন রোজী। চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ভাইয়ের ‘কারাগারে’ বন্দি জীবন কাটে তার।
এদিকে রোজীর বড় বোন নুরুন নাহার জানান, রোজী মানসিক অসুস্থ হওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা করালেও ভালো না হওয়ায় তাকে আটকে রাখা হয়।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শরিফুল ইসলাম তানভীরের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করেন ফেনী মডেল থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় কমিশনার ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
ফেনী মডেল থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ মা-ছেলেকে জোরপূর্বক বন্দি রাখা হয়েছে কি না আসলেই তারা মানসিক রোগী বিষয়টি পরে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলে জানান।