আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়ে সেই আন্দোলনে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘ভালো কিছু পেতে হলে কিছু কষ্ট করতে হয়। আন্দোলনে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব। এক কাতারে চলি, দেখি কীভাবে পুলিশ গুলি করে। এবার গুলি করে গদি রক্ষা হবে না। সরকার ভেবেছে, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বন্দি করে তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পারবে। তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, খুব শিগগিরই তাদের পতন হবে।’
শনিবার কুমিল্লায় স্মরনকালের বৃহত্তম জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে জনসংযোগের অংশ হিসেবে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জনসভার আয়োজন করে স্থানীয় ২০ দল। এটি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ঢাকার বাইরে তার নবম জনসভা। কর্মসূচি শেষে রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন ঢাকায় ফেরেন।
‘খুব শিগগিরই’ সরকারের পতন ঘটবে বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সরকারের সাড়া না দিলে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
যখনই ডাক দেয়া হবে, তখনই আন্দোলনে নেমে পড়তে সবার প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও জাসদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘হাসিনা এখন খুনিদের দ্বারা বেষ্টিত।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তারা জানে যে জনগণ তাদের পিষে ফেলবে, সেজন্য তারা খুনিদের ছাড়তে চায় না।
শেখ হাসিনা সরকার র্যাব-পুলিশকে বিরোধিতা দমনের কাজে ব্যবহার করছে বলেও দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর দখলদারিত্ব চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসেন। দুপুর না পেরো হতেই মাঠ পেরিয়ে আশপাশের এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। কুমিল্লার ১৬টি উপজেলার পাশাপাশি ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর থেকেও ২০ দলের নেতাকর্মীরা এই জনসভায় যোগ দেন।
জনসভামুখী বিভিন্ন মিছিলে অনেকের হাতে ছিল ধানের শীষ প্রতীক; জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় প্রতিকৃতি ছিল অনেকের হাতে। অনেক মিছিলে ছিল বাদক দল।
জনসভাস্থল টাউন হলের মাঠে ওড়ানো হয় ছোট-বড় অন্তত ২০টি বেলুন। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবিখচিত বেলুনের পাশাপাশি জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি সংবলিত বেলুনও ছিল এর মধ্যে।
কুমিল্লার প্রবেশ মুখ সেনানিবাসের কাছ থেকে জনসভাস্থল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের পথে পথে ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়। মাঠের বাইরে থাকা মানুষও যাতে বক্তৃতা শুনতে পারে, সেজন্য ২০০ মাইক লাগানো হয় বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
আদালতের মুখোমুখি না হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন তা জানতে চেয়েছেন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনি কেনো ফ্রিগেড ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলসহ অন্য দুর্নীতি মামলাগুলো তুলে নিলেন। ফ্রিগেড ক্রয়সংক্রান্ত মামলায় তো আপনার সাজা হতো। আপনি কেনো আদালতকে ফেস করলেন না। নিরপেক্ষভাবে ফেস করতেন দেখতাম আপনার কতো সাহস।
সরকারকে জুলুমবাজ আখ্যা দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে বর্জন করুন। দেশে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। সুদিনের আগে কিছু কষ্ট করতে হয়। এখন যে আন্দোলনের ডাক দেব তাতে আপনরা শরিক হবেন।
তিনি বলেন, ডিবি পুলিশ এখন চুক্তিতে মানুষ খুন করছে। যার কারণে এখন ডোবা-নালায় লাশ পাওয়া যাচ্ছে, যা স্বাধীনতার পরপর দেখা যেতো।
তিনি বলেন, হাসিনা এখন খুনিদের দ্বারা বেষ্টিত। গদি না থাকলে জনগণ পিষে ফেলবে; তাই ভয়ে গদি ছাড়তে চায় না। এরশাদ, ইনু ও আওয়ামী লীগ— সব খুনি এখন এক হয়ে খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। ইনু বলে আওয়ামী লীগ ত্রিশ হাজার এবং আওয়ামী লীগ বলে জাসদ বিশ হাজার নেতাকর্মী খুন করেছে। এরশাদ ড. মিলনের খুনি।
খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রায়ই নাটক সাজায়। বিদেশিদের দেখাতে দাড়ি-টুপি দেখলেই জঙ্গি বলে। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, এরা জঙ্গি নয়; এরা আলেম, সত্যের অনুসারী এবং ইসলামের কথা বলে। এই সরকারের আমলে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের বক্তব্য উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘এইচটি ইমাম, হাসিনাদের ইমাম। তিনি সব জারিজুরি ফাঁস করে দিয়েছেন। কীভাবে ভোটকেন্দ্রে লোক নিয়োগ করা হয়েছে, কীভাবে ব্যালট বাক্স ভরেছে, সব ফাঁস করে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, এইচটি ইমাম এত বড় সত্য কথা বলার পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, ‘এই ইমামকে নিয়ে ইমামতি করলে সেটি হালাল হবে না। এই ইমামের পিছনে না থাকলেই তাদের ভালো হবে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন দুদক হলো দায়মুক্তি কমিশন। দুদক আওয়ামী লীগের নেতাদের সব দুর্নীতি থেকে মুক্তি দিচ্ছে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল হক চৌধুরী, যুব দল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মহিলা দল সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, স্থানীয় বিএনপি জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আমিন-উর রশীদ ইয়াছিন, উত্তরের সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, সিটির মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, সাবেক সাংসদ আনোয়ারুল আজীম, জাকারিয়া তাহের সুমন, আবদুল গফুর ভূঁইয়া প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্য এলডিপির অলি আহমেদ, রেদোয়ান আহমেদ, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শাহিদুর রহমান তামান্না, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, ইসলামিক পার্টির আবদুল মোবিন, এনডিপির খন্দকার গোলাম মর্তুজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের গরিবে নেওয়াজ, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, জমিয়তে উলামা আল ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, জেলা জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, দক্ষিণ জেলা আমির আবদুস সাত্তার, উত্তর জেলা আমির মাওলানা আবদুল আউয়াল, সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জাপা নেতা এয়ার আহমেদ সেলিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।