আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শক্তিশালী অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র দেখতে ও একসঙ্গে কাজ করতে চায়। এছাড়া সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের আহ্বানও সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্তরোত্তর উন্নতিও কামনা করেছেন।
তিনদিনের সফর শেষে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে শনিবার দুপুরে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমরা সামনে এগোতে চাই। আধঘণ্টার ওই সংবাদ সম্মেলনে তার পাশে ছিলেন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা।
সফরকালে নিশা দেশাই বিসওয়াল সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে ঠিক কী নিয়ে আলাপ হয়েছে, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে নিশা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকল ধরনের রাজনৈতিক আলোচনা উত্সাহিত করি। রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বপূর্ণ আচরণকেও উত্সাহিত করি। তাই বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে নির্বাচন কবে হবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম সহিংসতামুক্ত থাকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়ে বিএনপি নেতার অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ‘জিএসপি’ ফিরে পাওয়ার বিষয়ে নিশা দেশাই বলেন, ‘এটা মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের কাজ। এই বিষয়ে আমার কোনো অবস্থান নেই।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে নিশা দেশাই বলেন, শ্রমিকের অধিকার ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে অনেক কিছু করেছে। এ ক্ষেত্রে দেশটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমমানের উন্নয়ন, কর্মস্থানে শ্রমিকের নিরাপত্তা, ট্রেড ইউনিয়ন করার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য একটি মূল্যায়ন কমিটি রয়েছে। এই কমিটি বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করেছে। আগামী দিনে সেই কমিটির বৈঠক হবে। জিএসপি ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বস্ত্র খাতে অনেক উন্নতি করেছে। বিশেষ করে, রানা প্লাজা ধসের পর দুই হাজার গার্মেন্টস পরিদর্শন করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০ কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। ২০০ কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এগুলো খুবই ভালো উদ্যোগ। এসব উন্নয়ন জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে সহযোগিতা করবে।’
বাংলাদেশে সফরে আসার আগে মার্কিন এই সহকারী মন্ত্রী সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সার্কের বিষয়ে তিনি বলেন, সার্ক ক্রমেই তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক উন্নত করতে সমর্থ হচ্ছে। এর মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সার্কের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের গণমাধ্যম কর্মকর্তা মনিকা শাই প্রমুখ।