মাদকাসক্ত স্বামী নিজের পরকীয়ার পথে বাধা দূর করতেই এক সময়ের শিশুশিল্পী নায়ার সুলতানা লোপাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার মা রাজিয়া সুলতানা।
আশির দশকের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘এইসব দিনরাত্রি’র ‘টুনি’র লাশ কবর থেকে তুলে আবার ময়নাতদন্তের জন্য আদালতের নির্দেশের দুদিন পর শুক্রবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) কার্যালয়ে রাজিয়া বলেন, লোপার স্বামী আলী আমিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাজ নামের এক মেয়ের ফেসবুকে পরিচয় হয়। মেয়েটি বাংলাদেশে এলেই তার সঙ্গে রাত কাটাতো। এছাড়াও টুনির অগোচরে আলী অনেক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
লোপার মা বলেন, আনোয়ারা (১০) ও আজারা (৯) নামে দুই মেয়ে রয়েছে। কিন্তু আদালতে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে বলে দেখানো হয়। বয়সও কমিয়ে দেয়া হয়। আলী আমিনের জামিনের জন্যই আদালতে ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রাজিয়া বলেন, ‘২০০০ সালে লোপার বিয়ের পরই জানতে পারি আলী আমিন মাদকাসক্ত। দুটি মেয়ে জন্ম নেয়ায় নির্যাতন সহ্য করেও টুনি সংসার চালাতে থাকে।’
লোপার ঝুলন্ত লাশ গত ১৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে তার শ্বশুরবাড়িতে উদ্ধারের পর হত্যার অভিযোগ তোলে আলী আমিনের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি।
এরপর ময়নাতদন্তে লোপার মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হলে তাতে আপত্তি জানিয়ে আবার ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে যান রাজিয়া।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও সুরতহাল প্রতিবেদনের মধ্যে গরমিল রয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে রাজিয়া বলেন, সুরতহালে লোপার হাত, কুনুই ও গলায় আঘাতের দাগ ছিল উল্লেখ করা হলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তা নেই।
লোপার মা বলেন, ‘ও আত্মহত্যা করেনি। ওকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর টাকা দিয়ে ওর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কিনে ফেলেছে স্বামী।’
এদিকে মামলার পর গ্রেপ্তার আলী আমিন পুলিশের কাছে দাবি করেন, গুলশানের ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে তার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে নায়ার আত্মহত্যা করেছেন। আর তখন তিনি বাড়ির বাইরে ছিলেন।
এদিকে লোপার মায়ের মামলার এজাহারেও বলা হয়েছে, বাবা-মায়ের প্রশয়ে মাদকাসক্ত আলী আমিন প্রতিদিন লোপাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন।
এজাহারে বলা হয়, এ নির্যাতনের মধ্যেই ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে যে কোনো সময় তারা তিনজন লোপাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখে।
লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে লোপার গলার ডানে এবং বাম হাতের কবজিতে আঘাত সদৃশ চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
এরপর গত ১৬ নভেম্বর দেয়া ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে লোপা ‘আত্মহত্যা’ই করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়।
লোপা নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে প্রচারিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকে ‘টুনি’ চরিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
নাটকের শেষ পর্যায়ে ‘টুনি’ অসুস্থ হয়ে পড়লে সারা দেশের অসংখ্য মানুষ হুমায়ূন আহমেদের কাছে চিঠি লিখে তার প্রাণ রক্ষার আবেদন জানান।