নতুন বছরের শুরু থেকেই কঠোর হচ্ছে বিএনপি। পাল্টে যাচ্ছে কর্মসূচির ‘নরম’ মেজাজ। বিএনপি বিহীন বিগত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের দিনে ঢাকায় ‘জনস্রোত’ সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ঢাকার ভেতরে অথবা আশপাশে হতে পারে সমাবেশ। যেখান থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারকে ‘না’ বলে দেয়ার আহ্বান জানাবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে আসা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রবল প্রতিরোধের মুখে গত বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচন নিয়ে দেশের ভেতরে-বাইরে নানা বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচনই হয়নি ১৫৪টি সংসদীয় আসনে। ভোটার উপস্থিতির হার ছিল খুবই নগণ্য। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে নেতিবাচক অবস্থান নেয় প্রভাবশালী দেশগুলো। এ অবস্থার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম বছর পূর্তি করতে যাচ্ছে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি লাগাতার আন্দোলনের পথ পরিহার করে দল পুনর্গঠন এবং সরকারবিরোধী নতুন ধাপের আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়। গত ১১ মাস দলটি প্রধানত এ দু’টি কাজেই ব্যয় করেছে। এই সময়ে বিএনপি রাজপথে কঠোর কোনো আন্দোলনের কর্মসূচিতে যায়নি। সরকারকে বারবার আলোচনায় বসে নতুন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া ঢাকার বাইরে ৯টি সমাবেশ করেছেন। প্রতিটি সমাবেশ থেকেই সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একইসাথে তিনি কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেন। এর উত্তরে অবশ্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। কোনো আলোচনায় বসতেও রাজি নয় তারা। আপাতদৃষ্টিতে, গেল ১১ মাস দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘শান্তিপূর্ণ’ মনে হলেও সরকার নানামুখী চাপে রয়েছে বলে রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে। এই চাপ কাটাতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে সরকার কোণঠাসা অবস্থানে রেখেছে। সভা-সমাবেশের ওপর অঘোষিত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাজধানীতে খালেদা জিয়াকে সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলছে মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি নতুন বছরের শুরু থেকেই আন্দোলনের মাঠে কঠোর হতে শুরু করবে। ৫ জানুয়ারিকে টার্গেট করে রাজধানীসহ সারা দেশে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসের চলমান কর্মসূচিকে সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে নিয়ে যেতে চান বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, মহান বিজয় দিবস উদযাপনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এসব কর্মসূচি শেষে সরকার পতনের এক দফার নতুন আন্দোলনের কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সেই আন্দোলন চূড়ান্তপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
দলের শীর্ষ একজন নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারি ঘিরে বড় ধরনের গণজমায়েতের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ঢাকায় সমাবেশ হলে ওই দিন পুরো ঢাকায় জনস্রোত নামবে। ঢাকায় নির্ধারিত সমাবেশস্থলে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে একযোগে রোডমার্চের আদলে যোগ দেবেন। অথবা ঢাকার আশপাশেও ওই দিন সমাবেশ হতে পারে। খালেদা জিয়া রোডমার্চ করে বিপুল জনসমাগম করে ওই সমাবেশে অংশ নেবেন। যেখান থেকে সরকারের প্রতি ‘না’ বলার আহ্বান জানাতে পারেন তিনি। ওই নেতা জানান, সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়াকে যে যেখানে আছেন, সবাইকে ৫ মিনিটের জন্য সরকারকে ‘না’ জানিয়ে অবস্থান নিতে বলতে পারেন।
দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসের আন্দোলনে ঢাকায় সভা-সমাবেশের জন্য প্রশাসন অনুমতি না দিলে হরতাল দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বিএনপি।
জানা গেছে, নতুন বছরের শুরু থেকেই আন্দোলনের মাঠে থাকবেন খালেদা জিয়া। কুমিল্লায় ২০ দলীয় জোটের সর্বশেষ জনসভায় খালেদা জিয়া নিজেই আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘শিগগিরই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এবার আন্দোলনে আমি আপনাদের সাথে এক কাতারে থাকব। দেখি কিভাবে পুলিশ গুলি করে। গুলি করে এবার আর গদি রা হবে না।’
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেন, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। এই মাসে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম। গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল বিজয়ের চেতনা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মতাসীন আওয়ামী লীগ পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এখন সময়ের দাবি। সেই ল্য নিয়েই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট জনমত গঠনে গণসংযোগ কর্মসূচি চালাচ্ছে। শিগগিরই সরকারকে নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।