দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ সব ধরনের প্রতিকূলতার কথা মাথা রেখেই সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে বিএনপি। সিনিয়র নেতাদের পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হলেও যাতে আন্দোলনে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেভাবেই ছক সাজানো হচ্ছে। নেতৃত্ব সঙ্কট এড়াতেও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
গত কয়েকদিন ধরেই রাজনৈতিক মহলের আলোচনার বিষয়, যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও প্রকাশ্যেই এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এরপরও আন্দোলনে গতি মন্থর করার কোনো পরিকল্পনা নেই বিএনপির। বরং শীর্ষ নেতৃত্বের অবর্তমানেও যাতে আন্দোলন এগিয়ে নেয়া যায় সে কর্মপন্থাও ঠিক করছে দলটি।
এ ব্যাপারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা এত সহজ নয়। এরপরও সরকারের বেপরোয়া আচরণের অংশ হিসেবে তাকে আটক করার বিষয়টি অসম্ভব নয়। তবে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে আন্দোলন দমানোর পরিকল্পনা করা হলে সেটা হবে সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল।
কারণ, শীর্ষ নেত্রী গ্রেপ্তার হওয়া মাত্র আন্দোলন আরো ফুঁসে উঠবে। দলের এখনো যারা ঘরে বসে আছেন তারাও বিবেকের দংশনে মাঠে নেমে আসবেন। তখন কোনো অবস্থাতেই আন্দোলন দমাতে পারবে না সরকার।
শীর্ষ নেত্রী আটক হলে বিএনপির হাল কে ধরবে এমন প্রশ্নের জবাবে নোমান বলেন, গঠনতন্ত্রে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তো কিছু বলা নেই। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপারসনের সাময়িক অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। তা করা সম্ভব না হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া সম্পাদকম-লীর সদস্যরা তো রয়েছেনই। বিএনপিতে নেতার কোনো অভাব নেই। নেতৃত্ব সঙ্কট হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
সূত্রমতে, বয়স ও অসুস্থতার কারণে শীর্ষস্থানীয় নেতা ও স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থাকতে পারবেন না। এর মধ্যে যদি খালেদা জিয়া আটক বা গৃহবন্দি হন তাহলে সিনিয়র নেতৃত্বে ব্যাপক শূন্যতার সৃষ্টি হবে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যায়ক্রমিক সিনিয়র নেতাদের আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অধিকাংশ নেতা এরই মধ্যে মানসিক প্রস্তুতিও নিয়েছেন। এছাড়া অপেক্ষাকৃত নবীন নেতৃত্ব বিশেষ করে '৯০-এর গণ-আন্দোলনের সফল নেতাদের সামনের কাতারে আনা হচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কোনো অবস্থাতেই এবার যাতে আন্দোলন ব্যর্থ না হয় সে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তাই আন্দোলন সফলে প্রতিকূল দিকগুলো এরই মধ্যে চিহ্নিত করেছে দলটি।
এগুলো হচ্ছে_ আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল এবং ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দিশাহারা, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুনর্গঠন সম্ভব হচ্ছে না, মামলা হামলা কারণে তৃণমূলও অনেকটা বিধ্বস্ত, ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। সাংগঠনিক এত সম
স্যার মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে সরকারের সঙ্গে জামায়াতের অাঁতাতের সন্দেহ। আর দল ও জোটের বাইরের সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সরকারের প্রতি একতরফা সমর্থন। এখনো পুলিশ ও প্রশাসন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে।
পাহাড়সমান এসব প্রতিকূলতার পরও আন্দোলন সফল হওয়ার আশা করছে বিএনপি। এর কারণ হিসেবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, সমস্যাগুলো প্রকাশ্যে এসেছে কিন্তু কৌশলগুলো আন্দোলনের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। সমস্যা ধরে এক-একটি করে সমাধানের প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।
যেমন, ছাত্রদলের সঙ্কট প্রায় সমাধানের পথে, ঢাকা মহানগর ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি ঘোষণা আসবে চলতি মাসেই, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুনর্গঠনে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে কার্যকরী নির্দেশনা দিয়েছেন, তুনমূলকে চাঙ্গা রাখতে বিএনপি চেয়ারপারসনের একের এক জনসভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর স্বল্প সময়ে সব সাংগঠনিক জেলা পুনর্গঠন সম্ভব না হওয়ায় আগের কমিটির আস্থাভাজন নেতাদের আন্দোলন সফলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দলের বাইরে জামায়াতকে নিয়ে যে সমস্যা আছে তা আন্দোলনে খুব বেশি নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে না। এছাড়া পুলিশ ও প্রশাসনে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে প্রশাসনে থাকা বিএনপিপন্থী এবং নিরপেক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক করার চেষ্টা চলছে।
এ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা কাজ করছেন। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি কিছু সরকারি কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বৈঠকের বিষয়টি বিএনপি অস্বীকার করেছে। এ বৈঠক সমন্ব্বয়হীনতার জন্য দলের অসন্তুষ্টি থাকলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, অনেক প্রতিকূলতার পরও আশার দিক হচ্ছে_ ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, সরকারি এবং বেসরকারি সর্বস্তরের প্রতিনিধি বিএনপির পক্ষে আন্দোলনে সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর আন্তর্জাতিক মহলও দিয়েছে সবুজ সংকেত। তাই সব প্রতিকূলতা জয় করে আসন্ন আন্দোলন সফল হবে।
আসন্ন আন্দোলনের সফলতার আশা প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অতীতে বাংলাদেশে কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। ৫ জানুয়ারির আগের আন্দোলনও ব্যর্থ হয়েছে তা বলা যাবে না। অতীতে যেমন কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি ভবিষ্যতেও হবে না।