'আমরা আপনাদের ১২ মাস সময় দিয়েছি। আর দিবোনা। সময় থাকতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। তা না হলে আপনাদের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ, কঠিন এবং ভয়াবহ হবে’। সবাইকে তিনি বলেন, আর চোখের পানি নয়। একসাথে জালেম সরকারকে বিতারিত করতে হবে':বলেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির চক্রান্ত প্রতিরোধ, গুম-খুন-গুপ্ত হত্যার প্রতিবাদ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত ২০ দলীয় জোটের বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনার গাঁয়ের কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন বালুর মাঠে আয়োজিত জনসভায় জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সঞ্চালনে উক্ত জনসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি সমবেত জনতাকে জিজ্ঞাস করেন, দেশের মানুষ কেমন আছে? সমবেত সবাই উত্তর দেয় ‘ভাল নেই’। এ সময় দেশনেত্রী বলেন জালেম সরকারের জন্য আজ দেশের মানুষ ভাল নেই। কাজেই দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটারবিহীন দুর্নীতিবাজ সরকারকে সরাতে হবে। তাহলেই দেশে শান্তি, উন্নয়ন এবং মানুষের বাক-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা পাবে। মানুষ ধর্মকর্ম করতে পারবে।
বিজেয়ের এই মাসের উদৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে দেশের মানুষের মনে শান্তি নেই। কারণ আওয়ামী লীগের দ্বারা মানুষ পদে পদে লাঞ্চিত, অত্যাচারিত।
তিনি বলেন, দেশের কোন প্রতিষ্ঠান ঠিক নেই। সবজায়গায় দলীয়করণ। ফলে সবকিছু আজকে অকার্যকর। গণতন্ত্র নেই বলে সীমাহীন দুর্নীতি এবং প্রশাসনে দলীয়করণ চলছে। ভালো ভালো অফিসারদের চাকরি থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে এবং ওএসডি করে দেয়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগে মিথ্যা অভিযোগে ১ জনকে চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ১১ খুনের ঘটনার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, এই সরকারে আমলে আপনাদের নারায়ণগঞ্জের ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে সাত জন কিন্তু খুন করা হয়েছে ১১ জনকে। এ খুন কারা করেছে? খুনিদের বিচার কেন হয়নি? যারা খুন হয়েছে তাদের স্বজনরা কি বিচার পেয়েছে? কেন তারা বিচার পাচ্ছে না? কারা জড়িত?
এর সাথে সরকারের লোকজন এবং র্যাব জড়িত। এই নিরপরাধ মানুষগুলোকে ধরে নিয়ে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়ে দেয়া হয়। লাশ ভেসে উঠেছিল। সবাই জানেন খুনিরা কিভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এ ঘটনার আসল হোতাকে ধরতে হবে। আসল হোতা হল র্যাবের জিয়াউল হাসান। সে খুন করেছে সরকারের ইশারায়। তাকে গ্রেফতার করা হলে এই সরকারের সময় সংগঠিত সব খুন এবং গুমের রহস্য বের হয়ে যাবে তাই তাকে ধরা হচ্ছে না। কাজেই এই জিয়া, চাকুরিতে থাকতে পারে না। তার বিচার করতে হবে। গত কয়েকদিন আগে মানবাধিকার দিবস গেল। ঐদিন গুম খুন হওয়া মানুষের স্বজনদের হাহাকার, চোখের পানি আমরা দেখেছি। ১ বছর হয়ে গেছে এখনও কোন বিচার হয়নি। কাজেই খুনিদের বিচার করেতে হবে।
দেশনেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলেই মানুষ হত্যা, গুম, খুন বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগের জোটের সাথে জড়িত সবাই খুনি। আওয়ামী লীগ বলে জাসদ আওয়ামী লীগের ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, অন্যদিকে জাসদ বলে আওয়ামী লীগে তাদের ৩০ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এদের সাথে যোগ হয়েছে খুনি এরশাদ। এরশাদের নাম বিশ্ববেহায়া।
আর হাসিনা হচ্ছে স্বঘোষিত বেঈমান। বিশ্ববেহায়া এরশাদ এবং স্বঘোষিত জাতীয় বেঈমান আজ একসাথে। কাজেই দেশের আজকে কি অবস্থা তা আপনারা বুঝতেই পারছেন। এইসব বেহাইয়া এবং বেঈমানদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আর এজন্য ইয়ংদের (যুবক) এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। দেশকে বাঁচাতে হবে। গুম, খুন বন্ধ করতে হবে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারে দুর্নীতির বিভিন্ন ডকুমেন্ট তাদের হাতে ছিল এবং এ কারণেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। সাগর রুনি হত্যাকান্ডের পর তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরা হবে কিন্তু চার বছর হয়ে গেল এখনও কোন বিচার হয়নি। হাসিনা তখন বলেছিল, কারো বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব না। তাই এখন বেডরুমেও মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। খুন করা হচ্ছে ঘরে ও বাইরে।
তিনি বলেন, সংসদে বিরোধীদল নেই। যারা বিরোধীদলে আছে তাঁরা আবার মন্ত্রীসভায়ও আছে। তাদের জিজ্ঞাস করুন কোথায় থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আপনারা? কত ভোট আপনারা পেয়েছেন? তারা এখন ব্যস্ত শুধু ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে। ৯৫% মানুষ ভোট দেয়নি। বাকি যে ৫ ভাগ আছে তারাও ঠিকমত ভোট দেয়নি। নির্বাচন কমিশন ভোটের ফলাফল প্রকাশ করার জন্য ২ দিন সময় নিয়েছিল হিসাব মেলানোর জন্য। কাজেই আমাদের ডাকে দেশের মানুষ ঐ নির্বাচন বয়কট করেছিল।
দেশনেত্রী বলেন, সরকার ব্যস্ত লুটপাটে। কৃষি ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা তারা লুট করেছে। শেয়ার বাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি থেকে তারা টাকা লুট করেছে এবং তাদের অর্থমন্ত্রী বললো এ টাকা সামান্য টাকা। কুইক রেন্টালের নামে চলছে লুটপাট।
এখন শীতকাল তাই কিছুটা বিদ্যুৎ থাকে কিন্তু গরমকালে কি পরিমাণ লোডশেডিং ছিল তা আপনারা দেখেছেন। কুইক রেন্টাল থেকে সরকার ১৭০০০ কোটি টাকা লুট করেছে। সরকার বলছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০৫০০ মেগাওয়াট কিন্তু প্রকৃত উৎপাদন হচ্ছে ৬০০০ মেগাওয়াট। এর পরেও দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম।
মানুষ গ্যাস পাচ্ছে না ঠিকমত। গুলশানের মত জায়গায়ও ঠিকমত গ্যাস থাকে না। গ্যাসের অভাবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে মানুষ ঠিকমত গ্যাসের জন্য দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেতে পারছে না। অন্যদিকে সরকার গ্যাস এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে কিন্তু আমাদের দেশে সরকার বাড়াতে চাচ্ছে। কাজেই দাম বাড়াতে দেয়া হবে না। দাম কমাতে হবে। আবার বাড়ালে আমরা বসে থাকব না। আমরা যদি কর্মসূচি দেই আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন না? সবাই সমস্বরে বলেন ‘থাকব’। তখন দেশনেত্রী বলেন, সাবাস। কর্মসূচি দিলে আমারদের কিছু বলার থাকবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময় দেশে কোন কর্মসংস্থান থাকে না। দেশে নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠেনি। বেকারত্ব বাড়ছে। দেশের এক্সপোর্ট (রপ্তানি)কমে গেছে। আগে আমরা ঔষধ, গার্মেন্টস, পাট এবং সিরামিকসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতাম। এখন এগুলো কমেছে। কাজেই আওয়ামী লীগ আসলে দেশে পিছিয়ে যায়। তাদের কাছে দেশের কোনকিছুই ভালো থাকেনা। দেশের কৃষকদের মাথায় হাত। একদিকে ৫ লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় ৫ হাজার টন চাল রফতানি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মিল মালিকদের ব্যবসা শেষ করে দেয়া হচ্ছে। ৩০০ টাকা বস্তার সার এখন ১২০০ টাকা বস্তা। তারা মুখে এক কথা বলে আর কাজের সময় অন্য কাজ করে। এদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়।
পুলিশকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, পুলিশ দিয়ে আজকে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। পুলিশের সবাই কিন্তু খারাপ না। কিছু কিছু ভালো পুলিশ আছে। কিন্তু পুলিশে একটি বিশেষ অঞ্চলের লোক পুলিশকে কুলষিত করছে। এর সাথে ছাত্রলীগকে যুক্ত করা হচ্ছে। পুলিশের পোশাক পরিয়ে তাদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আলেমদের হত্যা এবং নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা এখন বলে আমরা কি এই জন্যই যুদ্ধ করেছি? যোদ্ধারা এখন কেঁদে মরছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তারা কিভাবে লুঙ্গী পরে যুদ্ধ করেছে তা আপনারা দেখেছেন। তারা এখন বলছে, আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেইনি।
আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের দল নয় দাবি করে তিনি বলে, বিএনপি স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের দল। রণাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধ বিএনপি করেছে। আওয়ামী লীগ সীমান্তের ওপারের দল। জিয়াউর রহমানের ডাকে এদেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একে খন্দকার তার বইয়ে স্পষ্ট বলেছেন যে, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাজউদ্দীন আহমেদের মেয়ে শারমিন আহমেদ তার ‘নেতা ও পিতা’ বইয়ে লিখেছেন কিভাবে শেখ মুজিব রাষ্ট্রদ্রোহিতার ভয়ে লিখিত স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে সাক্ষর করেনি। টেপ রেকর্ডারেও ঘোষণা দেননি। তাজউদ্দীন আহমদেসহ অনেককে বলেছিল আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে। ২৭ তারিখ হরতালে যোগ দিতে। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান নিজের, পরিবারের এবং ফাঁসির ভয় কাটিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কাজেই এ বিজয় জনগণের বিজয়। এতে আওয়ামী লীগের কোন কৃতিত্ব নেই।
তিনি বলেন, আপনি কেন মঈনুদ্দিন ফখরুদ্দিনের সাথে আঁতাত করেছিলেন? কেন দেশের এমন ক্ষতি করলেন? আমি বলেছিলাম আমি বিদেশে যাব না। কোন আঁতাত করবো না। এজন্য তারা আমার ছেলেকে নির্যাতন করেছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, দেশের বাইরে আমার কোন ঠিকানা নেই। আমি এ দেশেই থাকব।
অন্যদিকে হাসিনা আঁতাত করে প্যারোলে জেলখানা থেকে বের হয়ে মেহেদি লাগানো হাতে হাত নেড়ে সবাইকে অভ্যর্থনা জানায়। বিদেশে চলে যায়। আমি সেদিন যাইনি। কাজেই বুঝতে কারো বাকি নেই কার সাথে কিসের সম্পর্ক।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, হাসিনা তার নিজের নামে ব্রিগেট, মিগ-২৯ এবং চেক জালিয়াতিসহ ১৫টি মামলা তুলে নিয়েছে। নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নামে করা ৮০০০ মামলা তুলে নিয়েছে। পুরাতন মিগ-২৯ বিমান নতুনের দামে কিনেছিল এবং চেকের মাধ্যমে সরকারী টাকা তার নিজ পরিবারের লোকজনকে দিয়েছিল। অথচ আমার নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা গুলো তারা তুলে নেয়নি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে করা মামলা গুলো তুলে নেয়নি। বিচার বিভাগের আজ স্বাধীনতা নেই। আল্লাহর কাছে এর জবাব দিতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, এসব কাজের জন্য আওয়ামী লীগের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ, কঠিন এবং ভয়াবহ হবে।
তিনি বলেন, হাসিনা ক্ষমতায় আসার কয়েকদিন পরেই কেন বিডিআর হত্যাকান্ড হয়েছিল? হাসিনা সব জানত। জানত বলেই সুধাসদন থেকে হেয়ার রোডে বাসা সরিয়ে নিয়েছিল। জানত বলেই সেদিন সে ডিনারে যায়নি। জানত বলেই মঈনুদ্দিনকে সেদিন অ্যাকশন না নিতে দিয়ে তার অফিসে বসিয়ে রেখেছিল। সেদিন আর্মি মুভ করলে এতো অফিসার মারা যেত না। এ হতাকান্ডে আমাদের ৫৭ জন অফিসারকে পুরিয়ে, গুলি করে এবং নির্যাতন করে হত্যা করে ম্যানহলে লাশ ফেলে দিয়েছিল। এ জন্য হাসিনা এবং মঈনুদ্দিন গংরা দায়ী। গত ৩ মাসে আমাদের ৩১০ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৬৫ জনকে গুম করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে কি এমন করেছে যে তাকে ২ লাখ ডলার বা ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন দেয়া হচ্ছে? পত্রিকায় সব এসেছে। তাঁরা টাকা-পয়সা সব বিদেশে পাচার করছে। তাদের কোন আত্নীয় স্বজন দেশে নেই। সবাই বিদেশে টাকা জমাচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিদেশে বিয়ে করছে। আমাদের ২ লাখ ডলার বেতনের উপদেষ্টা দরকার নেই। যুবকদেরকেই এর প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ যুবকদের আজ চাকরি নেই।
তিনি বলেন, খুনিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। এরা মানুষ খেকো; এখন এরা বাংলাদেশ খেকো হয়ে গেছে।
তিনি সবাইকে বলেন, প্রস্তুত হয়ে থাকুন। মা বোনেরা সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। গুলি করে এবারের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। গুলি করে আর ট্রাক দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করতে পারবেন না। রাজপথে দেখা হবে। পারলে গুলি বন্ধ করে আসুন। এবারের আন্দোলনে আমরা সবাই নামবো। যতদিন প্রয়োজন রাস্তায় থাকব।
তিনি বলেন, আজকে কথায় কথায় আলেমদের জঙ্গী বলা হচ্ছে। অথচ জঙ্গী নেতা শাইখ আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের মির্জা আজমের বোনের জামাই। শাইখ আব্দুর রহমানের বউ বাচ্চাসহ আমরা ধরেছিলাম। তার বউ মহিলাদের ট্রেনিং দিত। এই রকম একটা ট্রেনিং প্রাপ্ত মহিলা হাসিনাকে হত্যা করবে বলে প্রচার করা হলেও মূলত হাসিনা নিজ থেকেই শেষ হয়ে যাবে। আর শাইখ আব্দুর রহমানের বউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। কাজেই এটা সম্পূর্ণ সাজানো নাটক।
দেশনেত্রী বলেন, আজকে ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে হাতে অস্ত্র। অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে হবে। উত্তরপত্র দিয়ে জিপিএ-৫ দেয়া বন্ধ করতে হবে। এসব জিপিএ ৫ প্রাপ্তরা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করতে পারছে না। এ জন্য তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক বন্ধ করতে হবে। এরশাদই জিয়া এবং মঞ্জুরকে হত্যা করেছিল। এ হত্যার বিচার করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বিখ্যাত সুন্দরবনের নাম আপনারা সবাই জানেন। কয়েকদিন আগে সেখানে নাকি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে গেছে। আসলে তা তেলবাহী ট্যাংকার ছিল না। এটা ছিল তেলে ভরা বালুবাহী লঞ্চ । এটাও পরিকল্পিত। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য ধবংস করা হচ্ছে। নদীর মাছ মরে যাচ্ছে।
৩ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১২ মাস সময় দিয়েছি। আর দিবোনা। সময় থাকতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। তা না হলে আপনাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। সবাইকে তিনি বলেন, আর চোখের পানি নয়। একসাথে জালেম সরকারকে বিতারিত করতে হবে।
উক্ত জনসভায় বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, নারায়ণগঞ্জ জনসভায় প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিবর, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান প্রমুখ।
২০ দলীয় জোট নেতাদের বক্তব্য রাখেন— বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের ইসলামীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. রেদওয়ান উল্লাহ সাহিদী, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, এনডিপির খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুল মবিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির গরিবে নেওয়াজ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জমিয়তে ওলামার মাওলানা মুহিউদ্দিন একরাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন— এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুসলিম লীগের সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আমিনুর রহমান, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী প্রমুখ।
এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, অধ্যাপক রেজাউল করিম, আতাউর রহমান আঙ্গুর, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ আলম, সোনারগাঁও বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মাহফুজ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাশুকুল ইসলাম রাজীব, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সায়েম, ছাত্রনেতা আমিরুল ইসলাম ইমন প্রমুখ।