দিনে দুপুরে যৌন সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে তরুণীটি। দুই তরুণ আর চার যুবক মিলে তাকে নিয়ে যায় নির্জন স্থানে। চলে একের পর এক ছিঁড়ে খাওয়ার পালা। প্রাণপণ চেষ্টায় নিজেকে রক্ষা করতে চান মেয়েটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয়না।
সব কিছু কেড়ে নেয়ার পরেও দমে না যৌনদানবরা। চিনে ফেলেছে এ অজুহাতে নির্যাতিতাকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ ফাঁকেই দানবদের মধ্যেই একজন নিশ্চিত করে মেয়েটি তাদের চিনতে পারেনি। তাই ভয়ের কিছু নেই!
তরুণী গণধর্ষণের গল্পটা এখানেই শেষ নয়। যৌনসন্ত্রাসীদের যে ‘ভয়ের কিছু নেই’ তার দৃষ্টান্ত তো বাকিই থেকে যায়। এমন আকস্মিকতা ঘটনায় মেয়েটি স্তব্ধ হয়ে গেলে এগিয়ে আসে অন্যরা। ভাড়াটির লোকজন আর প্রতিবেশীরা মিলে তাকে নিয়ে যায় থানায়। উদ্দেশ্য ধর্ষণ মামলা দায়ের করা। আর থানায় গিয়েই তরুণীটি বুঝতে পারলেন যৌন সন্ত্রাসীদের কথার সঙ্গে ওসির বক্তব্যের কি অপূর্ব মিল!
ওসি মামলা তো নিলেনই না, উপরন্ত যারা মেয়েটিকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিল তাদের বিরুদ্ধেই গণধর্ষণ মামলা দেয়ার হুমকি দিলেন। তরুণীটির মাথা ঘুরতে লাগলো, ধর্ষকদের কেউ কি থানায় পুলিশ সেজে বসে আছে? হয়তো হতেও পারে!
ফিরে আসার পথে তরুণীটি হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। যথারীতি সাংবাদিকরা নানা প্রশ্নে জর্জরিত করে। কিন্তু তরুণীটি কাঁদতেই থাকে।
অসহায় ওই তরুণী (২১) ময়মনসিংহের গফরগাঁওয় উপজেলার কান্দিপাড়া গামের দরিদ্র কৃষকের মেয়ে। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার গিলারচালায় ভাড়া থাকতেন। তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকার নোমান শিল্প গ্রুপের সাদসাইন অ্যাপারেল কারখানায় কাজ করতেন।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেড়াইদেরচালা এলাকার নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনের কাছে তিনি গণধর্ষণের শিকার হন। পরদিন শনিবার রাতে প্রতিবেশীরা তাকে সঙ্গে করে শ্রীপুর মডেল থানায় যান মামলা দায়ের করতে। সেখানে গিয়ে পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) খান মো. আবুল কাশেমের কক্ষে যান।
গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়ের করার কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন খান মো. আবুল। অশ্লীলবাক্যে গালাগালি করেন। মামলা নেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর থানায় বেশিক্ষণ অপেক্ষা করলে মেয়েটির সঙ্গে আসা প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধেই উল্টো গণধর্ষণ মামলা করা হবে বলেও হুমকি দেন।
থানাতেই কয়েকজন সাংবাদিক তরুণীকে ঘিরে ধরে জানতে চান কীভাবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে! এমন প্রশ্ন শুনেই হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠেন তরুণীটি।
প্রতিবেশিরা দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদককে জানান, তিন বছর ধরে শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার ভিনটেক্স কারখানায় চাকরি করতেন মেয়েটি। বেশি বেতনের অফারে মাস দুয়েক আগে পাশের ভালুকার জামিরদিয়া এলাকার সাদসাইন কারখানায় চাকরি নেন। মাস খানেক আগে বাড়ির মালিক নির্মাণ কাজের কথা বলে তাকেসহ ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেন।
গত শুক্রবার ছুটির দিনে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ি খুঁজতে পাশের বেড়াইদেরচালা এলাকায় যান তরুণটি। আলহাজ্ব ধনাই ব্যাপারী উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশে বাড়ির খোঁজ দেয়ার কথা বলে অজ্ঞাতপরিচয় দুজন তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা আর আচরণ বদলে গেলে তরুণীটি সেখান থেকে চলে আসতে চায়। কিন্তু একপর্যায়ে তারা তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জোর করে তাকে ধরে নিয়ে যায় নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনের শ্রমিকদের টিনশেড ঘরে। সেখানে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। ওই ঘরে আরো চার দুর্বৃত্তকে দেখতে পান মেয়েটি। ধস্তাধস্তির সময় মেয়েটি বেদম মারপিট করে তারা। এরপর নিস্তেত হয়ে পড়লে ছয় যৌনদস্যু মিলে তার ওপর নির্যাতন চালায়।
এক পর্যায়ে কান্না থামিয়ে নির্যাতিত তরুণী জানান, ধর্ষকদের দুজনের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর। অন্য সবার ২৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ধর্ষকদের কাউকেই চিনতে পারেননি তিনি। তবে ধর্ষণকালে অসতর্কতায় ‘আশাদুল্লা পরধান’ বলে একজনকে ডেকেছিলেন ধর্ষকরা।
আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে তরুণী জানান, নির্যাতনের পর তাকে হত্যার প্রস্তুতি নেয় ছয় দুর্বৃত্ত। তিনজন তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এর মধ্যে একজন এগিয়ে এসে বলে, ‘কাউরে চিনতে পারেনাই, ছাইড়া দেন’। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা। ঘণ্টা খানেক পর সেখান থেকে কোনো রকমে বের হয়ে তরুণীটি অটোরিকশা করে বাসায় ফেরেন।
সারারাত কেঁদে কেটে পরদিন বাড়ির মালিক মফিজ উদ্দিনসহ কয়েকজন ভাড়াটিয়াকে ঘটনা জানান। পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা জেনে বাড়ির মালিক মফিজ উদ্দিনের ছেলে কবির হোসেন, প্রতিবেশী তরুণ শফিকুল ইসলাম ও বালা মাস্টার ধর্ষিত তরুণীকে শনিবার রাত ৯টার দিকে পৌঁছে দেয় থানায়।
ধর্ষিত তরুণী অভিযোগ করেন, নির্যাতনের ঘটনা জেনে ওসি খান মো. আবুল কাশেম ক্ষেপে যান। অশ্লীল গালাগাল করে তাকে থানায় পৌঁছে দেয়া প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধেই গণধর্ষণের মামলা দেয়ার হুমকি দেন।
তবে ওসি খান মো. আবুল কাশেম সব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবেদককে বলেন, মামলা নেয়ার মালিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি), আমার নয়।