'শেখ হাসিনার ওপর আল্লাহর গজব নাযিল হবে' বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে শকুনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। শকুনের দোয়ায় গরু মরলে তাহলে দেশে এত গরু থাকত না। দেশে নাকি এখন শকুনই পাওয়া যায় না। দেখা যাচ্ছে একটামাত্র শকুনি আছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, উনার মত শকুনই এখন বাংলাদেশে আছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চায়। বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য উনি (খালেদা জিয়া) জনসভা করছেন আর আমার ওপর গজব নাজিলের জন্য আল্লাহর কাছে আঁকুতি করছেন।এর আগে শনিবার নারায়ণগঞ্জ-এ এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আল্লাহর গযব নাজিল হবে বলে খালেদা জিয়া মন্তব্য করেন।
বিএনপি ও জামায়াতকে পাকিস্তানের দালাল হিসাবে আখ্যায়িত করে তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই পাকিদের দালাল আর যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে-সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই পতাকা নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। এই পতাকা নিয়ে কোনো শকুনিকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। দরকার হলে বুকের রক্ত দিয়ে দেবো।
এ সময় তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তার রায় কার্যকর করার বিষয়ে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য এই ডিসেম্বর মাসকে বেছে নিয়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে নিয়ে খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জে জনসভা করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগের দিন উনি কাদের নিয়ে বক্তৃতা করলেন। আল-বদর রাজাকারদের নিয়ে উনি কিভাবে বক্তৃতা দিলেন? কারা ছিলো ওই মঞ্চে? আল-বদর আর রাজাকাররা। কাদের ছবি ছিলো ওই বেলুনে?
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের নিয়ে এই ডিসেম্বর মাসে জনসভা করেন আর বলেন আওয়ামী লীগ নাকি মুক্তিযুদ্ধই করেনি। যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি। খালেদা জিয়ার এ ধরনের বক্তব্যের পর বিএনপির মধ্যেকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ওই দলে এখনও কী করে থাকেন সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনার দেড়ঘণ্টা আগে তিনি (খালেদা জিয়া) কোনও প্রটোকল ছাড়াই ক্যান্টমেন্টের বাসা ছেড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। এরপর দেড় মাস আর ওই বাসায় ফেরেননি। ওই ঘটনার পর যখন সমস্ত রাজনৈতিক দল বিদ্রোহ থামানোর জন্য ছুটে যান তখন তিনি কোথায় ছিলেন? উনি কী ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কোন আকাঙ্ক্ষায় তিনি আন্ডার গ্রাউন্ডে যান? ভেবেছিলেন কিছু একটা ঘটবে তারপর তিনি আসবেন। সেদিন উনি কোথায় পালিয়ে গিয়েছিলেন তার জবাব জাতিকে দিতে হবে।
বিএনপি ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ও তার দল বিডিআর মিউনিটিতে জড়িত না থাকলে তাদের আইনজীবীরা কীসের স্বার্থে খুনিদের পক্ষ নিয়েছেন। কোন কোন আইনজীবী ওই খুনিদের পক্ষে লড়েছেন তার তালিকা সরকার তৈরি করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী এ সময়ে উল্লেখ করেন।
বিএনপির ২০০১-০৭ শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতাবিরোধী ও আলবদর বাহিনীর প্রধানদের মন্ত্রী বানায়। একাত্তর সালে পাকা-হানাদার বাহিনী যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায় বিএনপি ক্ষমতায় এসে ঠিক একই কায়দায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা ও অন্ধকারে ঠেলে দেয়াই ছিলো তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাদের সময়ে জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাস বাংলার বুকে চেপে বসে। এদেশের সব হত্যাকাণ্ড আর বোমাবাজির সঙ্গে বিএনপি জামায়াত জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সম্প্রতি মারা যাওয়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক গোলাম রসুলকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার দিনে বিএনপি হরতাল দিয়ে খুনিদের রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিচারপতি গোলাম রসুল তাদের হরতাল উপেক্ষা করে বিচারের রায় ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজ উদ্দীনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীমের মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ।