৫ জানুয়ারি ঘিরে ব্যপক নাশকতার আশঙ্কা করছে সরকার। বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের ঘোষণায় এ আশঙ্কাকে আরও তীব্র করেছে। আর এ আন্দোলনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও রাখা হয়েছে প্রস্তুত। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পুলিশ দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, অন্তত তিন হাজার জনের নামের তালিকা নিয়ে পুলিশ এ অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে। তালিকায় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, পেশাদার অপরাধী ছাড়াও রয়েছে সরকারবিরোধী জোট বিএনপি জামায়াতের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নাম। পলাতক দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের নামও রয়েছে তালিকায়। এ ছাড়া সরকারবিরোধী জোটের সন্দেহভাজন নেতা-কর্মীদের ওপর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে খবর রয়েছে ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে গোপনে হামলা চালানো হতে পারে। বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার জীবনও হুমকির মধ্যে রয়েছে। গোয়েন্দাদের এমন তথ্য পেয়ে সরকার সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ইতিমধ্যে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারকে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। সারা দেশে নতুন করে তিন হাজার ব্যক্তির নামের তালিকা তৈরি করা হয়। সম্প্রতি ওই তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তালিকায় নাম, বাবার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, পেশা, দলীয় অবস্থান, নেটওয়ার্ক, অর্থের উৎস, মামলার রেকর্ডপত্র এবং তারা আচমকা দ্রুত কীভাবে সংগঠিত হয় তার বিবরণ রয়েছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যে রাজনৈতিক নেতাদের উসকানিতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে তারাই মূলত নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা, যানবাহনে অগি্নসংযোগসহ একাধিক মামলা রয়েছে। কেউ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ঢাকার ৯০টি ওয়ার্ড, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, টেকনাফ, খুলনা, সিলেট, যশোর, কুমিল্লা, সিলেটসহ আরও কয়েকটি এলাকায় জামায়াত-শিবিরের আনাগোনা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের তৎপরতা রয়েছে। ওইসব এলাকায় পুলিশদের কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, শহরাঞ্চলের প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপি ও জামায়াতের ৪০-৫০ জন নেতা-কর্মীর নাম আছে।
এ ছাড়া বিএনপির ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, জামায়াতের রোকন, সদস্য, সাথিদের নাম রয়েছে। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক অপরাধীদেরও নাম আছে তালিকায়। ওইসব অপরাধীরা ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে থাকে। মূলত, তাদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতারা।
সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের ২২৪ জন, খুলনা বিভাগের ৪০৩, রংপুর বিভাগের ৩৩৪, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৩৯, ঢাকা বিভাগের ৫৭২, বরিশাল বিভাগের ২২৪ এবং সিলেট বিভাগে ২২৮ জন জামায়াত ও বিএনপি নেতার নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রয়েছে দেশের অপরাধী ও জঙ্গিদের নাম।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, কোনো ভাবেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে দেওয়া হবে না। নাশকতা প্রশ্নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জিরো টলারেন্সে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, গোয়েন্দাদের দেওয়া আগাম তথ্য অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
ইতিমধ্যে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার ও থানা ওসিদের বিশেষ দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি একটি নামের তালিকাও সরবরাহ করা হয়। তালিকাভুক্তদের পারিবারিক পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলার সংখ্যা ও কোন কোন কাজে তারা পারদর্শী এবং কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা আগে কোন দল করেছে তার বিবরণ রয়েছে।
তালিকায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি জেলা, থানা, উপজেলা ও ওয়ার্ড বা মহল্লার নেতা-কর্মীদের নাম আছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। তাকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে। জনগণ ও দেশের সম্পদ কেউ নষ্ট করতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে নানা কৌশল নেওয়া হয়। অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই।