সিডনির প্রাণকেন্দ্রে লিন্ড চকলেট ক্যাফের জিম্মি সঙ্কটের মধ্যেই ওই ভবন থেকে অন্তত পাঁচজনকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে বলে খবর দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
ক্যাফের ভেতরে অস্ত্রধারী একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ।
চ্যানেল সেভেনের ভিভিওতে দেখা যায়, প্রথমে একজন দৌঁড়ে বেরিয়ে আসার পরপরই সাদা শার্ট পরিহিত আরেকজন পুরুষ তাকে অনুসরণ করেন। তৃতীয় জন বেরিয়ে আসেন অন্য দিক দিয়ে, যার পরনে ছিল লিন্ড এর অ্যাপ্রন। এবিসি টেলিভিশনের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ভবনের কাচের দরজা ঠেলে দুইজন বেরিয়ে আসছেন। আরেকজনকে ভবনের অগ্নি নিরাপত্তার সিঁড়ি ব্যবহার করে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
এ থেকে ধারণা করা হয়- তাদের মধ্যে অন্তত একজন ওই ক্যাফের কর্মচারী ও বাকি দুজন খদ্দের।
এর ঘণ্টাখানেক পর আরো দুই নারীর দৌঁড়ে বেরিয়ে আসার ভিডিও দেখায় স্থানীয় টেলিভিশনগুলো।
স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১০টা থেকে শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মার্টিন প্লেসে এই অচলাস্থা চলছে। অস্ত্রের মুখে আনুমানিক পঞ্চাশ জন মানুষকে জিম্মি করার খবর পেয়ে তখন থেকেই পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে কয়েকশ অস্ত্রধারী পুলিশ।
অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যাফের ভেতরে জানালার সামনে হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত তিনজন।
তাদের একটি কালো পতাকা ধরে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে, যার ওপরে সাদা হরফে আরবি লেখা দেখে এই ঘটনার পেছনে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের জড়িত থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লিন্ড অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী স্টিভ লোয়ানে জানান, সকালের ওই সময়ে ভেতরে অন্তত ১০ জন কর্মী ও জনা ত্রিশেক খদ্দের থাকার কথা। পুলিশ বলছে, ভেতরে এখন জিম্মির সংখ্যা ২৫ জনের বেশি হবে না।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ক্যাথরিন বার্ন জানিয়েছেন, পুলিশ ক্যাফের ভেতরে সেই অস্ত্রধারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে এবং আলোচনা চলছে।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওই এলাকায় না যেতে এবং জানালায় উঁকি না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট বলেছেন, এ ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। সোমবার সকালেই মন্ত্রিসভার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে জঙ্গিরা হামলার পরিকল্পনা করছে বলে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আগেই তাকে সতর্ক করেছিল।
ওই ক্যাফের কাছেই সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউস, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পার্লামেন্ট। মার্টিন প্লেসে এলাকাতেই অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সদর দপ্তর।
অপেরা হাউসের কাছে ‘সন্দেহজনক বস্তু’ পাওয়ার খবরে কর্মী ও দর্শনার্থীদের সরিয়ে নেওয়া হলেও এর সঙ্গে লিন্ড ক্যাফের কোনো সম্পর্ক আছে কি-না তা নিশ্চিত নয়।
রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তাদের সব কর্মী ব্যাংক ভবনের ভেতরেই আছেন। তারা নিরাপদ।
কাছেই সিডনির মার্কিন কনস্যুলেটও খালি করে দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মার্টিন প্লেসে যান চলাচল বন্ধ রাখায় আশেপাশে ট্রেন ও বাস থেমে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। ওই এলাকায় বোমা হামলার হুমকি রয়েছে এমন গুঞ্জনে আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে।
কর্তৃপক্ষ নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সিডনি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে অভিযানরত যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা উগ্রপন্থি মুসলিম বা স্বেচ্ছা-প্রণোদিত যোদ্ধারা হামলা চালাতে পারে এমন গোয়েন্দা বার্তায় দেশটি উচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিল।
গত সেপ্টেম্বরে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে শিরশ্ছেদের একটি জঙ্গি পরিকল্পনা উদঘাটন করে অস্ট্রেলিয়ার সন্ত্রাস-বিরোধী পুলিশ। সে সময় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
তার কয়েকদিন পর সন্ত্রাস-বিরোধী পুলিশের দুই কর্মকর্তার ওপর ছুরি নিয়ে হামলার সময় গুলিতে এক কিশোর নিহত হন।