DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

জাতীয় ক্রিকেটার রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীনী হ্যাপি যা বললেন

happy-2 বাংলামেইলের কাছে হ্যাপির জবানবন্দিগত ১৩ ডিসেম্বর জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন নবাগত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাজনিন আক্তার হ্যাপি। এরই মধ্যে রুবেল হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিন পেয়েছেন। রুবেল আর হ্যাপির ঘটনাটা নিয়ে নানান খবর আর কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কি? শুনুন হ্যাপির নিজ জবানবন্দীতে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় এ বছরের শুরুর দিকে। জানুয়ারি মাসের কথা। আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেখলাম রুবেল হোসেন নামে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। কিন্তু আমি তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ওয়েটিংয়ে রেখে দেই। এরপর দেখি প্রায় সে আমাকে ফেসবুকের ইনবক্সে ম্যাসেজ পাঠায়। তার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করতে বলে। একটা সময় আমি তাকে আমার বন্ধু লিস্টে নিয়ে নেই। মাঝে মধ্যে টুকটাক চ্যাট হয়। আমার কখনোই ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল না। আমি খেলাও দেখতাম না। রুবেল আমাকে বলে তুমি আমাকে দেখেছো। আমি বলতাম না। ক্রিকেট নিয়ে নানা কথা হতো। অন্যান্য ক্রিকেটারদের নিয়ে গল্প বলতো ও।happy বাংলামেইলের কাছে হ্যাপির জবানবন্দি

একটা সময় ফোন নম্বর বিনিময় হয় আমাদের। এরপর থেকে শুরু হয় ফোনে কথা। শুরুতে কম কথা হলেও একটা সময় নিয়মিত কথা হতো। ফোনে কথা বলে আর ফেসবুকে চ্যাট করে আমাদের সম্পর্কের একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়। প্রায় মাসখানেকের মাথায় আমরা দেখা করি। প্রথম দেখা করি মিরপুরেই। প্রথমে আমি বলেছিলাম চলো রিকশায় ঘুরতে যাই অথবা কোনো রেস্টুরেন্টে বসি। ও আমাকে বললো, পাবলিক প্লেসে গেলে ওর সমস্যা। লোকে চিনে ফেলবে। তাই প্রথম দিন রুবেল আমাকে তার গাড়িতে করেই ঘুরে বেড়ালো। এভাবেই শুরু হয় আমাদের প্রেমের যাত্রা।

আমি এর আগে প্রেম করিনি। আমার কোনো প্রেমিক ছিল না। তাই রুবেল আমার ফাস্ট লাভ। ওভাবেই আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি। ভালোই যাচ্ছিল আমাদের সম্পর্ক। ভালোবাসার মধ্যে তো ঝগড়া থাকেই। রুবেলের সঙ্গেও আমার কম ঝগড়া হয়নি। তবে আমি রাগ করলে রুবেলই আমার অভিমান ভাঙাতো।

একটা ঘটনা বলি, রুবেল দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার আগে একদিন আমি ওর গাড়িতে ঘুরছিলাম। হঠাৎ খুব রাগ হয়, তারপর আমি ওর গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। ঘটনাটা ঘটেছিল মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে। আমি দেখলাম ও আমার রিকশার পেছন পেছন গাড়ি নিয়ে আসছে। একটা সময় করলো কি, সে গাড়ি পার্কিং করে দৌড়ে এসে আমার রিকশা থামিয়ে চালককে নামিয়ে নিজেই রিকশা চালানো শুরু করলো! কি যে পাগলামি সে করতো। আরেকদিন সে রাগ করে রাস্তায় বসে পড়লো। রাস্তা থেকে সে উঠবেই না। কিছু হলেই কান্না কাটি শুরু করতো। এসব পাগলামির কারণে আমিও ওকে মন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।

ওর কিছু বদ অভ্যাস ছিল। মদ খাওয়া, মেয়ে মানুষ নিয়ে ফূর্তি করা। আমি একটা সময় এগুলো টের পেলাম। আর তখনই তাকে বললাম আমার সঙ্গে যদি সম্পর্ক রাখতে চাও এসব বাদ দিতে হবে। সে আমাকে বললো, সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হয়ে যাবে। আমাকেও বললো মিডিয়ায় কাজ করা ছেড়ে দিতে। আমিও ওর কথা রাখলাম। রুবেল থাকতো মিরপুর কমার্স কলেজের পেছনের একটি বাড়িতে আর আমার বাসা ছিল মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকায়। তাই প্রায়ই সে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে নানা কথা বলে তার বাসায় নিয়ে যেতো। আমিও যেতাম, যেহেতু তাকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছি।

কখনো মনে আসেনি রুবেল আমার সঙ্গে প্রতারণা করবে। ওর বাসায় কেউ থাকতো না। সে একাই বাসা নিয়ে থাকতো। আমি আমার বাসায় শ্যুটিংয়ের কথা বলে প্রায়ই ওর বাসায় থাকতাম। রাতের পর রাতও থেকেছি। একদিন ফজরের আজানের সময় ওকে আমি বললাম, তুমি আমাকে বিয়ে করবে তো? সে আমাকে তার বাবা-মায়ের কছম দিয়ে বললো, সে আমাকে বিয়ে করবে। এরপর ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম। এভাবেই যাচ্ছিল দিন।

happy-4 বাংলামেইলের কাছে হ্যাপির জবানবন্দি

বেশ ক’মাস এভাবেই কাটছিল আমাদের সময়। সুখেই ছিলাম। আর আমি স্বপ্ন দেখছিলাম রুবেল আর আমার সুখের শান্তির একটা সংসার। কিন্তু মানুষ যা চায় তা পায় না। আমার প্রেমে তো অসততা ছিল না। সে একটা সময় আমাকে এড়িয়ে চলা শুরু করলো, ফোন ধরছে না। ঠিক মতো যোগাযোগ করছে না। আগের সেই টানটা নেই। আমাকে পাবার জন্য ওর যে পাগলামি ছিল সেটাও নেই। ও মাঝখানে দলে খেলতে পারিনি। এ নিয়ে ওর মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। ওই সময়টায় আমি ওকে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করেছি। সাহস দিয়েছি। কিন্তু এতো ভালোবাসা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

হঠাৎ একদিন দেখি আমার ফোন থেকে ওর ফোনে কোনো ফোন যাচ্ছে না। তখন খোঁজ নিয়ে দেখলাম ও আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। এটা ভেবে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। এ মাসের ৩ কি ৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমি ওর বাসায় গেলাম। দাঁড়োয়ান যেহেতু আমাকে চিনতো তাই গেট খুলে দিল। ওর ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখি দু’টি মেয়ে। ও আমাকে বললো মেয়ে দু’টি ওর বন্ধু। সে রাতে আমার সঙ্গে খুব ঝগড়া হলো রুবেলের। সে আমাকে গালাগালি করে এবং আমার গায়ে হাতও তুলে। আমি রাগে আমার হাত কেটে ফেলি। একটা সময় অজ্ঞান হয়ে পরে যাই। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে দেখি আমি এক রুমের ফ্লোরে পড়ে আছি। আর রুবেল পাশের রুমে তার দুই মেয়ে বন্ধু নিয়ে শুয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখার পর ওর সঙ্গে কেউ সম্পর্ক রাখে?

তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম হয়তো ওর সঙ্গে সম্পর্কটা চূড়ান্তভাবেই রাখবো, নইলে সম্পর্ক রাখবো না। ওকে বিয়ের কথা বললাম, সে বিয়েতে রাজি হয় না। তখন আমি ৭ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় যাই অভিযোগ করতে। তখন মিরপুর থানায় এসেছিলেন মাশরাফি ভাই, নাসির, সফিউলসহ আরো কয়েকজন। তারা আমাকে আর রুবেলকে বুঝালেন। এবং রুবেলকে বললেন, হ্যাপিকে বিয়ে করতে তোমার সমস্যা কি? বিয়ে করে ফেলো।

jy4vhpao বাংলামেইলের কাছে হ্যাপির জবানবন্দি

রুবেল ওখানে সবার সামনে মেনে নিলো এবং বললো আমাকে বিয়ে করবে। এরপর সে আমার সঙ্গে বেশ ভালো ব্যবহার শুরু করলো। আমিও একটু অবাক হলাম। যাই হোক সে আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেলো। আমি থাকলাম তার বাসায়। নানা মিষ্টি কথা বলে সে আমার মোবাইল ফোনটা নেয়। এবং মোবাইলে যা কিছু ছিল রুবেল আর আমার সব ডিলেট করে দেয়। এরপর ওর চেহারা পাল্টে যায়। সে আমাকে বলে, ‘যাও সব প্রমাণ মুছে দিলাম এবার গিয়ে মামলা করো। আর তুমি আমার নামে মামলা করে কী করবে? আমার হাত অনেক বড় তুমি জানো না। আন্দালিব রহমান পার্থ, শেখ হেলাল এরা সব আমার কাছের লোক। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে দিয়ে তোমার মামলা তুলে নেবো। এরপর আমি তোমার নামে এক কোটি টাকার মানহানীর মামলা করেবা।’ এসব বলে সে আমাকে ভয় দেখালো। কিন্তু সে জানে না সব ধরনের প্রমাণ আমার হাতে আছে। ও যা যা করেছে এবং বলেছে।

তারপর আমি নিজে ভাবলাম কি করা যায়। এই পুরো বিষয়টা আমার পরিবার জানে না। আমি তাদেরকে বলতেও পারছি না। একটা মানসিক যাতনায় পড়ে গেলাম। অনেক ভেবে দেখলাম- না, আমি শুধু একা না, আমার মতো এমন অনেক মেয়েকে সে ঠকাচ্ছে। এবং সবাই চুপ করে থেকেছে। শুধু রুবেল না রুবেলের মতো আরো অনেকেই আছে সমাজে, যারা এভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের ভোগ করছে। এভাবে চুপ থাকলে এদের কুকর্ম বেড়েই যাবে, কমবে না। কাউকে না কাউকে তো প্রতিবাদ করতেই হবে। তাই ১১ ডিসেম্বর আমি মিরপুর থানায় গিয়ে মামলা করি। মামলা করার পর অনেকেই আমাকে খারাপ বলছেন। এটা আমি জানতাম। কারণ আমি জানি বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনায় সবাই শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকেই গালি দেয়। তাকেই কলঙ্ক লাগায়। পুরুষ কি শুধু সাধু? আমি আগে বলেছিলাম ও আমাকে বিয়ে করলে আমি মামলা তুলে নেবো। কিন্তু এখন আমাকে ভাবতে হচ্ছে। ওর মতো একটা পুরুষের সঙ্গে তো আর সারাজীবন কাটানো সম্ভব না। আমার এখন একটাই চাওয়া। আমি ওর শাস্তি চাই, আর মেয়েদেরকে বলতে চুপ থাকার সময় আর নেই।

happy-3 বাংলামেইলের কাছে হ্যাপির জবানবন্দি

এক স্লিপ হ্যাপি

২০১৩ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের কিছু আশা কিছু ভালোবাসা ছবির মাধ্যমে হ্যাপির চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। তিনি বর্তমানে কাজ করছেন বদরুল আমিনের ‘রিয়েলম্যান’, মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘লাল সবুজের সুর’, মেজবাহ শিকদারের ‘অন্যরকম’, জামশেদুর রহমানের ‘ছন্দপতন’ ছবিগুলোতে। এছাড়া কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তিনি। হ্যাপির গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুরে বাবার নাম মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!