DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

আবারও বিএনপি ভাঙতে সরকারের অপ তৎপরতা!

BNPবিএনপিতে ভাঙন ধরানোর জন্য আবারও চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে দলটির ভেতরে হতাশ, শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ ও সাবেক সাংসদদের একটি অংশকে সংগঠিত করতে সরকারের ব্যক্তি ও সংস্থা তৎপরতা চালাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

সরকারি ও বিএনপির ভেতরের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ৩২ জন নেতা যুক্ত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিএনপির সাবেক সাংসদ এবং দীর্ঘদিন থেকে দলীয় কর্মকাণ্ডে তাঁদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এঁদের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক দলের কয়েকজনও আছেন।


এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, অতীতে যাঁরাই দল ভেঙেছেন, তাঁরা কেউই টিকতে পারেননি। হয় দলে ফিরে এসেছেন, না হয় সম্পূর্ণ একা হয়ে গেছেন। আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে দিয়ে বিএনপির কমিটিও করা হয়েছিল। এরপর বিএনএফকে দিয়ে প্রচেষ্টা নিয়েছিল। এবারও সরকার সফল হবে বলে তিনি মনে করেন না।তবে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা আছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভাঙন চেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিরা আকারে-ইঙ্গিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের একজন নেতার নাম ব্যবহার করছেন। এঁদের মধ্যে দুজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। দুজনই এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দেন। এঁদের একজন বলেন, টোপ দেওয়া নেতাদের প্রলুব্ধ করতে একেক সময় একেক নেতার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগামী জানুয়ারি মাসে বিএনপি সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। সম্ভাব্য আন্দোলন সামনে রেখে বিএনপিকে ভাঙার তৎপরতা জোরদার হয়েছে। তবে এর প্রকাশ কখন, কীভাবে হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। 

ভাঙন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা একটি মোক্ষম সময় এবং সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। তাঁরা মনে করছেন, আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা জমে আছে। এ হতাশা আরও চরমে তোলা না গেলে ভাঙন প্রক্রিয়া সফল হবে না। এর জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনকে চলমান কোনো মামলায় গ্রেপ্তার বা কোনো অজুহাতে ৫ জানুয়ারির আগের মতো অঘোষিত গৃহবন্দী করার চিন্তা রয়েছে। এরপর তাঁর অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দল থেকে বের করে আনতে তাঁদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে। সরকারের এমন চিন্তা বা পরিকল্পনার বিষয়ে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও ওয়াকিবহাল আছেন বলে দলটির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন সদস্য, দলের চেয়ারপারসনের তিনজন উপদেষ্টাসহ আটজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, এ ধরনের তৎপরতার কথা তাঁরাও জানেন। তবে এ নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। তাঁদের দাবি, এর আগে ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেছিল সরকার। তখন তা সফল হয়নি। এবারও সফল হবে না।

সরকার-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, নতুন করে আন্দোলন যাতে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য শিগগিরই সারা দেশে ধরপাকড় শুরু করা হতে পারে। একই সঙ্গে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিচারাধীন মামলাগুলো আবার সক্রিয় করার চিন্তা আছে সরকারের। ভাঙন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এর সুযোগ নিতে চান। তবে তাঁদের মূল দৃষ্টি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলা দুটি (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা)। এ দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে—এমন আশঙ্কা বিএনপির নেতাদের মধ্যেও রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর বিএনপিতে ভাঙনের প্রকাশ ঘটাতে চান এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।

অবশ্য বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করলে বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘সরকার যখন ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যায়, তখন সরকারের পথ থাকে একটাই। অত্যাচার-নির্যাতন আর দল ভাঙা। সে জন্য সব কাজ বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে খালেদা জিয়ার বিচার করতে হবে, তাঁকে জেলে দিতে হবে। এরপর হয়তো আমাদের কিছু লোক চলেও যেতে পারেন। তাতে মূল স্রোতের কোনো ক্ষতি হবে না।’ তবে তিনি দাবি করেন, সরকার আগের মতো গোছানো অবস্থায় নেই। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যে তা প্রকাশ পেয়েছে। এ অবস্থায় যাঁরা এ ধরনের অনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হবেন, শেষ বিচারে তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!