বিজয়ের মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের পতাকার রঙসদৃশ শাড়ি পরিধান করায় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভারতের পতাকার আদলে রঙ করা অফিস কক্ষে মিটিং করায় স্যোশাল মিডিয়ায় সমালোচনা ও ধিক্কারের ঝড় উঠেছে।
তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের এরকম সরাসরি ভারত প্রীতির সমালোচনা করেছেন। সমালোচনা করে তারা বলছেন, বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের পতাকা সদৃশ শাড়ি না পড়ে কেন ভারতের পতাকা সদৃশ রঙের শাড়ি পরবেন প্রধানমন্ত্রী? এই শাড়ির মধ্যদিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের প্রতি তার কোন সম্মান নেই। ভারতকে যেভাবে হোক খূশি করাই তার লক্ষ্য।
ফেসবুকে স্ট্যাটাসগুলোতে বলা হচ্ছে, ভারতের কংগ্রেসের সমর্থনে হাসিনা জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় আসে। সে কারণে জনগণ বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা তার কাছে বড় নয়, যতটা বড় ভারতকে খুশি করা। এবারও ভারতের নতুন সরকার মোদিকে খুশি করার জন্য হাসিনা ভারতের পতাকার রঙ সদৃশ শাড়ি পরেছেন।
স্যোশাল মিডিয়াগুলোতে আরও সমালোচনা করে বলা হয়, বিজয়ের মাসে ভারতকে খুশি করতে সুন্দরবন ধ্বংস করা হলো, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র না হতে দেয়ার প্রতিশোধ হিসেবে। আর প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা এবার অবয়বে শেখ মুজিব কোর্টের মতো করে ভারতের পতাকাকে জড়াতে শুরু করেছেন। এতোদিন ভারতপ্রীতি ছিল হৃদয়ে এখন সেটা বাহ্যিক অবয়বে এমনকি মিটিং রুমগুলোতে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। এর মধ্য দিয়ে ভারতকে আওয়ামীলীগ ভারতপ্রীতির ম্যাসেজ দিতে চায় বলেও কেউ কেউ ফেসবুক ও ব্লগে ব্যক্ত করেছেন।
এর আগেও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পুলিশের ডিএমপি কমিশনারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভারতের পতাকার রঙসংবলিত মোমবাতি জ্বালানোকে কেন্দ্র করেও স্যোশাল মিডিয়াগুলোতে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্যে নির্লজ্জ্ব ভারতপ্রীতি তাও আবার বিজয়ের মাসে হওয়ায় এ ঘটনাকে কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
কেউ কেউ এটাকে কাকতালীয় বলে প্রচার করতে চাইলেও অধিকাংশ ব্লগাররা সেটা মানতে রাজি নয়। তারা হাসিনার শাড়ির রঙের সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে এটা কাকতালীয় হতেই পারে না। কাকতালীয় হলে অন্তত শাড়ির মধ্যে ভারতের পতাকার মতো চাকাটা থাকতো না। হাসিনার শাড়িতে ভারতের পতাকাতে থাকা চাকাটাও হুবহু সেভাবে রয়েছে। এবং এই দাবি আরও জোরালো হয় যখন প্রতিমন্ত্রী পলকের মিটিং রুমের পিলারগুলোও পতাকার রঙ করা ছিল। এবং সে ছবি পলক নিজেই তার ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছেন।
এ ঘটনার দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে। বিভিন্নমহল থেকে দাবি উঠেছে যে, শেখ হাসিনা ও আ’লীগ ভারতের বা দিল্লীর গোলামী করছে।
কয়েকটি ফ্যানপেইজ বলছে, ভারতের পতাকা গায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ যেন প্রেমের সোনায় সোহাগা।
কেউ কেউ বলছে, বাংলাদেশের বিজয় দিবসে ভারতের পতাকার রং ডিজাইনের শাড়ি পরে কোন দেশের পরিচয় দিলেন?
ফ্যানপেইজ বাঁশেরকেল্লা বলছে, ভারতীয় পতাকাই গায়ে জড়াতে হবে কেন ? কিসের লক্ষণ ? বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র কি তাহলে ভারতীয় পতাকার অধীনে ? বাংলাদেশের বিজয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকার রং এবং ডিজাইনের শাড়ি পরে শেখ হাসিনা। ইনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি শেখ হাসিনা। বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় আসেন ইন্ডিয়ার জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে। উনার এহেন আচরণে আজ ধর্ষিত স্বাধীনতা। কলংকিত হয়েছে বিজয়। লাঞ্চিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ।
বিডি ন্যাশনালিস্ট বলছে, ইয়ো হাসিনা! ইয়ো! তেরা শাড়ি হিন্দুস্তানি! তেরা মতলব ভি মে জানি! -আওয়ামী মেমস লীগ। পুরাই ভারতীয় পতাকার আদলের ডিজাইনের শাড়ী পড়েছে আজ হাসিনা। এমনকি শুধু রঙের মিল না, প্যাটার্নের মিল না, একেবারে ভিতরের চাকার মিলও আছে !! আজ এ শাড়ি পড়েই এক প্রোগ্রামে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ আক্রমণ করেছেন মুজিব কন্যা …
নিশিতা রা তার ফেসবুকে বলেছে, হাসিনা ভারত ছাড়া কোন দেশকে ভাল বাসে না। এবং বাংলাদেশকে বিশ্বাস করেন না, ভালও বাসেন না।
মাহফুজুর রহমান মাহফুজ তার ফেসবুকে লিখেছে, বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনার গায়ে জড়ান ভারতের পতাকা ডিজাইনের শাড়ী কেন জাতি আজ জানতে চাই। ভারত চেতনায় হাসিনা ভারতে তোমার ঠিকানা। ইন্ডিয়া কে খুশী করতে। এমন কান্ড জ্ঞানহীন উদ্দোগ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই…?
মাসুম ভুঁইয়া লিখেছেন, কৃষ্ণ করলে লিলা আর আমি করলে ঢং !! প্রধানমন্ত্রী যে কিনা কথা কথায় দেশপ্রেমের চেতনা দেখায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেখায় সেই প্রধানমন্ত্রী-ই এখন এই বিজয়ের মাসে পিয়ারে
হিন্দুস্তানের পতাকা গায়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে অপমান করেছে। বাঙালি জাতির সাথে মশকারা করেছে।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টায় রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় তার শরীরে ভারতের পতাকার ডিজাইনের শাড়ি ছিল।