বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘২০ দলের নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলনে অবৈধ সরকার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।’
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক মহা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দেশনেত্রী বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি পন্থা খোঁজে বের করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। এর মধ্যে একবছর চলে গেছে। মানুষের অবস্থা ও দেশের পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ হচ্ছে। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণ আহ্বানে তারা সারা দেননি। তাই আমাদের বসে থাকার আর কোনো সুযোগ নেই।’
বেগম জিয়া বলেন, ‘দেশের জনগণ আন্দোলন, পরিবর্তন চায়। তারা তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা ভোট দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেজন্য তারা বিএনপির কাছে প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছে। আমি যেখানেই যাচ্ছি, দলে দলে লোক এসে আন্দোলনের দাবি জানাচ্ছে। কাজেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্দোলন শুরু করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অস্ত্রের মোকাবেলায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পথে নামবো। আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক। জনগণের সেই আন্দোলেন অবৈধ সরকার তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের অংশ্রগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে। আর সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। কেউ ক্ষমতাসীন হয়ে আর কেউ ক্ষমতাহীন হয়ে নির্বাচন করবে, সেটা হতে পারে না। আর নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ এগুলোকেও দল নিরপেক্ষ অবস্থানে আনতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে বেগম জিয়া বলেন, ‘সরকার ভিনদেশি হানাদারদের পথ বেছে নিয়েছে। দেশের এ পরিস্থিতিতে, জনগণের এ চরম দুঃসময়ে কি আপনারা বসে থাকতে পারেন? নিশ্চই না। তাই আপনাদের প্রতিবাদ করতে হবে, আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় দাবি করে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠিত করেছে। তাদের দাবি যে কতটা ভিত্তিহীন তা এখন তাদের দলভুক্ত লোকদের বই-পত্র থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু সত্য কথা বললে তার তথ্যভিত্তিক জবাব না দিয়ে গালিগালাজ করে। আর গালিগালাজ হচ্ছে আওয়ামী লীগের সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধার চেতনা।’
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ করে বিএনপির চেয়ারপারসন আরো বলেন, ‘আপনাদের নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা হবে। মুক্তিযোদ্ধারা থাকবে সামনের কাতারে।’
এসময় সরকারকে কাছে তিনি কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দলীয় রাজনীতি বন্ধ করতে হবে, তাদের স্বার্থ ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে, শহীদ ও বিপন্ন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবে হবে, মুক্তিযোদ্ধারা কারারুদ্ধ হলে কারাগারে তাদের বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে রিজার্ভ সিট রাখতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আবেগাশ্রয়ী রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
বক্তব্যের আগে বেগম খালেদা জিয়া রণাঙ্গনের ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ২০ হাজার টাকা করে চেক প্রদান করেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের নেতৃত্বে বেগম খালেদাকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, গণস্বাস্থ্য বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শমসের মবিন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সালেহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।