DMCA.com Protection Status
title="৭

অসীম ক্ষমতাধর শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনঃ কারাগার থেকেই দিয়েছে খুনের নির্দেশ

104387_1কারাগারে বসে হাজারীবাগের ট্যানারি ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন সাত্তারকে খুন করিয়েছে বন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। প্রায় এক মাসের পরিকল্পনায় সে ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। কারাগারে বসেই ইমন তার সহযোগীদের সঙ্গে দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোনে হত্যাকাণ্ডের ছক আঁকে। বাইরে থাকা তার সহযোগীদের গুলি, অস্ত্র ও অর্থের জোগান দেয়।

 

 

ইমন ও তার সহযোগীদের মোবাইল ফোনের কথোপকথনের সূত্র ধরে সাত্তার খুনে ইমনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর ইমনের সহযোগী বুলু ও মাসুদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে ইমনের পরিকল্পনায় কিভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার বিস্তারিত খুলে বলে বুলু। আইনশৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য দিয়েছে।

১৪ ডিসেম্বর দুপুরে হাজারীবাগ তিন মাজার মসজিদের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে সাত্তারকে হত্যা করা হয়। সাত্তার রাজধানীর ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল।সূত্র জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির জের ধরে ইমন গ্রুপের সঙ্গে সাত্তারের দ্বন্দ্ব বাধে। ইমন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা সাত্তারকে সরিয়ে দেয়ার জন্য কারাবন্দি ইমনের কাছে সাহায্য চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক মাস ধরে এ বিষয়ে কারাগারের বাইরে থাকা সহযোগীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন ইমন।

কারাগারে বসেই হত্যাকাণ্ডের ছক আঁকেন। সাত্তারকে খুন করার জন্য ইমন তার সহযোগীদের কাছে অস্ত্র, গুলি ও টাকা সরবরাহ করে। কিলিং মিশনের পর র‌্যাব বা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে কিলারকে জামিন পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তাও দেয় ইমন। এমনকি কিলিং মিশন সফল করার পর ক্রসফায়ারে মারা পড়ার ভয় থাকলে নিজ থেকে পুলিশ বা র‌্যাবের হাতে ধরা দেয়ার পরামর্শ দেয় ধানমণ্ডির এ শীর্ষ সন্ত্রাসী।

জেলখানায় ভালো থাকা, খাওয়া ও মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলানোর নিশ্চয়তাও দেয় সে।ইমনের কথা অনুযায়ী তার দুই সহযোগী বুলু ও গনি বেশ কয়েকজন ভাড়াটে কিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ভাড়াটে কিলাররা দীর্ঘদিন ধরে সাত্তারের গতিবিধির ওপর নজর রাখে। কখন কোথায় সাত্তার নাস্তা খেতে যান, কখন বাড়ি থেকে বাইরে যান ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করে মোবাইল ফোনে ইমনকে জানায় তার সহযোগী বুলু।

কিন্তু সাত্তার সে সময়ে বুঝতে পেরেছিলেন তার জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে। এ কারণে তিনি বাড়ি থেকে বাইরে বের হওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দিনের পর দিন তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। আর এতে অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে পড়ে ইমনের সহযোগীরা।হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন আগে ইমন কারাগার থেকে কিলিং মিশনের সর্বশেষ নির্দেশনা দেন।

ওই কথোপকথন ছিল নিম্নরুপ-বুলু : ভাই, স্লামালেকুম।

ইমন : বল, কি খবর, ওই (সাত্তার) কি বাইর হইছে।

বুলু : না ভাই। কি করন যায় কন দেহি।

ইমন : চুপ থাক। একটা লোক ৫ দিন ঘরে থাকতে পারে কিন্তু ৬ দিনের দিন সে বাইর হইবই।

বুলু : অগোরে (ভাড়াটে কিলার) তো বাড়ির আশপাশে খাড়া কইরা রাখছি।

ইমন : মেশিন পাঠায়া দিছি। পাইছস।

বুলু : হ ভাই পাইছি। গুলি পাইছি ১৫টা।

ইমন : তাইলে কামডা সাইরা ফালাইয়া দে তাড়াতাড়ি।

এরপর ১৪ ডিসেম্বর সাত্তারকে খুন করে ইমনকে আনন্দের সংবাদ জানান কিলার বুলু।

এ সময়ের কথোপকথন ছিল-বুলু : ভাই,

ইমন : হু

বুলু : ফাইনাল, শেষ।

ইমন : ঠিক আছে।

বুলু : একদম পইড়া রইছে।

ইমন : চুপ কর,তুই যাইছ না।

খুনের পর গ্রেফতার হলেও কোনো ভয় নেই জানিয়ে ইমন বলে, চিন্তা করবা না। মাসুদরে দিয়া টেকাটুকা দিয়া আমি মামলা পানি পানি কইরা ফালাব। আকাব্বর সম্রাটরে (জনৈক যুবলীগ নেতা) দিয়া ফোন করামু। দেখবি কাম হইয়া গ্যাছে। আর ও-তো বিএনপির সন্ত্রাসী।রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-১ এ বন্দি ছিলেন।

সেখানে বসেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সম্প্রতি তাকে পার্ট-২ এ স্থানান্তর করা হয়েছে। কারাগারে বন্দি ইমন কিভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারছে- জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ এর জেলার আমজাদ হোসেন ডন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। তারা যখন আদালতে সাক্ষী দিতে যায় তখন কথা বলে থাকতে পারে। আবার তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও থাকে। তখনও কথা বলে থাকতে পারে।তবে শুধু ইমন নয়, আর শুধু হত্যাকাণ্ডই নয়, কারাগারে বসে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছে বন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।

আইনশৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কারাগারে বসে খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছে এমন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে রয়েছে- খন্দকার নাঈম আহমেদ টিটন, সোহেল ওরফে ফ্রিডম সোহেল, খোরশেদ আলম ওরফে রাসু, আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস, কামাল পাশা ওরফে পাশা, আরমান, মশিউর রহমান ওরফে কচি, ইমামুল হোসেন হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালসহ কয়েকজন। কারাগারে এরা আয়েশি জীবনযাপন করছে এমন তথ্যও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভাড়াটে কিলার ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধ বেড়েছে। কিন্তু এমন অপরাধীদের গ্রেফতারে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

তাছাড়া আসামি গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হলেও অল্প দিনেই আইনের ফাঁক গলে সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে। চলতি বছরেই ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে- যেগুলোর পেছনে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হাত ছিল।

এ সময় সবচেয়ে আলোচিত মিল্কী হত্যাকাণ্ডের অনেক আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত একমাত্র আসামি তারেক ওরফে কিলার তারেক র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। কিন্তু অন্য আসামিরা এখনও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ধানমণ্ডি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক শামীমের ওপর গুলিবর্ষণকারী ভাড়াটে খুনি জুয়েলকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়ে সে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে সে তেজতুরী বাজার এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের ভাড়াটে কিলারদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নতুন বছরে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।জানতে চাইলে সাত্তার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার এসআই জামসেদুল আলম যুগান্তরকে বলেন, এই খুনের সঙ্গে ইমনের সংশ্লিষ্টতা একেবারেই নিশ্চিত। ঘটনার পর গ্রেফতার বুলু ইমনের ডান হাত বলে পরিচিত। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল এমন বেশ কয়েকজনের তালিকা করা হয়েছে। তারা সবাই ইমনের সহযোগী।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!