সারা দেশের দৃষ্টি এখন গাজীপুরে। শনিবার খালেদা জিয়ার জনসভা এবং ছাত্রলীগের তা প্রতিহতের ঘোষণায় জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত দুই দলই অনড়। শেষ পর্যন্ত এই উত্তাপ রক্তক্ষয়ী কোন সংঘর্ষের দিকে গড়ায় তা নিয়ে চিন্তিত গাজীপুরবাসী। জেলাজুড়ে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। রাজনীতিতে এখন আলোচনা কেন্দ্রবিন্দু গাজীপুর।
মঙ্গলবার থেকে খালেদা জিয়ার জনসভাস্থল ছাত্রলীগ দখল করে রেখেছে। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন তারা কৌশলে এগুচ্ছেন। সরাসরি তারা কোনো সংঘর্ষ যাননি।
দুপুরের দিকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা- জয়দেবপুর রোডে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তবে মাঠের অদূরে চান্দনা চৌরাস্তার আশপাশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী সতর্ক অবস্থানে ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা না থাকায় তারা মাঠের দিকে অগ্রসর হননি।এদিকে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ জনসভা প্রতিহত করার ঘোষণায় এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে। তারা যেকোনো মূল্যে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার আগমনকে প্রতিহত করতে বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। বৃহস্পতিবারও বিএনপির কোনো নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জনসভা-স্থল ভাওয়াল কলেজ মাঠে ঢুকতেই পারেনি।
বিকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মিছিল করে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ, যুবদল নেতা বশির আহমেদ বাচ্চু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সরাফত হোসেন, সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
বিকালে সিটি মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নেতৃবৃন্দ জনসভাকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সহযোগিতা চান।
জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জানান, জনসভার জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো পুলিশি ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায়নি।
জবাবে বিএনপি নেতারা জানান, জনসভার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ বিএনপিকে লিখিত অনুমোদন দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, “বিএনপির পক্ষে মাঠ ব্যবহারের অনুমোদন থাকলেও পুলিশ জনসভার জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল মাঠে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সেখানে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। আর পুলিশ তা বসে বসে পাহাড়া দিচ্ছে।” তারা পুলিশের এ আচরণের তীব্র নিন্দা জানান।
বৃহস্পতিবার সকালে মাঠের ভেতর বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। মাঠের পূর্ব পাশে যেখানটি খালেদা জিয়ার জনসভার জন্য মঞ্চ তৈরির কথা ছিল সে স্থানটিতে ছাত্রলীগের তৈরি করা একটি ছামিয়ানার কাছে বসে পুলিশ তা পাহাড়া দিচ্ছে। বেলা ১২টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হীরা সরকার, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রকিব সরকার ও ভাওয়াল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ফাইজুর রহমান ও ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি বিশাল মিছিল ভাওয়াল কলেজ মাঠে প্রবেশ করে। তারা পুলিশের সামনেই লাঠি সোটা নিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে কয়েক দফা মহড়া দেয়। পরে কলেজের প্রধান ফটকের কাছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে চলতি বছরের শেষ রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গাজীপুর মহানগরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে আগামী ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) ২০ দলীয় জোট জনসভা আহ্বান করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনে জনসমর্থন আদায়ে দেশব্যাপী গণসংযোগের অংশ হিসেবে গাজীপুরে এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে।
অপর দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তারেক জিয়ার কটূক্তির প্রতিবাদে ইতোমধ্যে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার আগমন ও জনসভা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে একই দিন একই স্থানে সমাবেশ আহ্বান করেছে গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ।
তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তির জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা এবং দল থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে আল্টিমেটামসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে গাজীপুরে খালেদা জিয়া ও ওই জনসভা প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। ছাত্রলীগের এ ঘোষণাকে সমর্থন দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ পিপিএম জানান, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দু’পক্ষেরই আবেদন পেয়েছি। কাউকেই আমরা অনুমতি দিইনি। তবে পুলিশের অনুমতি ছাড়া যদি কেউ কোনো ধরনের সভা করার চেষ্টা করে তবে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে একইস্থানে শনিবার পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ আহ্বান ও রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টার ঘটনায় উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় জল কামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানের ফলে নগরীর মানুষ সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কা করছে। কলেজের আশপাশের মার্কেট ও বাসাবাড়িতে নারী-পুরুষ ও শিশুরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।