DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

রেশমা থেকে জিয়াদ : আবার আওয়ামী সরকারের আবেগী প্রতারণা

104869_1টানটান উত্তেজনা, নির্ঘুম রাত। সবারই প্রত্যাশা ৬০০ ফুট গভীর পাইপের নিচ থেকে বেরিয়ে আসবে ফুটফুটে সাড়ে ৩ বছর বয়সী জিয়াদ।

কয়েকটি টিভি চ্যানেলে নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান কর্মসূচি বাদ দিয়ে টানা লাইভ সম্প্রচার, ফেসবুক ফ্যান পেইজে পাঠকদের প্রার্থনার সংবাদ, জিয়াদ নিয়ে আবেগী সব মন ছুঁয়ে যাওয়া হরেক রকম সংবাদ শিরোনামে কাতর দর্শক, পাঠক। টিভির পর্দার দিকে তাকিয়ে ছোট ছোট বাচ্ছাদের বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে আঁচলে চোখের পানি মুছতে থাকেন মমতাময়ী মায়েরা। সবারই প্রত্যাশা, ৬০০ ফুট গভীরে পড়ে যাওয়া জিয়াদকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যাবে।

জিয়াদ ফিরে আসবে মৃত্যকূপ থেকে, হাসবে বাংলাদেশ- অন্য দশজন বাংলাদেশীর মত এমন প্রত্যাশা নিয়ে টিভির পর্দার সামনে বসে লেপটপ থেকে ফেসবুকে লগইন করতেই সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা বন্ধু আমেনা আফরীনের ম্যাসেজ, ‘আরিফ, এটা কি আরেকটা রেশমা নাটক? গাজীপুর, বকশী বাজারসহ দেশের চরম অস্থিতিশীল অবস্থা সামাল দিতে সরকারের আবেগী নাটক নয় তো? বন্ধুর প্রশ্নের রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর শাহজাহানপুর থেকে জিয়াদ উদ্ধারের চেষ্টা লাইভ টেলিকাস্ট করা একটি টিভি চ্যানেলে (টিভি চ্যানেলটির স্ক্রিনের বাম পাশে লাইভ দেখাচ্ছিল শাহজাহানপুর, ডান পাশে চলছিল সংবাদ পর্যালোচনা ভিত্তিক অনুষ্ঠান) একজন সম্মানিত সম্পাদক বিএনপির সমালোচনায় ব্যস্ত। উক্ত সম্পাদকের মায়াকান্নার সারমর্ম হচ্ছে, সারাদেশ যখন জিয়াদ নিয়ে চিন্তিত, ব্যথিত, মর্মাহত সেখানে বিএনপি কেন গাজীপুরে হরতাল দিল? কেন দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিল?


কট্টর আওয়ামী পন্থি উল্টাপাল্টা অতি আবেগী কান্ডকারখানা দেখে ফেসবুকে কৌশলী স্ট্যাটাস দিলাম ‘প্রিয় রেশমা, কেমন আছো?’ ভেবেছিলাম ফ্রেন্ড লিস্টের ৪৯৯২ জন বন্ধুর বেশীরভাগই বকাঝকা করবে- এমন শোকের আবেগের সময় ব্যাঙ্গাত্মক স্ট্যাটাস দেওয়ায়। কিন্তু, না। উল্টো দেখলাম, স্ট্যাটাসের মন্তব্যে অনেকেই জিয়াদ ইস্যুটিকে সরকারের নাটক হিসেবে দেখছে। এরকম চরম উৎকণ্ঠা আরো কয়েক ঘন্টা চলার পর রাত ২টার দিকে জানতে পারলাম, অত্যাধুনিক ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ৬০০ ফুট নিচে পাইপের ভেতর টিকটিকি, ব্যাঙ থাকলেও নেই জিয়াদের অস্তিত্ব! পাল্টে যেতে শুরু করে লাইভ টেলিকাস্ট করা মিডিয়াগুলোর উপস্থাপকদের কথার সুর।বন্ধু আমেনা আফরীনের সন্দেহ, টিভি চ্যানেলে সম্পাদকের জিয়াদকে পুঁজি করে বিএনপির কঠোর সমালোচনার মাঝেই লক্ষ করলাম- প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে একটি আবেগী নিউজ। নিউজের শিরোনাম ‘আমি রশি ঠিক মত ধরতে পারছি না’ – শিশু জিয়াদ। ৬০০ ফুট নিচে আটকে পড়া জিয়াদের এমন আকুতি মনে আবেগের ঢেউয়ের বদলে প্রশ্নের ঢেউ উঠল। সাড়ে ৩ থেকে ৪ বছরের একটি শিশুর কথা ৬০০ ফুট উপরে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে! একটি শিশু ৬০০ ফুট নিচে পড়লে অন্ধকারে যেখানে হাউমাউ করে কান্নার কথা সেখানে কিনা শিশুটি কান্না না করে রশি ধরতে পারছে না তা জানাচ্ছে!!

লাইভ টেলিকাস্ট করা একজন উপস্থাপককে বলতে শুনলাম, জিয়াদের ব্যাপারটি যাই হউক এরপরও এই ঘটনা থেকে অনেক কিছু প্রাপ্তি হয়েছে। এই প্রথম ওয়াসার অত্যাধুনিক ক্যামেরার একটি সফল পরীক্ষা হয়েছে। ‘যা ভবিষ্যতে বেশ কাজে দিবে’ টাইপের আগডুম বাগডুম গাঁজাখুরি কথাবার্তা।

রানাপ্লাজার ধ্বংসস্তুপ থেকে ১৭ দিন পর রেশমা উদ্ধার, উদ্ধারের পর রেশমাকে নিয়ে যে লুকোচুরি করেছে এবং এখনো করে আসছে আওয়ামী লীগ সরকার তাতে দেশের বেশীরভাগ মানুষের অভিমত হচ্ছে, রেশমা উদ্ধার কাহিনীটি ছিল স্রেফ একটি নাটক। রানাপ্লাজার দেড় হাজারের বেশী মানুষের মৃত্যুশোকে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা আমজনতাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে রেশমা উদ্ধারের আবেগী নাটকের সফল মঞ্চায়ন করেছিল সরকার, এমনটাই বিশ্বাস করে সাধারণ জনগণ।

যারা রেশমা উদ্ধারকে ‘নাটক’ বলে বিশ্বাস করে তাদের অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, রেশমার মত কিছু ঘটবে না এবার। কিন্তু, না। জিয়াদের ঘটনার আবেগী সংবাদ পরিবেশন করে জনগণের আবেগ নিয়ে আবারো প্রতারণা করল আওয়ামী লীগ সরকার। জিয়াদের ঘটনায় সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে যে খেলা খেলেছে ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের আওয়ামী লীগ সরকার তাতে কি সত্যি লাভবান হয়েছে আওয়াম লীগ? মোটেই না। কারণ, আওয়ামী লীগ সাময়িকভাবে রাজনৈতিক চরমাবস্থার মধ্যে জনগণের মাঝে আবেগের ঢেউ তুলতে পারলেও নিজেদের চরম হাস্যকর করে তুলেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!