গাজীপুরের পর এবার ঢাকায়ও বিএনপির সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আগামী ৩ ও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের জন্য দলটি পুলিশের অনুমতি চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাতে ‘না’ জবাব-ই মিলবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ঢাকায়ও সমাবেশের অনুমতি না পেলে মাঝখানে বিরতি দিয়ে সারাদেশে দুই দফায় কয়েকদিনের হরতাল দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। তবে বাধা ডিঙ্গিয়ে সমাবেশ করতে না পারার পাশাপাশি হরতালেও পুলিশ এবং সরকারী দলের ক্যাডারদের আক্রমনের শিকারের ঘটনায় চিন্তিত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। হরতালের পাশাপাশি আর কী কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে, এখন সেই চিন্তা-ভাবনাও চলছে দলের ভেতরে।
জানা গেছে, বিএনপি কিংবা দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে আপাতত ঢাকা মহানগরসহ এর আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের বড় জমায়েত বা সমাবেশ করতে না দেয়ার একরকম নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের। গাজীপুরে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেয়া এবং এটিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য-মন্তব্যে এই ইঙ্গিত-ই স্পষ্ট।
গাজীপুরে যেভাবে ছাত্রলীগ দিয়ে বিএনপির সমাবেশ রোধ করা হয়েছে, এখন থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানেও এই ‘সফল কৌশল’ প্রয়োগ করা হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। গাজীপুরের মতো এবার ঢাকায়ও ৩ ও ৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ সমাবেশের ডাক দিতে পারে।
পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের কিছুদিন আগে থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন-ঢাকায় এমন কোনো সমাবেশের অনুমতি পায়নি বিএনপি। দশম সংসদ নির্বাচনের পর চলতি বছরের মাঝামাঝি ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জে প্রথম সমাবেশের অনুমতি পান খালেদা জিয়া।
দেশের কয়েকটি জেলাসহ কিছুদিন আগে ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে সমাবেশ করতে পারলেও এখনও ঢাকায় তাকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি।আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘সমাবেশের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিএনপিকে কোনো সুযোগ দেয়া হবে না।
দশম সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূতির দিন ৫ জানুয়ারি রাজধানীর রাজপথ দখলে নেয়ার প্রস্তুতি রেখেছে বিএনপি। ৫ জানুয়ারি ও এর পরবর্তী কর্মসূচির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ৩ জানুয়ারিও রাজধানীতে সমাবেশের জন্য বিএনপি অনুমতি চেয়েছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের দাবি, গুম-খুন-অপহরণ ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে এবং বিদ্যুত্-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করার দাবিতে ৩ জানুয়ারি বড় জমায়েত করতে চায় দলটি। ৩ ও ৫ জানুয়ারি সমাবেশের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কিংবা মতিঝিলের শাপলা চত্বরের যে কোনো একটি স্থানে অনুমতি চেয়ে গত সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে লিখিত আবেদন করেছে বিএনপি।
ডিএমপি’র পক্ষ থেকে গতকাল সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, বিএনপির আবেদন তারা পেয়েছেন। তবে অনুমতি দেয়া না দেয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার জনগণকে জমায়েত হতে দেখলেই ভয় পায়। ঢাকায়ও সমাবেশের অনুমতি না দিলে জনগণই এর জবাব দেবে।’
বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দিলেও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় বড় জমায়েত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দশম সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনটিকে ‘গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা দিবস’ আখ্যা দিয়ে ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে দলটি। এছাড়া ১২ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষেও কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। বিএনপি জানুয়ারি জুড়ে মাঠ নিজেদের দখলে রাখার কথা বললেও, আওয়ামী লীগের নেতারা এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন- এসময় ঢাকাসহ সারাদেশের মাঠ তাদের দখলে থাকবে।
এদিকে, ২৭ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গাজীপুর জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করলেও সেটিকে উপেক্ষা করতে না পারায় এবং ওইদিন হরতালে মাঠে না নামার কারণে দলের স্থানীয় নেতাদের ওপর ক্ষেপেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর আগে বর্তমান সরকারের আমলে ডাকা দলের প্রথম হরতালেও নেতাকর্মীদের রাস্তায় না নামার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন তিনি।
সামনে ৩ ও ৫ জানুয়ারি সমাবেশের অনুমতি না পেলে হরতাল দিলেও তাতে যাতে নেতাকর্মীরা মাঠে থাকেন— এরকম পরিকল্পনা করতে চান তিনি। যার কারণে অল্পদিনের মধ্যে বড় কর্মসূচিতে চলে যাওয়াসহ একাধিক বিকল্প নিয়ে বিএনপি প্রধান ভাবছেন বলে জানা গেছে।তবে অতিতের মতো আন্দোলন পরিকল্পনা যাতে সরকারের কাছে ফাস না হয় তাই যথেস্ট গোপনীয়তার কাজ করছে বিএনপির নীতিনির্ধারক মহল।