নিখোঁজ এয়ার এশিয়ার কিউজেড৮৫০১ নম্বর ফ্লাইটের ৪০ জনেরও বেশি যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।একই সঙ্গে বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিকেলে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
নৌবাহিনীর মুখপাত্র মানাহান সিমোরাংকির জানান, নৌবাহিনীর রেডিওতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যুদ্ধজাহাজ বাংতোমো চল্লিশটি মৃতদেহের খোঁজ পেয়েছে এবং এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। তারা এখন অনেক ব্যস্ত রয়েছে।
তবে এয়ার এশিয়ার বিমানটির কাঠামো এখনো উদ্ধারকারীরা খুঁজে পাননি। ওই বিমানের আরোহীদের কারো বেঁচে থাকার আশাও তারা আর করছেন না।
এয়ার এশিয়া কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে খোঁজ পাওয়া ধ্বংসাবশেষ ও মৃতদেহগুলো এয়ার এশিয়ার ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ এর।
এয়ার এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টনি ফার্নান্সেস বলেন, তিনি ‘বিধ্বস্ত’ এবং নিহতদের পরিবারকে তিনি প্রাধান্য দিচ্ছেন।
এর আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার এজেন্সি বারসারনাসের প্রধান বামবাং সোয়িলিসতায়ও জানিয়েছিলেন, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার ৫০ মিনিটে বিমানবাহিনীর হারকিউলিস বিমান বিমানের মতো দেখতে একটি বস্তুর ছায়া দেখতে পেয়েছে। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে বিমানের এক যাত্রীর মৃতদেহ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে।
বামবাং সোয়িলিসতায়ওর সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সাগরে ভাসমান দেহগুলোর ছবি টেলিভিশনে দেখানো হলে রবিবার বিমানটি যেখান থেকে ছেড়ে গিয়েছিল সেই সুরাবায়া এলকার একটি রেসকিউ সেন্টারে অবস্থানরত উপস্থিত স্বজনরা ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কয়েকজন সংজ্ঞাও হারান।
তাদের সান্ত্বনা দিয়ে সুরাবায়ার মেয়র ত্রি রিশমাহারিনি বলেন, “আমাদের শক্ত হতে হবে। তারা আর এখন আমাদের নয়। তারা স্রষ্টার কাছে ফিরে গেছেন।”
বামবাং সোয়িলিসতায়ও জানান, জাভা সাগরের বোর্নিও দ্বীপের সেন্ট্রাল কালিমান্তানের পাংকালান শহরের ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিম এলাকায় থোঁজ চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার বিমান বাহিনী, যুদ্ধজাহাজ বোংটোমো সমুদ্রে একটি ভাসমান বস্তু দেখতে পেয়েছে, যেটিকে আমরা বিমানের দরজা বলে ধারণা করছি।বাসারনাসের একটি হেলিকপ্টার সেখানে গিয়ে নিশ্চিত হয়েছে এটি বিমানের দরজা এবং হেলিকপ্টারটি বাংটামো জাহাজকে এটি অপসারণে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন,খোঁজ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। সমস্ত জিনিস ও যাত্রীদের মৃতদেহ উদ্ধার করা তাদের দায়িত্ব।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, যেখানে মৃতদেহ পাওয়া গেছে জায়গাটি ২৫ থেরেক ৩০ মিটার গভীর। সেখানে ডুবুরিদের পাঠানো হয়েছে। সমুদ্রের গভীর অনুসন্ধান চালানোর প্রয়োজন হলে সেখানে সাবমেরিন পাঠানো হবে।
তল্লাশি অভিযানে কমপক্ষে ৩০টি জাহাজ, ১৫টি বিমান এবং সাতটি হেলিকপ্টার অংশ অংশ নিচ্ছে। জাভা সাগর এবং এর আশপাশের স্থলগুলোকে ১৩টি জোনে ভাগ করে অভিযান চালাচ্ছে তল্লাশি দলগুলো।
ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়ার জুয়ানডা বিমানবন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে এয়ারএশিয়ার ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ এর সঙ্গে জাকার্তা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জাভা সাগরের ওপরে থাকা উড়োজাহাজটির পাইলট তার মিনিট পাঁচেক আগেই মেঘের কথা বলে ৩২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ৩৮ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ার অনুমতি চান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এয়ারবাস ৩২০-২০০ মডেলের ওই উড়োজাহাজে ১৫৫ জন যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ১৬২ জন আরোহী ছিলেন।
উড়োজাহাজটি উধাও হয়ে যাওয়ার পরপরই সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া অনুসন্ধান শুরু করে। অন্ধকার নেমে আসায় রোববার রাতে অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলেও সোমবার সকাল থেকে আবার শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি।ওই দিনও সন্ধ্যার পর অভিযান স্থগিত করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে তৃতীয় দিনের মত সুমাত্রা এবং বোর্নিও দ্বীপের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তল্লাশি শুরু করা হয়। কিছুক্ষন পরেই বিমানের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই সময় এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ধ্বংসাবশেষগুলো ৯৫ শতাংশই কিউজেড৮৫০১ নম্বর ফ্লাইটের মতো । এরপর দুপুরের দিকে ছয়টি লাশের সন্ধান মেলে।পরে আশেপাশ থেকে আরও ৩৪ যা্ত্রীর লাশের সন্ধান মেলে।
সরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম জানায়, মৃতদেহগুলি ধ্বংসাবশেষের পাশেই ভাসছিল।