আসছে ৫ জানুয়ারি। এদিন বিশ্বব্যাপী বিতর্কিত নির্বাচনের এক বছরপূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দিনটিকে তারা ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। অবশ্য বিএনপি দিনটির নাম দিয়েছে ‘কালো দিবস’।
সে যাই-হোক, এদিন নানা বিতর্ক, সাফল্য-ব্যর্থতা, সম্ভাবনা ও কথিত দেশ সেবার নামে আগামীর প্রেরণা নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পূর্ণ করবে মহাজোট সরকার।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই এক বছরকে সাফল্যের বছর বলে দাবি করা হচ্ছে। অপর দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দিনটিকে কালো দিবস, গণতন্ত্র হত্যা দিবস নামে বিশেষায়িত করা হচ্ছে। তবে এটি সত্য যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত এক বছরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও হত্যা, খুন, ধর্ষণ, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন চলেছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। সময়ে অসময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হয়েছে। কৌশলে বিএনপির কর্মসূচি প- করে দেয়া হয়েছে।বিগত এই এক বছরে বিভিন্ন রকমের বিতর্ক, দলীয় কোন্দল, জাতীয় চাপের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপের মোকাবেলা করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। এই চাপ মোকাবেলা করতে অনেক সময় কৌশলের আশ্রয়ও নিয়েছে দলটি। এর মধ্যে ‘হেডম কৌশল’ অন্যতম।
এদিকে বিগত এক বছরে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। দেশীয় বিনিয়োগও কিছুটা স্থবির। যেকোনো সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় এসব বিনিয়োগ থমকে আছে। এতে দেশের বেশ ক্ষতি হচ্ছে।
এর পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের বাড়াবাড়ি, ছাত্রলীগের বেপরোয়া রাজনীতি, জবর দখল, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস খোদ আওয়ামী লীগ সরকারকেই বিব্রত করেছে। এর মধ্যে আবার নিজ দলের সাবেক মন্ত্রী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্কিত বই লেখা, সাবেক এক মন্ত্রীর ধর্ম সম্পর্কিত বিব্রতকর সমালোচনা সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বেশ বেকায়দায় ছিল বিগত বছরটিতে। এত কিছুর পরও রাজনৈতিকভাবে তেমন চাপের মুখে পড়েনি আওয়ামী লীগ।
কিন্তু আসছে ৫ জানুয়ারি ‘এক তরফা’ নির্বাচনের দিনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিন সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে চায় বিএনপি। দিনটিকে ঘিরে বিএনপি এখন কর্মপরিকল্পনায় মহাব্যস্ত।
অনেকে মনে করছেন, এই দিনে বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন চমক দেখানো হতে পারে। তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি পালনের জন্য কোনো অনুমতি পায়নি বিএনপি।
তারপরও বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ সকল রাজনৈতিক কর্মকা-কে মোকাবিলা করতে অনেকটা দেশীয় স্টাইলে লুঙ্গি পরে মাঠে নেমে ‘হেডম দেখানোর’ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
মন্ত্রী মায়া ৫ জানুয়ারি লুঙ্গি পরে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘দেখা যাবে কার, কত হেডম। রাজপথ কাদের দখলে থাকে।’ শুধু তাই নয়, এদিন রাজধানীর ১৬টি পয়েন্টে সমাবেশ পালনের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শুধু মায়াই নন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, নিজ দলে বিতর্কিত প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতাও সেই দিন বিএনপিকে রাজপথে না নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
রাজপথে থাকলে বিএনপিকে জনগণই নাকি প্রতিরোধ করবে এমনটি ভাবছেন মায়ারা। তাদের মতে, বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগণ নাকি আওয়ামী লীগের সাথে আছে। তাই বিএনপির মত দল যদি ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তি দিনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায় তবে জনগণ বিএনপিকে দেখে নেবে।
রাজপথে থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার অধিকার প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আছে। তবে নিশ্চিতভাবে সেই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন নেতারা যেভাবে লুঙ্গি পরে হেডম বা ক্ষমতা দেখাতে চাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে না যে ৫ জানুয়ারির অভিজ্ঞতা সুখকর হবে।
তাছাড়া এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন বিএনপির বড় বড় নেতাদের নেড়ি কুত্তার মত পেটানো হবে।
বিএনপির জন্য ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি পালন যে কষ্টকর হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সারা বছর রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে থাকা জাতীয় পার্টি হঠাৎ করেই রাজধানীতে মহাসমাবেশ করলো। এর মধ্য দিয়ে সরকারের পাশাপাশি নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিল জাপা। তারাও যে বিএনপিকে প্রতিরোধ করবে সেটার জানান দিয়েই নাকি এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিলো।
এদিকে ৫ জানুয়ারির আগের দিন (৪ জানুয়ারি) ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ উপলক্ষে ৩ জানুয়ারি ছাত্রলীগ রাজধানীসহ সারা দেশে যে ব্যাপক শোডাউন করেছে তাতে বিএনপিকে একটু ভাবিয়ে তোলারই কথা। আর এই ভাবিয়ে তোলার জন্যই নাকি আওয়ামী লীগ এসব কৌশল করছে, এমনটি ভাবছেন অনেকে।
এরপর এখনো অনুমতি পায়নি বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে, অনুমতি পেলেও জুড়ে দেওয়া হবে নানা ধরনের শর্ত। এমনকি সেদিন সরকারি হরতালও হতে পারে। পথে পথে বিএনপির কর্মীদের বাধা দেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কারণ, এর আগে এমন নজির দেখা গেছে।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে সরকার ও আওয়ামী লীগের হেডমের সম্মুখীন হতেই হবে। আবার হেডম দেখাতে গিয়ে যদি মায়ারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন সেক্ষেত্রেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ হেডমেরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। হেচকা টানে লুঙ্গি খুলে দেওয়া গণতান্ত্রিক দেশে নতুন নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে।
তাই বিএনপি কিভাবে মায়াদের হেডমের মোকাবিলা করবে এবং কিভাবে হেডমের অভিশাপ থেকে রক্ষা পাবে নাকি আবার বিএনপি পাল্টা হেডম দেখাবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।