প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখেই একটি নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে। এমনকি সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ক ধারা অনুযায়ী নির্বাচন না করে খ ধারা অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করলে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কোনো সমস্যা হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দিনের দেয়া এমন প্রস্তাবকে উড়িয়ে দিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন আহমেদ ৫ জানুয়ারির আগে কোথায় ছিলেন। তখন তিনি বলেননি কেন? তিনি এখন নিবন্ধ লিখছেন কেন? এই নিবন্ধ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৫ জানুয়ারির আগেই লিখতেই পারতেন। তিনি যে কথা বলেছেন, সেই অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এই সরকারের শেষ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে।
তারা মনে করেন, আমরাও নির্বাচন চাই। তবে সে নির্বাচনের জন্য আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন কোনো পিকনিক বা বনভোজন নয়, ইচ্ছে করলেই করা যায়। আর নির্বাচনে দাওয়াত দিয়েও আনার প্রয়োজন নেই।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক অনুষ্ঠানে বলেন, খালেদা জিয়া নাকি এখন শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যেতে পারেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ এমন মত দিয়েছেন। এই বুদ্ধিজীবী কেন খালেদা জিয়াকে ৫ জানুয়ারির আগে এ প্রস্তাব ও পরামর্শ দেননি। আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। ওই নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক দল হয়ে থাকলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তা না হলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না। আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে, এর কোন বিকল্প নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চাইলে সে নির্বাচনও বয়কট করতে পারেন। তাহলে এ দলের (বিএনপি) কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, নির্বাচন বর্তমান সরকারও চায়। তিনি (খালেদা) বলতে পারেন নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করে নির্বাচন করা হোক। সে বিষয়েও আমাদের কোন আপত্তি নেই। উনার (খালেদা) পক্ষে উনাদের বুদ্ধিজীবী এমাজউদ্দিন সাহেব বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করতে বাধা নেই। তাহলে তো সবই মিটেই গেল। এখন প্রশ্ন হলো নির্বাচনটি কখন হবে? সে বিষয়টি সরকারের উপর ছেড়ে দেন। অন্যথায় আধুনিক উন্নয়নশীল দেশে অবরোধ দিয়ে উন্নয়নের বাধা সৃষ্টি করে কোন লাভ নেই।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচন কোনো পিকনিক বা বনভোজন নয়, যে তাদের দাওয়াত দিয়ে আনতে হবে? নির্বাচন যখন খুশি তখন দেয়া যায় না। আওয়ামী লীগ কাউকে কোনো বাধা দেয়নি। বিএনপি স্বেচ্ছায় নির্বাচন বয়কট করেছে। এখন তাদের বুদ্ধিজীবীরা নিবন্ধ লিখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করা যেতে পারে।
সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিনের সঙ্গে একমত পোষণ করে কামরুল বলেন, তিনি যা বলেছেন তাতে আমরা একমত। তবে এই নির্বাচনের জন্য আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। সেই নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। আমরা আশা করি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেখেই নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে এবং তার অধীনেই নির্বাচন হতে পারে। তাই সংবিধানের ধারা অব্যাহত রেখে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা সম্ভব। সরকার যদি একগুঁয়েমি করে একতরফা নির্বাচন করে তাহলে দেশের পতাকা থাকবে কিন্তু স্বাধীনতা থাকবে না। আপনারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে বলছেন, নির্বাচন পেছানো যাবে না। কিন্তু সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ক ধারা অনুযায়ী নির্বাচন না করে খ ধারা অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করলে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কোনো সমস্যা হবে না। প্রধানমন্ত্রী সরে গিয়ে রাষ্ট্রপতি অথবা স্পিকারকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার প্রধান করলে আমরা বিরোধীদলীয় নেতাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুপারিশ করবো।