DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

রিয়াজ রহমানকে গুলি করার ভিডিও ফুটেজ উদ্ধারঃ হামলাকারীদের সনাক্তের চেষ্টা চলছে

rahmanতিনটি মোটর সাইকেলে ৮ যুবক সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে বহনকারী প্রাইভেট কার অনুসরণ করছিল। গুলশান-২-এর ৫৪ নম্বর সড়কের কাছে এসে মোটর সাইকেল দিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে। একজন যুবক গাড়ির বাম পাশের দরজার জানালার দিকে মাথা নিচু করে কী যেন বলেন।

 

দরজা খুলে রিয়াজ রহমান বের হতেই তিন যুবকের সঙ্গে রিয়াজ রহমানের মৃদু ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে এক যুবক রিয়াজ রহমানের শরীরের কাছাকাছি স্থান থেকে গুলি করে। রিয়াজ রহমান হাঁটু ভাঁজ করে পালাতে থাকেন।

তখন আরেক যুবক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর তারা মোটর সাইকেলে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। গুলশানের ৫৪ নম্বর সড়কে একটি বহুতল ভবনের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে এই দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা।

সিসি ক্যামেরার সময় দেয়া রয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৮-৩৫ মিনিট। তবে ভিডিও ফুটেজে এই দৃশ্য ঝাপসা। ঘটনাস্থলে আলোর-স্বল্পতার কারণে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের দৃশ্য অস্পষ্ট হয়েছে। সিসি ক্যামেরা থেকে ঘটনাস্থল অন্তত ১৮ ফুট দূরে। গুলশানের ৫৪ নম্বর সড়কে ‘ডরেন টাওয়ারে’র দুইটি সিসি ক্যামেরা থেকে দুইটি ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে একটি ফুটেজ ১০ সেকেন্ড ও অপরটি ৪৫ সেকেন্ড। ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে তিন মোটর সাইকেল আরোহীর ঘটনাস্থল ত্যাগ করার দৃশ্য ধরা পড়েছে। ৪৫ সেকেন্ড ভিডিও ফুটেজে রিয়াজ রহমানকে গুলি করা ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার দৃশ্য রয়েছে।

তবে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের পাশে ‘বাটা সেন্টারে’ একটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। বুধবার পুলিশ কর্মকর্তারা বাটা সেন্টার থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেননি। কারিগরি জটিলতার কারণে ঐ সময়ের ভিডিও ফুটেজ হস্তান্তর করতে পারেনি বাটা সেন্টার কর্তৃপক্ষ। সিসি ক্যামেরার এ দৃশ্য পর্যালোচনা করে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনটি মোটর সাইকেলে ৮ জন যুবক ছিল। এদের বয়স ২৫ বছর থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত। ভিডিও ফুটেজে ঐ যুবকদের মুখ অস্পষ্ট। এক পাশ থেকে ভিডিও ফুটেজ হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে না।

 

একজন যুবক রিয়াজ রহমানের গাড়ির দরজার কাছে মাথা নিচু করে কথা বলে। কি কথা হয়েছিল- এ প্রসঙ্গে ঐ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ঐ যুবক বলে, ‘লিডার দরজা খোলেন’। রিয়াজ রহমানের ওপর গুলির ঘটনায় বুধবার বিকালে পুলিশের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর ২২। মামলায় ভাংচুর, রিয়াজ রহমানকে গুলি ও তার গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করা হয়েছে।

 

পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নূরুল আলম জানান, রিয়াজ রহমানের ব্যবহূত গাড়িটি শেরেবাংলা নগরে গাড়ির ডাম্পিং স্টেশনে রাখা হয়েছে। বুধবার দুপুরে সিআইডি’র একটি টিম ঐ গাড়ি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। গাড়িতে কি ধরনের হামলা হয়েছে তা সিআইডি’র তদন্ত রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে। পুলিশ রিয়াজ রহমানের গাড়ি চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তবে গাড়ি চালককে পুলিশের কাছে এখনও দেয়া হয়নি।

 

এ ঘটনা তদন্তে রিয়াজ রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি চিকিত্সাধীন রয়েছেন বলে সুস্থ হওয়ার পর জিজ্ঞাসা করা হবে। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার লুত্ফুল কবীর বলেন, মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা মামলা দায়ের না করে সময়ক্ষেপণ করে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। রিয়াজ রহমানের শারীরিক অবস্থা ইউনাইটেড হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল অপারেশন বিভাগের পরিচালক দবির উদ্দিন আহমেদ বুধবার দুপুরে বলেন, রিয়াজ রহমানকে লোকাল অ্যানেসথেশিয়া দিয়ে তার পা ও কোমরের চারটি ক্ষত ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আপাতত আশঙ্কামুক্ত।

 

তার চিকিত্সায় ইউনাইটেড হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের অধ্যাপক আমিনুলের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ লে.জে. (অব) একেএম জাফরুল্লাহ সিদ্দিক, নিউরোমেডিসিনের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল ইসলাম, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মো. ইকবাল হোসেন ও অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ। রিয়াজ রহমানের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে ডা. দবিরউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তার কোমরের বাঁ দিকে পেছনে দুটি ও বাম হাঁটুর নিচের দিকে দুটি ক্ষত রয়েছে।

 

গুলি ঢোকার প্রতিটি স্থানে দেড় সেন্টিমিটার গভীর ক্ষত হয়েছে এবং সেখানটা পুড়ে কালো হয়ে গেছে। আর গুলি বেরোনোর জায়গায় দুই সেন্টিমিটার গভীর ক্ষত হয়েছে। সিটি স্ক্যান ও এমআরআই প্রতিবেদনে কোনো ধাতব (মেটালিক) বস্তু দেখা যায়নি জানিয়ে ঐ চিকিত্সক বলেন, তার নরম ও স্নায়ু পেশীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিয়াজ রহমানের বাম পায়ের গোড়ালি ফোলা ও ফুট ড্রপ দেখা গেছে। তার বাম পায়ের অনুভূতি কম, তিনি পা নাড়াচাড়া করতে পারছেন না।

 

রিয়াজ রহমানের শরীরে গুলি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে শরীরে আগমন-নির্গমন ক্ষত রয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতালে স্ত্রী নার্গিস রহমান, মেয়ে আমেনা রহমান ও ছোটভাই ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এম ওমর রহমান রিয়াজ রহমানের পাশে রয়েছেন।

 

রিয়াজ রহমানকে দেখতে রাজনীতিবিদ, সাবেক কূটনীতিক, গণমান্য ব্যক্তিবর্গ হাসপাতালে যান। তাদের মধ্যে ব্র্যাকের স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এম সাইদুজ্জামান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক আহমেদ চৌধুরী, ফারুক সোবহান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জমির, সিপিডি’র রেহমান সোবহান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী ও এসএম রাশেদ আহমেদ রয়েছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!