বিএনপির অব্যাহত অবরোধ হরতাল আর সরকারের কঠোর হস্তে দমনের ঘোষণার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ সরগরম হয়ে উঠলো কূটনীতিক পাড়া।
একই সঙ্গে বিএনপি ও সরকারের সঙ্গে কূটনীতিকদের আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের বাসায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি ও বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের বৈঠক অপরদিকে একই সময় ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের বাসায় রাজনীতিকদের ‘নৈশভোজ’ অনুষ্ঠিত হলো।
তবে কোনো পক্ষই এই যুগপৎ বৈঠকের ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। মঈন খানের বাসার বৈঠকে শুধু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে- এটুকু জানা গেছে।
তবে কেউ স্বীকার করুক আর না করুক দেশের এই নাজুক পরিস্থিতিতে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে তার ইঙ্গিত সুস্পষ্ট।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকেই বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের গুলশানের বাসায় জড়ো হতে থাকেন কূটনীতিকরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন- কানাডা, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবাসিক প্রতিনিধিরাসহ বেশ কয়েকজন কূটনীতিক। আর বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, এয়ার কমোডর (অব.) শফিউর রহমান, রুহুল কুদ্দস তালুকদার দুলু। আরো কেউ ছিলেন কি না তা জানা যায়নি। এই ক’জনকেই বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে।
অপর দিকে একই সময় ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের গুলশানের বাসায় জড়ো হয়েছিলেন মন্ত্রী, রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
তবে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসায় তাদের নৈশভোজের নিমন্ত্রণ ছিল।
সেই নৈশভোজ শেষে বেরিয়ে যেতে যাদের দেখা গেছে তারা হলেন- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যামেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের, ত্রিশালের এমপিসহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানের নিজ কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ এর কর্মসূচি পালনে সরকার বাধা দেয়ায় সেদিনই অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে গুলি করে ও পুড়িয়ে মারার চেষ্টার ঘটনায় বৃহস্পতিবার হরতাল পালন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সারা দেশে জ্বালাওপোড়াও অব্যাহত রয়েছে। গত বুধবার রংপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমায় ৪ জন নিহত হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকালই গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। রিয়াজ রহমানকে গুলি করার ঘটনায় উদ্বেগ ও গাড়িতে বোমা মেরে মানুষ হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন তারা।একই সঙ্গে শান্তি ফিরিয়ে আনতে শিগগির সংলাপেরও তাগিদ দেন তারা। একই দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবাসিক প্রতিনিধিরা। তারাও উদ্বেগ জানিয়ে সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন।