দেশে আর কোনো অশুভ শক্তির উত্থান হতে দেয়া হবে না জানিয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘এবার আর কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’
শুক্রবার দুপুরে রংপুরের মিঠাপুকুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে সন্ত্রাস ও নাশকতা রোধে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
আইজিপি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে, তার খেসারত জনগণ দিবে না। বিএনপি-জামায়াতকেই এর খেসারত দিতে হবে। এদেশে আমরা আর কোনো অশুভ শক্তির উত্থান হতে দেব না।’
এ কে এম শহীদুল হক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের দাবি তুলে যারা এভাবে হরতাল অবরোধের নামে নাশকতা সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করছে, তারা আসলে কী চায়? দেশে তো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে। যারা নির্বাচন চায়নি তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে এরকম সন্ত্রাস করেছে।’
এসময় আইজি জেলার মিঠাপুকুরের বাতাসন গ্রামে যাত্রীবাহি বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
টেলিভিশন মিডিয়াতে রাতের বেলা যারা টক-শো করেন তারা সংবিধান জানেন না- এমন দাবি করে নতুন আইজিপি বলেন, ‘সংবিধানের কোথাও আন্দোলনের নামে হরতাল-অবরোধের মতো নাশকতা ও সন্ত্রাসমূলক কার্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ নেই। হরতাল-অবরোধ সংবিধান পরিপন্থি। আমরা জননিরাপত্তার স্বার্থে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় কাউকেই সমাবেশ করার অনুমতি দেই নি। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য থেকে জেনেছি ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বড় ধরণের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ছিলো। অথচ টকশো-ওয়ালা ব্যাটারা বলেন সমাবেশ করতে দিলে কী হতো। ওনারা তো সংবিধান জানে না, আইন জানে না।’
এসময় মিডিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘টক-শো কারা করেন আর দেখেন তা আপনারাই ভালো জানেন।’
শহীদুল হক আবারো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘সারাদেশের মধ্যে মিঠাপুকুর, গোবিন্দগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সন্ত্রাস ও নাশকতা বেড়ে গেছে। এগুলো কারা করছে? যারা স্বাধীনতা চায়নি। যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে। সংবিধানের বিরোধিতা করে। যারা এখনো পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে। আমাদের এসব মৌলবাদী সংগঠনের দোসর হওয়া যাবে না। এদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা পুলিশ প্রশাসন আপনাদের পাশে থাকব।’
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি বক্তব্যে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা যারা দেখতে চায় না, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চায় না, মানুষ দু’বেলা খেয়ে পড়ে ভালো থাকুক এসব চায় না, তারা খুনি। এদেশে তাদের প্রয়োজন নেই। তাদের দমনে, ষড়যন্ত্র দমনে যা যা করা দরকার সবই করা হবে।’
বেনজীর আরো বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা খুবই কম। এদের নিশ্চিহ্ন করা কোনো ব্যাপার নয়। আমরা এই অপশক্তিকে ২০১৩ সালে রুখে দিয়েছি। এবারো রুখে দিব ইনশাআল্লাহ।’
হরতাল অবরোধ কর্মসূচিকে অন্যায় যুদ্ধ অখ্যায়িত করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অন্যায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ যুদ্ধে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যুদ্ধের ময়দানে জীবন নিয়ে আসা যাবে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ অন্যায় যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের আমরা পরাজিত করে বিজয়ী হব।’
জেলা প্রশাসক ফরিদ আহম্মদের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, রংপুর রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি হুমায়ূন কবির, র্যাব-১৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল ইসমত হায়াৎ, রংপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনায় ছিলেন পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক পিপিএম।
এছাড়া অন্যদের মধ্যে মতবিনিময়ে অংশ নেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, মহানগর সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তিম মণ্ডল, মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার শহিদার রহমান, জায়গীর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ তোজাম্মেল হোসেন, মিঠাপুকুর ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে র্যাবের একটি টেলিকপ্টারে শঠিবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে পুলিশের আইজি এ কেএম শহীদুল হক ও র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
সেখান থেকে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটান। এসময় বাসে বোমা হামলায় নিহত রহিম বাদশা ও মা রহিমা বেগমের পক্ষে রহিম বাদশার স্ত্রী নিলুফা বেগমকে ৫০ হাজার টাকা এবং অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রমেকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আনোয়ারের স্ত্রী হাসি বেগমকে ১০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ চেক তুলে দেন।
মতবিনিময় সভা শেষে আইজি ও র্যাব মহাপরিচালক বাসে বোমা হামলার ঘটনাস্থল বাতাসন গ্রাম পরিদর্শনে যান।